শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ছোট ভাই শফিউল্লাহকে মনে পড়ে

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সাল। আজ থেকে ২৪ বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ১৩ বছর। এই দিনটি আমাদের পরিবারের একটি শোকের দিন। এই দিনে আমার ছোট ভাই শফিউল্লাহ মাত্র ৬ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করে। আমি তার মৃত্যুতে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। এখনকার মতো ২৪ বছর আগে ডিজিটাল ছিলো না। তাই শফিউল্লাহর কোন ছবি তুলে রাখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার ছবি আমার মনের ফ্রেমে আজও ভেসে উঠে। মাত্র দুইদিনের অসুস্থতায় সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই দুইদিন ভাইটি কি পরিমাণ কষ্ট করেছে সেই স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না।
১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই শফিউল্লাহর পেট ব্যথা শুরু হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তার পেট ফুলে যায়। প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। অসহ্য যন্ত্রণায় সারাক্ষণ শুধু কান্না করছে। আব্বা তখন বিদেশ থাকেন। বড় দুই ভাইও বাড়িতে নেই। দাদা-দাদি ছিল বৃদ্ধ অবস্থায়। অসুস্থ ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত আমার তখন বয়স হয়নি। অন্যান্য ভাই বোনেরা ছোট। আম্মা খুব টেনশনে পড়ে গেলেন তাকে এ অবস্থায় কোথায় নিলে ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব। ১৭ তারিখ শুক্রবার সকালে প্রথমে আমাদের গ্রামের পাশে সলিমগঞ্জ বাজারে এক ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলেন।
ডাক্তার বললেন, তার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তিনি রেফার করলেন নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আম্মা আমরা ছোট চার ভাই বোনকে দাদা-দাদির কাছে রেখে বিকেল বেলা শফিউল্লাহকে নিয়ে আমার একমাত্র দুলাভাইয়ের বাড়িতে বাখরনগর গেলেন। দুলাভাই, রুবি আফা, আম্মা তারা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন পরদিন সকালবেলা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কিন্তু ঐদিন ভোর রাতে অর্থাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার আমার ছোট ভাই এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো। ভাইকে আর হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি। ভাইটি এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো।
ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে যখন আম্মা দুলাভাইকে নিয়ে বাড়িতে আসেন তখন এসে দেখে আমি বাড়িতে নেই। আমি তখন বিলের পাড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত বাড়িতে এসে ভাইকে মৃত্যু শয্যায় দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। আমরা ছিলাম ছয় ভাই। একটি ভাই আমাদের মাঝখান থেকে হারিয়ে গেলো। আমাদের ভাইয়ের সংখ্যা হয়ে গেলো পাঁচ। আজও আমরা বাকি পাঁচ ভাই বেঁচে আছি এবং এক সাথেই আছি। জানি না আবার কবে কার ডাক এসে যায়। দুলাভাইয়ের জানাজায় ভাইটির দাফন-কাফন করা হয়।
ভাইটি খুব আদরের ছিল। তাকে অনেক কুলে নিয়েছি, কাদে উঠিয়েছি, তার সাথে খেলেছি। অতটুকুন বয়সে তার যথেষ্ট বুদ্ধি ছিল। সে খুব ডানপিটে ও দুরন্ত ছিল। তার সাথে খেলা করার স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসলে আজও কান্না আসে। হঠাৎ করেই যেন সে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেল। তার কথা মনে হলেই তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার নিষ্পাপ ভাইটিকে জান্নাতবাসী করে।

২১/০৯/২০১৭ খ্রি:

কোন মন্তব্য নেই: