শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

এমন বাংলাদেশ কখনো চায়নি সাধারণ জনগণ


 
জনগণ মরছে গুলিতে, পেট্টোল বোমায়, আগুনে, দুর্ঘটনায়। তাদের শরীর আগুনে পুড়ে কয়লা হচ্ছে। সাধারণ জনগণ পড়েছে ভয়াবহ সংকটে। এত মৃত্যু, এত ধ্বংস, এত আগুন, এত হিংসা, এত জীবনহানী ও জীবিকার ওপরে এমন নিষ্ঠুর আঘাত স্বাধীনতার পর আর কখনো জনগণ দেখেনি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, শিক্ষা, চাকরি প্রতিটা ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর কোন সমাধান দেখছে না জনগণ। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনা করা যায় না।
জনগণের সামনে সিডরের মতো ধেয়ে আসছে রক্তাক্ত হানাহানি, জ্বালাও পোড়াও, প্রাণহানি, সম্পদহানির আশঙ্কা। রাজনৈতিকভাবে এদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে আর্ন্তজাতিক অঙ্গন থেকেও। এক ঘরে হয়ে যাচ্ছে সরকার। যেখান থেকে বেরোনোর উপায় আমাদের জানা নেই। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ২০১৩ সাল যেন মৃত্যুর এক বছর পার করছে বাংলাদেশ। আবার ২০১৫ তে শুরু হয়েছে লাশের রাজনীতি। দেশের রাজনীতি যেন দিনে দিনে মানবিক চেহারা হারিয়ে নির্দয়, নির্মম ও হিংস্র চেহারায় রূপ নিচ্ছে।
আমরা অতীতে দেখেছি কিভাবে মানুষকে পিটিয়ে বা কুপিয়ে বা জবাই করে বর্বরভাবে হত্যার করা হয়। কিন্তু এ বছর েেদখছি  জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে। মৃত্যু কত ভয়ঙ্কর, মৃত্যু কত যন্ত্রণাদায়ক তা হারে হারে টের পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিসাধীন মানুষগুলো। তাদের কান্না ভারি হয়ে উঠছে বাংলার আকাশ বাতাস। ক্ষমতালিপ্সুদের হত্যার রাজনীতিকে অভিসম্পাত করা ছাড়া আর কিছুই তাঁদের করার নেই। তারা এ নোংরা রাজনীতিকে অসুস্থ রাজনীতি আখ্যা দিয়েছে। এ নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে যারা যন্ত্রণায় কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তাদেরকে উপলব্ধি করতে পারেনি এসব ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিবিদরা।
রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ জনগণের প্রশ্ন এই জন্যই কি ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশে স্বাধীন হয়েছিল? স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও কি জনগণ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হতে পেরেছে? এই ৪৩ বছরে কোন না কোন দলের কাছে জনগণ পরাধীন হয়ে আছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের কাছে দেশ একরকম পরাধীন হয়ে আছে। কারণ তারা মনে করে এদেশ তারা স্বাধীন করেছে। তাদের এদেশের সম্পদ লুটপাট করে খাবার অধিকার বেশী। তারা ছাড়া অন্যকোন দল এদেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও অন্তরে স্বৈরতন্ত্র লালন করে। তাই যেন তেনভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করছে সরকার।  
দেশে এখন রাজনীতির নামে চলছে হানাহানি, মারামারি, খুনাখুনি, চুরি ডাকাতি, চিনতাই ও দুর্নীতি। এদেশের রাজনীতি থেকে সভ্যতা, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা নির্বাসিত হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার জন্য তারা নিজের আপনজনকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এদেশে কোন আইনের শাসন নেই। নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পায় আবার ফাঁসির আসামী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা পায়।
জনগণ হরতাল-অবরোধ চায় না। জীবন্ত মানুষ পুরানো চায় না। হানাহানি চায় না। গাড়ী ভাংচুর চায় না। গুলিবিদ্ধ লাশ চায় না। রাজনৈতিক কার্যালয়, বাসা বাড়ি, গার্মেন্টেস এ আগুন চায় না। চুরি, ছিনতাই, হত্যা, গুম চায় না। জনগণ নাস্তিক আস্তিক নিয়ে দ্বন্ধ চায় না। জনগণ হেফাজত চায় না। জনগণ হাসিনা খালেদা চায় না। জনগণ এরশাদ বা গোলাম আযমও চায় না। আজ জনগণ রাজনীতিবিদদের মারামারি আর পুলিশের গুলাগুলি দেখতে দেখতে ক্লান্ত। জনগণ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হউক তা চায় না। জনগণ নির্বাচনের নামে তামাশা করে ৩০০ কোটি টাকার অপচয় চায় না। জনগণের ঘামের টাকা এভাবে অর্থহীন নির্বাচনের কাজে ব্যয় হউক তা চায় না। যে নির্বাচন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না সে নির্বাচন জনগণ চায় না।
জনগণ শান্তি চায়। জনগণ স্বস্থি চায়। জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। ঘুমানোর সময় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চায়। সকালবেলা শান্তিতে ঘুম থেকে উঠতে চায়। ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজে ভাল খবর দেখতে চায়। জীবনের গ্যারান্টি নিয়ে জনগণ অবাধে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে চায়। ভোট দেয়ার সাংবিধানিক অধিকার চায়। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।
রাজনীতিবিদরা বার বার বলে আসছে জনগণ সকল ক্ষমতার উস। তাদের মতে যদি জনগণ সকল ক্ষমতার উস হয়, তাহলে কেন তাদের ভোটাধিকার কেরে নেয়া হল? কেন ১৫৩টি আসনে ভোট দিতে পারল না জনগণ? এ প্রশ্নের জবাব সরকারকে দিতে হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যারা ক্ষমতায় থাকতে চায় তার এখন কথা বলছে না কেন? সংবিধান কার জন্য। সরকারের জন্য নাকি জনগণের জন্য? যদি জনগণের জন্য সংবিধান হয়ে থাকে তাহলে ভোট দেয়ার অধিকারতো সংবিধান জনগণকে দিয়েছে। সভা সমাবেশ করার অধিকারতো সংবিধান জনগণকে দিয়েছে। মত প্রকাশ করার স্বাধীনতাতো সংবিধান জনগণকে দিয়েছে। তাহলে কোথায় আজ জনগণের সেই সাংবিধানিক অধিকার? কোথায় আজ গণতন্ত্র? স্বাধীনভাবে জনগণ কথা বলতে পারে না কেন? সংবাদপত্র কেন বন্ধ করা হলো? টিভি চ্যানেল কেন বন্ধ করা হলো? কথা বলার অধিকারটুকু কেন কেড়ে নেয়া হচ্ছে?
অসুস্থ এদেশ। অসুস্থ দেশের রাজনীতি। অসুস্থ দেশের সরকার। অসুস্থ দেশের অসুস্থ রাজিনীতিবিদদেরকে দিয়ে অসুস্থ দেশ জনগণের জন্য কি সফলতা বয়ে নিয়ে আসবে? দেশে কোন বিরোধীদল থাকবে না। সত্য ও হক কথা বলার মানুষ থাকবে না। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা থাকবে না। হত্যা, খুন, ধর্ষণ হলে বিচার হবে না। আমার মতের বিরুদ্ধে গেলে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। এই গণতন্ত্র কি জনগণ চায়? এই গণতন্ত্র কি জনগণ চেয়েছিল?
লেখক- তরুণ কলামিষ্ট
১৩.০২.২০১৫ খ্রি:

কোন মন্তব্য নেই: