বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হউক


দশম জাতীয় সংসদের ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিল এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে দীর্ঘ একমাস যাবত লাগাতার অবরোধ কর্মচসূচী পালন করে আসছে বিরোধীদল। এতে শতাধিক লোক মারা যায়। সাধারণ জনগণ একরকম অবরোদ্ধ হয়ে পড়ে। ভয়, সংঙ্কা ও আশাঙ্কার মধ্যে এদেশের মানুষের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এত কিছু করেও বিরোধীদল সরকারকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়াতে পারেনি। তাই বিরোধীদল উপলদ্ধি করেছে এভাবে জনগণকে কষ্ট দিয়ে আন্দোলন করে এ
সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করা যাবে না। তাই তারা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর রবিবার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ নামে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এতে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ঢাকায় এসে তামাশার নির্বাচনকে না বলতে এবং গণতন্ত্রকে হ্যাঁ বলতে বলা হয়েছে।
বিরোধীদলের এই কর্মসূচীতে সাধারণ জনগণ স্বস্থি পেলেও সরকারের মনে ভয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার মনে করছে একদলীয় তামাশার নির্বাচনের পূর্বে এ ধরনের গণসমাবেশ সরকারের জন্য মরণ ফাঁদ হবে। তাই তারা ইতোমধ্যে বিরোধীদলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে এবং তাদেরকে ঢাকায় এবং ঢাকায় বাইরে কোথায়ও গণসমাবেশ করতে দেয়া হবে না মর্মে ঘোষণা দিয়েছে। এই যদি হয় সরকারের মনোভাব তাহলে বিরোধী এখন কি করবে? ইতিমধ্যে বিরোধীদলও ঘোষণা দিয়েছে সরকার যদি তাদের গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশে বাঁধা দেয় তাহলে এর পরিনাম হবে ভয়াবহ।
বিরোধীদল যেকোন কর্মসূচী দিলেই সরকার তাতে বাঁধার সৃষ্টি করে। অথচ বিরোধীদল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ ধরনের কর্মসূচী পালন করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার যখন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে তথন বিরোধীদলের সামনে আর কোন উপায় থাকে না। তখন তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। তখন তারা বাধ্য হয়ে হরতাল অবরোধ দেয়। হরতাল অবরোধ দিলে জানমালের ক্ষতি হয় তা আমরা সকলেই জানি। অনেকে টকশোতে দেখি বিরোধীদল হরতাল-অবরোধ দিলেই তাদের সমালোচনা শুরু করে দেয়। কিন্তু যখন বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকার বাঁধা দেয় তখন কিন্তু তেমন সমালোচনা করতে শুনিনা। এসব সমালোচকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন বিরোধীদল কোন পথে যাবে? একটি দলকে যখন স্বাভাবিকভাবে তার কর্মসূচী করতে দেওয়া হবে না তখন অবশ্যই তারা উল্টো পথে আন্দোলনে যাবে। আর উল্টো পথটি হচ্ছে ধ্বংসের পথ। আমরা কি চাই সে পথে বিরোধীদল চলে যাক? আমরা চাই বিরোধীদল গণতান্ত্রিক পথে ‍আন্দোলন করুক। আর সরকারও তাদের সেই গণতান্ত্রিক পথে যেন কোন বাঁধা না দেয়। আমরা চাই সরকার বিরোধীদলের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে যেন সামনের দিকে যায়।
আমরা ইতোমধ্যে সরকারকে উল্টো পথে হাঁটতে দেখছি। সরকার গতকাল বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে দেয়নি। সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় ঢুকতে চাইলে আটক হন সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত হোসেন। গোলশানের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণিকে আটক করে পুলিশ পরে ছেড়ে দেয়। রাতে সেখান থেকে আটক হয় সাংসদ শাম্মী আখতার ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিদ আউয়ালকে। রাত পৌনে ১০টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও আটকের চেষ্টা করে পুলিশ।
এই হচ্ছে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আচরণ। এভাবে বাঁধা দিয়ে আরকাল গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ধমিয়ে রাখতে পারবে সরকার? তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা আর জ্বালাও পোড়াও চাই না। আমরা শান্তি চাই। শান্তির জন্য বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপক্ষে যাবেন না। এতে করে আপনাদের দুদলের কোন ক্ষতি না হলেও আমরা সাধারণ জনগণ শঙ্কায় আছি। আমরা আর অসুস্থ সরকার চায়না। অসুস্থ হলে মানুষকে যেমন হাসপাতালে নেয়া হয় তেমনি এখন সময় এসেছে অসুস্থ সরকার ও অসুস্থ গণতন্ত্রকে হাসপাতালে নেয়া।
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট

কোন মন্তব্য নেই: