শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩

ভারত ও পাকিস্তান প্রীতি বন্ধ করতে হবে


১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আমরা লক্ষ করে আসছি এদেশের অধিকাংশ মানুষ দুটো ভাগে বিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ভারত প্রীতিতে বেশী আসক্ত। ভারতও আওয়ামীলীগের সাথে স্বাধীনতার শুরু থেকেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে আমাদের দেশের প্রতি নাক গলানোর সুযোগ পেয়েছে। আওয়ামীলীগ মনে করে ভারত যদি স্বাধীনতার সময় আমাদেরকে সহযোগিতা না
করতো তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আমি তাদের সাথে একমত হতে পারলাম না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষই যথেষ্ট ছিল। এতে ভারতে কোন কৃতিত্ব নেই। ভারত যদিও আমাদেরকে সাহায্য করে থাকে তাহলে তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই করে ছিল। যা আমরা বিগত সময়ে তাদের নাক গলানোর থেকেই বুঝতে পারছি। ক্রিকেট খেলায় আমার লক্ষ করেছি এদেশের মানুষ এই দুটো দেশের প্রতি সমর্থন করে হইহল্লুর করে। অথচ বাংলাদেশের খেলায় তেমন মাতামাতি লক্ষ করিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট মূহূর্তে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে ঢাকায় আসতে দেখলাম। তিনি এসে আমাদের দেশের কোন দল নির্বাচনে যাবে আর কোন দলকে পরাজিত করে কোন দল ক্ষমতায় থাকতে পারবে তার ব্যাপারে নাক গলিয়ে গেছেন। যা আমাদের জন্য শুভ নয়। আমাদের অভ্যান্তরিন ব্যাপারে কেন তারা নাক গলাবে? আমি মনে করি এই নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন একমাত্র আওয়ামীলীগ। সুজাতা সিং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবকে অনুরোধ করেছেন আওয়ামীলীগের একতরফা পাতানো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য। যদি তিনি একতরফা নির্বাচনে না যান তাহলে দেশে আবার জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসবে। আর জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসা মানে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। আর ভারত চায় না এদেশে বিএনপি আর ক্ষমতায় আসুক। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ভারতের লাভ বেশী। তাইতো সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হউক চায়, সেখানে ভারত চায় আওয়ামীলীগের অধীনে একতরফা নির্বাচন হউক। এক তরফা নির্বাচন হলে ভারতের কি লাভ সেই তর্কে আমি যাচ্ছি না। কিন্তু তারা কেন আমাদের দেশের অভ্যান্তরিন নির্বাচন নিয়ে নাক গলাবে? তারা কেন কে নির্বাচনে যাবে বা কে যাবে না তা নিয়ে মাথা ঘামাবে? অথচ এদেশের স্থিতিশীলতায় ভারতের স্বার্থ যে রয়েছে তা সুজাতা সিং বাংলার মানুষকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন।
তাছাড়া বাংলাদেশের অন্য একটি দল প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে। তারা মনে করে পাকিস্তান আমাদের জাতি ভাই। তারা একসময় আমাদের দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল একথা সত্যতাদের কাছ থেকে আমরা স্বাধীন হয়েছি। তারা আমাদের শত্রু। তাই বলে সারা জীবন তাদের সাথে আমাদের শত্রু হয়ে থাকতে হবে তা হতে পারে না। শত্রুকে মিত্রতে পরিণত করে আমাদেরকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সর্ম্পক রাখতে হবে।
সম্প্রতি মানবতাবিরোধী আপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস হওয়ার পর পাকিস্তানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার অতি রাজনীতি করছেনতাদের সাখে সব কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার যে দাবী তুলেছে গণজাগরণ মঞ্চ ও আওয়ামী সুশীল সমাজ তাও বেশী বাড়াবাড়ি বলে আমি মনে করি। ভারত যখন আমাদেরকে কে নির্বাচনে কে যাবে বা কে যাবে না তার সবক দিয়ে যায় তখন কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারকে মুখ খুলতে দেখিনি। যখন তাদেরকে সর্তক করা হয়নি।   
আসুন আমরা সবার আগে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী না হয়ে বাংলাদেশপন্থী হইবাংলাদেশের ক্রিকেট খেলায় সবাই এক হয়ে হইহুল্লোর করি। তাদের খেলা দেখে আমাদের নাচানাচি করে কোন লাভ নেই। দেশের যেকোন সংকট মূহূর্তে আমাদেরকে এক হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। যেমন আমরা কেউ ভারতে দালাল হতে চায় না, তেমনি পাকিস্তানের দালালও হতে চাই না। আমাদের অভ্যান্তরিন বিষয়ে তারা নাক গলানোর চেষ্টা করলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করি।
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট

কোন মন্তব্য নেই: