রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৪

আজ গণতন্ত্রের কুলখানী


আজ সরকার নতুন করে শপথ নিবে। এর মাধ্যমে গঠিত হবে একটি বিতর্কিত নির্বাচনের নৈতিকভাবে অবৈধ একটি সরকার। যে সরকারকে বিদেশী কোন রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত শুভেচ্ছা জানায়নি। একতরফা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠা নিয়ে তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচন বর্জন করে প্রধান বিরোধীদলসহ আঠারদলীয় জোট। মাত্র ১২টি নিবন্ধিত দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ৫ জানুয়ারি ব্যাপক সহিংসতা হয়। শুধুমাত্র ৫ জানুয়ারিতে ২৫ জন নিহত হয়। যা বিগত কোন নির্বাচনে হয়নি। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সাল ইতিহাসের পাতায়
লেখা থাকবে কলঙ্কিত একটি দিন হিসেবে। যেমনিভাবে লেখা ছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। এ সরকার হবে আর্ন্তজাতিকভাবে একঘরে সরকার। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পিছিয়ে যাবে বহুদূরে। এর সরকারের ভবিষ্য‍ কি জানি না। নতুন সরকার কতদিন টিকবে? কী হবে ১২ জানুয়ারির পর? কীভাবে কাটবে ২০১৪ সাল? হানাহানি-মারামারি কি হতেই থাকবে? কতদিন টিকবে এ সরকার এ নিয়ে এখন সর্বমহলে প্রশ্ন। নতুন সরকার শপথ নেয়ার পর সহিংসতা কমবে না বাড়বে এ নিয়ে জনগণ উদ্বেগ উকণ্ঠায় দিনযাপন করছে।
আদালত যেদিন তত্ত্ববধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে রায় দেয় সেদিনই গণতন্ত্রের বিরূদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী যেদিন সংসদে পাশ হয় সেদিন গণতন্তকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের ‍বিচারকার্য চলে আদালতে। পরিশেষে সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশের ষোল কোটি মানুষের মতকে উপেক্ষা করে গত ২৫ নভেম্বর ২০১৩ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আর সেদিনই গণতন্তের ফাঁসির রায় দেয়া হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর ছিল দশম জাতীয় সংসদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন। আর সেদিনই গণতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। ৫ জানুয়ারি ছিল দশম জাতীয় সংসদের ভোট গ্রহণের দিন। আর সেদিনই গণতন্ত্রের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সারাবিশ্বের মানুষ কিভাবে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ফাঁসি দিয়েছে তা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেছে। ৯ জানুয়ারি তাড়াহুড়ো করে বিতর্কিত সংসদ সদস্যদেরকে শপথ পড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। আর আজ ১২ জানুয়ারি মন্ত্রী পরিষদের শপথ। এই দিনে হচ্ছে গণতন্ত্রের কুলখানী। এই কুলখানীতেও সবায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। যারা গণতন্ত্রের ফাঁসির জন্য দায়ী তারাই শুধু এতে অংশগ্রহণ করবে। অন্যরা বসে বসে তামাশা দেখবে। তবে নমব সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই কুলখানীতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।
আমাদের দেশের গণতন্ত্রকে একবার এরশাদ সরকার ধ্বংস করেছিল। অবৈধভাবে স্বৈরাচারি কায়দায় ৯ বছর এরশাদ ক্ষমতায় টিকে ছিল। তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আজকের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর আন্দোলনের ফলে এরশাদ সরকারের পতন হয়। তারপর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখতে থাকে। সেই গণতন্ত্র আবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাচার এরশাদের কাদে ভর করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের কায়দায় গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যা দেশের জন্য শুভ হবে না।  
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট
                           

1 টি মন্তব্য:

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন...

সময় উপযোগী লেখা।