শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

মুক্তি

সোহেল সাবিনাকে অনেক ভালোবেসেছিল। তারপরও সোহেল সাবিনাকে তার জীবন থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়া কি আর করার ছিল তার। সে সোহেলের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলেছে। ওকে নিয়ে সারাক্ষণ আতংকে থাকত সোহেল। কখন জানি কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। সোহেল যতই চাচ্ছিল সাবিনার জীবন থেকে মুক্তি পেতে সাবিনা ততই তার ঘাড়ে চেপে বসেছে। তাইতো সোহেল নিরূপায় হয়ে আজ সাবিনাকে চিরজীবনের জন্য মুক্তি দিল। সে আর আসবে না কোন দিন সোহেলের জীবনে। 
সোহেল ও সাবিনার প্রেম ছিল খাঁটি। কিন্তু এই খাঁটি প্রেমে যে কলঙ্কের দাগ লাগবে তা সোহেল চিন্তাও করতে পারেনি। অথচ তাদের দু’জনের ভালোবাসা দেখে সমাজের অনেকেই তাদের দিকে থুথু ফেলেছে। তারপরও একটি দিনের জন্য সাবিনাকে ভুলে থাকেনি সোহেল। সাবিনাকে সোহেল প্রচণ্ড ভালোবাসত। কিন্ত সে ভালোবাসার মূল্য সাবিনা দেয় নি। 
সোহেল এতটা নিষ্ঠুর, এতটা জঘন্য, এতটা পাষাণ হত না। যদি না তার অনুপস্থিতে সাবিনা অন্য একটি ছেলের সাথে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে না যেত। অথচ সাবিনার সাথে সোহেলের যখন পরিচয় হয়, তখন থেকেই সোহেল সাবিনার প্রতি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তাকে ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে ভালো লাগত না। আজ তার চোখ খুলে গেল। আজ তার প্রতি কোন মায়া হচ্ছে না। তার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মাচ্ছে।
এইতো বছর খানেক আগের কথা। টিএসটিতে যখন সাবিনার সাথে সোহেলের পরিচয় হয় তখন মনে হয়েছিল যুগ যুগ ধরে দুজন দুজনকে চিনে। কেন জানি সোহেলের মনে হতো সাবিনাই তার জীবনের স্বপ্নের রাজকন্যা যার জন্য সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। সাবিনাকে এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারত না। একদিন শুধু তার সাথে দেখা হয়নি তখন সেদিনতো দুচোখ বেয়ে অশ্রুর বন্যা বয়ে গেল। সাবিনার প্রতি সোহেলের আবেগ দিন দিন বেড়েই যেতে লাগল। সাবিনার কিছু আচরণ সোহেলকে আরো বেশি ভালোবাসতে বাধ্য করল। সাবিনার এই সব আচরণ কি ভালোবাসার বহি:প্রকাশ? যদি তাই হয় তাহলে কেন না বলা কথাগুলো বলছে না। অবশেষে সোহেল সিদ্ধান্ত নিল সে তার মনের সব কথা সাবিনাকে বলবে। তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে আপন করে নিবে। 
সোহেল সাবিনাকে তার ভালোবাসার অনুভূতি জানালো। সে ভালোবাসায় সাড়া দিল। সেই থেকে তাদের মধ্যে প্রেম শুরু হলো। সাবিনার মধ্যে সামান্য প্রেমের অনুভূতি কাজ করছে দেখে সোহেলের কাছে মনে হয়েছে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। প্রতিদিন দেখা করা, মোবাইলে কথা বলা, ফেসবুকে চ্যাট করা সবই হতো তাদের মধ্যে। 
পরিচয়, ভালোলাগা, প্রেম, সর্বশেষে বিয়ে। বিয়ের পরই সাবিনার আসল চেহারা উম্মুক্ত হলো। সে যে একাধিক ছেলের সাথে সর্ম্পক ছিল তা সোহেলের জানা ছিল না। যদি জানত তাহলে হয়তো এই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়াতো না। বিয়ের সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতেই সাবিনার পরিবর্তন লক্ষ করল সোহেল। সবকিছুতেই খিটখিটে মেজাজ দেখাত। অল্পতেই তুই ভাষা ব্যবহার করত। সোহেলের বাপ মাকে নিয়ে গালাগালি করত। সাবিনার সামান্য অবহেলায় সোহেলের হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেত। সারা রাত বিছানায় এ পাশ করত। ঘুম আসতো না। 
সোহেল ভাবছিল সারাজীবন এক সাথে কাটিয়ে দিবে। তাদের ভালোবাসার ফসল হিসেবে সন্তান আসবে। কিন্তু সন্তান নেয়ার ব্যাপারে সাবিনা অনিহা প্রকাশ করত। তখন থেকেই সাবিনার প্রতি সোহেলের সন্দেহ বেড়ে গেল। কেন সে এমন করছে? 
চারতলা বিল্ডিং এর উপর একটি চিলেকোটা, দুটো রুম, বাথরুম, রান্নাঘর, একটি বারান্দা, পুরো একটি ছাঁদ। এখানেই সোহেল সাবিনাকে নিয়ে বাস করে। সোহেল একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরি করে। হঠাৎ আজ সোহেল অসুস্থতা অনুভব করায় ছুটি নিয়ে বেলা বারোটার দিকে বাসায় ফিরে। দরজায় নক করতেই সোহেল যা দেখল তাতে কারো মাথায় ঠিক থাকার কথা না। দরজা খুলতেই একটি ছেলে সাবিনার রুম থেকে বের হয়ে গেল। ছেলেটিকে হাতেনাতে ধরতে পারেনি সোহেল। সোহেলের রাগ চরমে উঠে গেল। এই মুহুর্তে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। হাতের কাছে যা পেল তা দিয়েই সাবিনাকে মারতে লাগল সোহেল। 
- প্লিজ আমাকে মের না। আমার কথা শুন।
- আমি তোমার কোন কথাই শুনব না। এই তোমার ভালোবাসা? এইজন্যই এতদিন তোমাকে আমি ভালোবেসেছি? তুমি আমার ভালোবাসাকে নোংরা করে ফেলছ। তোমাকে আমি শেষ করে ফেলব। 
- প্লিজ তুমি বস। 
- আমি তোমার কোন কথায় শুনতে চাই না। আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই। তুমি এ মুহূর্তে আমার বাসা থেকে চলে যাও। 
- ঠিক আছে আমি চলে যাব। কিন্তু আমার কথা শুনবেতো।
- যা দেখছি তা কি মিথ্যা?
- সব সত্যি। কিন্তু কেন সে আসল? কে সে? তার সাথে আমার কত দিনের পরিচয়? তা কি জানবে না?
- না আর কিছু জানার দরকার নেই। তুমি যাবে কিনা সেটা বল?
- যদি না যাই।
- তাহলে তোমাকে খুন করব।
- কি বলছ তুমি! খুন! তুমি আমাকে খুন করবে?
- হ্যাঁ। খুন করব।
- ঠিক আছে চললাম। তোমার সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই।
- হ্যাঁ আমি তোমাকে আজই ডিভোর্স দিব। 
সাবিনা চলে গেল কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে। সোহেল শুনল না তার মনের কথা। কিছুদিন পর সোহেল সাবিনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিল। সাবিনাকে তার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দিল চির জীবনের জন্য।

০৮/১০/২০১৫ খ্রি:

কোন মন্তব্য নেই: