বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৪

গৃহপালিত বিরোধীদল দশম সংসদে কতটুকু ভূমিকা রাখবে?

এক
গত জানুয়ারি ভোটাবিহীন, প্রার্থীবিহীন এক বির্তকিত একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সেই সংসদের যাত্রা শুরু হলো আজ থেকে। নিঃসন্দেহে এদিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে কারণ এই সংসদে নেই কোন কার্যকরী বিরোধীদল। জাতীয় পার্টিকে নামে মাত্র একটি প্রধান বিরোধীদল বানানো হয়েছে। যারা প্রকৃত পক্ষে সরকারের মিত্র। এই জাতীয় পার্টির
চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি ছিল না। তাই তাকে জোর করে ডিজিটাল কারাগারে (হাসপাতাল) রেখে নির্বাচন করে বর্তমান সরকার। জাতীয় পার্টির নেতাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচনে জিতিয়ে আনেন। এরশাদ বিভিন্ন চাপ পদের লোভে একসময় সংসদ সদস্যরূপে শপথ নেয়। তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা বানানো করা হয়। এরশাদ সাহেবকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ গৃহপালিত দূত বানানো হয়। এক সাথে তারা সরকারেও থাকবে আবার বিরোধীদলের ভূমিকায়ও থাকবে। এ যেন এক অদ্ভুদ সংসদ! যেই লাউ সেই কদু। জাতীয় পার্টি থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও বানানো হয়। যা নিঃসন্দেহে দশম জাতীয় সংসদ এক ---- অবস্থায় পরিণত হয়েছে। আর বিরোধীদল হয়েছে যেন এক গৃহপালিত বিরোধীদল! এদিকে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসছে জাতীয় পার্টি। আর বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসছেন রওশন এরশাদ। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে সরকারি দল ও বিরোধীদল পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকলে এবারই প্রথম প্রধান বিরোধীদল সরকারেরই অংশ। যা ইতিহাসের পাতায় কালো অক্ষরে লেখা থাকবে।
বিরোধীদলের প্রধান কাজ হচ্ছে সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়া এবং ভাল কাজের প্রশংসা করা। কিন্তু যারা সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করবে সরকারের মন্ত্রীসভায় থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে, তারা কিভাবে সরকারের সমালোচনা করবে? সরকারের খেয়ে, সরকারের পড়ে, সরকারের সমালোচনা করবে এটা কি সরকার কখনো মেনে নিবে? আর এই গৃহপালিত বিরোধীদল কেনই বা সরকারী সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আবার সরকারের সমালোচনা করতে যাবে।
দশম জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যায় সংসদ সদস্যরা। বাকী ১৪৭টি আসন নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। সর্বশেষ রংপুরের ৬ আসন প্রধানমন্ত্রী ছেড়ে দিলে সেই আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এমন ভাভাগির নির্বাচন, ভাগাভাগি মন্ত্রী সভা এবং ভাগাভাগি সরকারও বিরোধী দল জাতী আগে কখনো দেখেনি। আগে ছিল মহাজোট সরকার। এখন ভোটহীন সরকার। এটা জোট না আওয়ামী লীগ না অন্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

দুই
আমরা জানি জাতীয় সংসদ ভবনকে দেশের সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ভবন থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যাবতীয় আইন পাশ হয়। এ ভবন থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারিত হয়। সংসদীয় কার্যক্রম, মন্ত্রী, চেয়ারপারসন এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির অফিস রয়েছে এই ভবনে। কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের ভেতরে এক ভিন্ন পরিস্থিতির দেখা মেলে। সেখানে আমরা দেখতে পাই ষষ্ঠ তলার সাংবাদিক লাউঞ্জ থেকে তৃতীয় তলায় অবস্থিত বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ের যাওয়ার পথে পঞ্চম তলায় সাংবাদিক গ্যালারি-২-এর সিঁড়িতে কেউ সেখানে মলত্যাগ করে রেখেছেন। সিঁড়ির আরো কিছু স্থানে মানুষের নতুন ও পুরাতন মল দেখা যায়। এ কিসের আলামত। এখানে এমন অসুভ কাজ করতে পারে এমন লোক কিভাবে যায়?

তিন
আমরা দেখলাম গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার বর্তমান দশম সংসদের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সিলেটের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধূমপান করতে। শিশু-শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান করার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। মন্ত্রী হয়ে এমন অসামাজিক কাণ্ড করবেন তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভাবতেও পারেনি। পরে অবশ্য মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ক্ষমা চান। সংক্ষিপ্ত এ স্ট্যাটাসে দেখা গেল অনেক বানান ভুল। ছয় লাইনের স্ট্যাটাসে আটটি বানান ভুল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকাও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠছে।
পরিশেষে বলতে চাই এভাবে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ বেশীদিন চলতে পারে না। তাই অচিরেই আরেকটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা অতীব প্রয়োজন। তা না হলে এদেশে কোনদিন শান্তি ফিরে আসবে না। আর যারা সংসদ ভবনের মতো এমন পবিত্র স্থানে মলত্যাগ করে তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি প্রদান করা। যারা সংসদ ভবনের সিকিউরিটির দায়িত্বে আছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা। আর এমন মন্ত্রী আমরা চায়না যারা প্রকাশে জনসম্মুখে ধূমপান করবে। অবশ্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে ওনাকে একবার ভেবে দেখা উচিত ছিল যে ওনি একজন মন্ত্রী এবং পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বসা আছেন। এমন অবস্থায় ধূমপান করা উচিত নয়। কিন্তু সেটা তিনি করতে পারলেন না। যখন পত্রিকায় ও ফেসবুকে তার নামে সমালোচনার ঝড় উঠলো তখন তিনি ক্ষমা চাইলেন! তাই তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত আমি কিছুই দেখছি না। বরং আমি এ ধরনের হিতাহিতজ্ঞানহীন লোকদেরকে তিরষ্কারই করব। তাঁর এই কর্মকান্ড থেকে যেন অন্যরা শিক্ষা নেয় সেই প্রত্যাশা রইল।

২টি মন্তব্য:

আরজু মুন বলেছেন...

ভালো লাগলো লেখা। ধন্যবাদ। শুভ কামনা থাকলো।

Unknown বলেছেন...

আপনাকেও ধন্যবাদ