রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

ঘুরে আসুন উয়ারী-বটেশ্বর

01
নরসিংদী জেলাতে যতগুলো প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নস্থান রয়েছে ওয়ারী-বটেশ্বর তার মধ্যে অন্যতম। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বের এ প্রত্নস্থান ১৯৩৩ সালে আবিস্কৃত হয়। ওয়ারী বটেশ্বর বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জনপদ। পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত ওয়ারী বটেশ্বর ছিল একটি নদীবন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহাজনপদ। দুর্গনগরটি ছিল সেই মহাজনপদের রাজধানী। ওয়ারী-বটেশ্বর সাম্প্রতিককালে
বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত একটি প্রত্নস্থান। কৃষিজমি, বাগবাগিচা ও ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এক নগর। প্রাচীন আমলেই গড়ে উঠেছিল উয়ারী–বটেশ্বর। যুদ্ধরাজ বম্বেটর শক্তিমান গ্রিকবীর আলেকজান্ডার যে জাতির ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন সে জাতির বসবাস ছিল উয়ারী–বটেশ্বর এ। সেই জাতির নাম গঙ্গারিডি। নরসিংদীতেই ছিল তাদের বসবাস। উয়ারী–বটেশ্বরে আড়াই হাজার বছরের প্রত্ননিদর্শন আবিষ্কারের কাহিনী একটি জনপদের অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করে দেয়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী উয়ারী দুর্গনগরীকেই এই জনপদের রাজধানী মনে করেন।
01 (1)
ইতোমধ্যে এখানথেকে আবিষ্কৃত হয়েছে মাটির দুর্গপ্রাচীর, পরিখা, পাকারাস্তা,পার্শ্বরাস্তা, ইটনির্মিত স্থাপত্যনিদর্শন, প্রাচীন দূর্গনগরী, বন্দর, পোড়ামাটির ফলক, পাথরের পুঁতি, মুদ্রাভান্ডার উপমহাদেশের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা, প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তরীভূত জীবাশ্মা, কাঠের হাতিয়ার, তাম্রবসতি, ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা ও মুদ্রাভাণ্ডার, হরেক রকমের পুঁথি, সুদর্শন লকেট ও মন্ত্রপূত কবচ, বাটখারা, পোড়ামাটি ও ধাতবশিল্পবস্তু, মৃর্যাকপাত্র, চিত্রশিল্প, স্বল্প মূল্যবান পাথরের গুটিকা, কাচের গুটিকা, উচ্চমাত্রায় টিনমিশ্রিত ব্রোঞ্জ নির্মিত নবযুক্ত পাত্র ইত্যাদি। উত্তর ভারতীয় মসৃণ কালো মৃৎপাত্র প্রভৃতি নির্দশনগুলোকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় প্রথম শতক র্পযন্ত সীমায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করেছেন। ওয়ারী-বটেশ্বর বিকশিত হয়েছে স্বল্প মূল্যবান পাথরের নয়নাভিরাম পুঁথি তৈরির কারখানার জন্য। ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়ারী গ্রাম খননের সময় শ্রমিকেরা একটি মৃর্যা পাত্রে সঞ্চিত কিছু রৌপ্যমুদ্রা পান। তারা এর বেশিরভাগ স্থানীয় বেনেদের কাছে বিক্রি করে দেন। ওয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের শুরু এভাবেই।
01 (3)
নরসিংদী যেভাবে যাবেন
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে বামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে একটু এগুলেই নরসিংদী। গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর থেকে নরসিংদীর বাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিবহন ১০ মিনিট পর পর নরসিংদী যাচ্ছে। যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। ভাড়া ৭০ টাকার মতো। ট্রেনেও নরসিংদী যেতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নরসিংদী যেতে ট্রেনে সময় লাগে ১ ঘণ্টার মতো, ভাড়া ৩৫ টাকা। নরসিংদী জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বেলাব উপজেলার আমলার ইউনিয়নে উয়ারী–বটেশ্বরে অবস্থিত। ঢাকা অথবা সিলেট থেকে সড়কপথে রওনা দিলে আপনি মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। মরজাল থেকে ৪ কি. মি. দূরে উয়ারী–বটেশ্বর। এ পথে রিকশা নিয়ে আসা যাবে।
01 (2)
01 (4)
ছবি নেট থেকে সংগ্রহ করা

কোন মন্তব্য নেই: