সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোনটা নাটক


গতকাল আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিরোধীদলীয় নেত্রীর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচী সর্ম্পকে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নিজেই তাঁর কর্মসূচির প্রতি আন্তরিক ছিলেন না। বেলা ১১টায় কর্মসূচি থাকলেও তিনি
ঘর থেকে বের হয়েছেন বেলা তিনটায়। তাতেই বোঝা যায়, তিনি আন্তরিক নন। কর্মসূচির নামে তিনি কেবল নাটক করেছেন। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা, পুলিশেরর বাঁধা ও বাড়িতে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হঠা করে তিনি দুপুরে বের হলেন। উনি সেজে আসলেন। দেখে মনে হলো যেন পার্টিতে যাচ্ছেন। ক্যামেরায় পোজ দিলেন। পুলিশের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা দেখা না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বললেন। এটা কোন বিরোধী দলের নেতার কথা হতে পারে?’
মানীয় সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য শুনে জাতি হতাশ হয়েছে। এ যেন উদোর পিণ্ডি বোধর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা। তাঁর ভাষায় মনে হয় তিনি ছাড়া এঘটনা আর কেউ জানেন না বা দেখেননি। তিনি জনগণকে এত বোকা ভাবলেন কিভাবে? কোনটা নাটক আর কোনটা নাটক না তা জনগণ ভাল করে বুঝে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এমন নাটক দেখতে দেখতে অভ্যস্থ।
মিডিয়ার কল্যাণে জনগণ সবকিছুই দেখেছে। বিরোধীদলের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ বাধা গ্রস্থ্য করার জন্য গত চারদিন যাবত দেশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরকার। তাদেরকে কর্মসূচী পালন করার অনুমতি দেয়া হয়নি পুলিশ। বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রটোকল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। একের পর এক নেতা যারা বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে সাক্ষা করতে আসছে তাদেরকেই গ্রেফতার করেছে। সারা দেশে অসংখ্য মানুষ গ্রেফতার করেছে। নেতাদের বাড়ীতে তল্লাশি করেছে। পুরুষের পাশাপাশি নিরপরাধ নারী ও শিশুদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিরোধীদলের ঢাকামুখি মার্চ ফর ডেমোক্রেসিনামে অভিযাত্রা ঠেকাতে সারাদেশে হরতাল ডেকেছে মটর চালক লীগ নামে সরকার সমর্থিত একটি সংগঠন। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ প্রতিহত করা হবে এবং নেতা-কর্মীদেরকে লাঠি হাতে মাঠে থাকার আহ্বান করা হয়।
এত কিছু করার পরও বিরোধীদলীয় নেত্রী যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। শুধু তাই নয় হাস্যকর প্রন্থায় বালি ভর্তি ট্রাক বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাসার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখে যাতে গেইট খুলে তিনি বের হতে না পারেন। তারপর কোন সাংবাদিককে ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন তখন পুলিশ তাঁর বাসার ভেতরে ঢুকে পরে। একপর্যায়ে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সাথে পুলিশ তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এঘটনা দেখার জন্য এবং ভেতরে কি হচ্ছে তা জাতিকে দেখানোর জন্য মিডিয়া কর্মীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে ওয়াল টপকে কাটা তারের বেড়া পার হয়ে ভেতরে ঢুকে তাঁর বক্তব্য গ্রহণ করেন। তখন আমরা বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ক্ষুদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। তার পূর্বে পুলিশের সামনে কি কথা হয়েছে তা আমরা জানি না।  
গতকালের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে সরকার বাঁধা দিয়ে আওয়ামী ২০০৬ সালের ২৮ আক্টোবরের লগি বৈঠার নৃশংস পাশবিকতার কথাই দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিল। আমরা দেখলাম দেশের সর্বোচ্চ বিচার অঙ্গন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের ওপর সরকার সমর্থক আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নগ্ন হামলা চালিয়েছে। লাঠি হাতে এ হামলা যা ‍জাতিকে অবাক করেছে। এ সময় দুই নারী আইনজীবীকে লাথি, কিল-ঘুষি মারা হয় এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ হামলায় অসংখ্য আইনজীবী আহত হয়। বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাতজন আইনজীবীকে আটক করা হয়। আক্রমণ করেছে ‍আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আর গ্রেফতার হয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা! এর আগে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান দিয়ে রঙিন পানি ছুড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অর্থ্যা তাদেরকে তখন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে বের হতে দেয়নি। তাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয় যাতে সরকার বাহিনী এসে তাদেরকে হামলা করতে পারে। আর ঠিক তখনই সরকার সমর্থক আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের উপর নগ্ন হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তখন তাদেরকে বাঁধা দেয়নি। নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছিল। তখন তারা একটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনেও আগুন ধরিয়ে দেয়। যা জাতি সরাসরি প্রতক্ষ্য করে। অথচ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হাইকোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, সেখানে কোন আইনজীবী ছিলেন না। সেখানে ছিল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডাররা!
অন্যদিকে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচী ঘিরে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল। সেখানেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নগ্ন হামলার শিকার হন সাংবাদিকরা।
এখন দেশের বিবেকবান জনগণের নিকট আমার প্রশ্ন হলো আপনারা বলুন কোনটা নাটক সরকারের কর্মকান্ড নাকি বিরোধীদলের কর্মকান্ড? গত একমাস বিরোধীদল দেশব্যাপী ‍অবরোধ পালন করে। এসময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তারা অবরোধ দিয়ে ঘরে বসে থাকে। সাহস থাকলে বের হয়ে আন্দোলন করার জন্য। এখন যখন তারা বের হয়ে আন্দোলন করার ঘোষণা দিল তখন কেন সরকার তাদেরকে বাঁধা দিচ্ছে?
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট

কোন মন্তব্য নেই: