রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান অবস্থা

 গত ৮ মার্চ পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালনের পেছনে রয়েছে এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে ১৯৯১ সালের ৮ মার্চ থেকে। আজ থেকে ১৪৭ বছর পূর্বে অর্থ্যাৎ ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার কতিপয় মহিলা শ্রমিকগণ কারখানায় মানবেতর জীবন ও ১২ ঘন্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তখন পুলিশ তাদের উপর নির্যাতন শুরু করে এবং বহু শ্রমিককে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করে। পরবর্তীকালে ১৮৬০ সালে ঐ কারখানার মহিলা শ্রমিকরা ‘‘মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন’’ গঠন করেন। আর
সেই থেকেই তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এতটুকু হচ্ছে ৮ মার্চের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য। তারপর ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেনহেগেন শহরে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মানির মহিলা নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’’ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯১১ সালে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ ‘‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’’ পালন করা হয়। অন্যান্য দিবসের মতো ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
আমরা আজ প্রবেশ করেছি একবিংশ শতাব্দিতে। নতুন শতাব্দীতে কেমন আছে বাংলাদেশের নারীরা? এই প্রশ্নের উত্তর সুখকর নয়। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা ভাল নেই। বর্তমান সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। বাড়ছে ভয়াবহ নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ ও নারী পাচারের মতো ঘটনা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের চেয়ে ঢের বেশী নারী নির্যাতন হচ্ছে পথে, ঘাটে, গৃহে, কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নারীর করুণ চিত্র। বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান ও বিরোধী দলের নেতা দুজনই নারী। কিন্তু এই নারীরা কি পেরেছে সমাজ থেকে যৌতুক প্রথা চিরতরে বন্ধ করতে? পেরেছে কি ধর্ষণের সেঞ্চুরীর হাত থেকে নারীদেরকে বাঁচাতে? বিগত সরকার বর্তমান প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরী করে। অথচ তখন সরকার পারেনি ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার করতে। পারবে কি করে। তারা ক্ষমতায় বসে নিজের স্বার্থের জন্য। ক্ষমতার লোভে তারা দেশ, দশের ও নারীর অধিকারের কথা ভুলে যায়। তারা শুধু এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। আজ সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোন আসন নেই। বার বার অঙ্গীকার ঘোষণার পরও সংবিধানে সেই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন হচ্ছে না।
আজ দেশে ২ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণ করেই ধর্ষকরা ক্ষান্ত হন না। তারা উক্ত ধর্ষণের ভিডিও করে ব্লু-ফিল্ম বানিয়ে ইন্টারনেটে প্রচার করে। কর্মসংস্থানের লোভে পড়ে অনেক নারী বিদেশে পাচার হচ্ছে। বাজারের পণ্যের মতো নারীকে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিভাবক, বাবা, মার সামনে কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করছে। যেভাবে গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা এ যেন জাহিলিয়াতের যুগকে হার মানাচ্ছে। জানিনা এর পরের অবস্থা কি হবে।
নারীরা আজ সমাজের সর্বক্ষেত্রে বিচরণ করছে কিন্তু তারা তাদের মর্যাদা পাচ্ছে না। তারা সরকারি ও বেসরকারি কর্মসংস্থানে এগিয়ে আছে। সরকারি বিভিন্ন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এখন সেনাবাহিনীতে নারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মন্ত্রিসভায় ৪ জন নারী এবং জাতীয় সংসদে ৬ জন নারী সদস্য রয়েছে। তবে ইহা তুলনামূলকভাবে অতি নগন্য। বিগত সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকার নারীদের প্রতি একটু মনোযোগী। তিনি বর্তমানে নারীদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখাপড়া ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান্স“ নামে এশিয়ার প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ ও বিশ্বের দরবারে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে থাকবে। আরো শুনতে পেলাম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদ হতেই সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর আনুপাতিক হারে ৪৫ জন মহিলাকে সংসদ সদস্য করে নেয়া হবে এবং সংসদের চলতি অধিবেশনেই এসব ব্যবস্থা করে সংবিধান সংশোধনের একটি বিল পাস হবে। এসব হচ্ছে বর্তমান সরকারের মহিলাদের অধিকার আদায়ের ইতিবাচক দিক।
পরিশেষে আমরা বলবো বর্তমান যুগে নারীদেরকে তাদের অধিকারের জন্য আরো সচেতন হতে হবে। বুঝে নিতে হবে তাদের হিসাব নিকাশ। তাহলে নারী জাতির ভাগ্য পরিবর্তন হবে। আর ৮ মার্চ  ‘‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’’ সফল করতে হলে অবশ্যই বর্তমান নারীর অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

প্রকাশকাল: বুধবার, ১৭ মার্চ ২০০৪ইং

কোন মন্তব্য নেই: