একটি সামাজিক সমস্যা অন্যান্য অনেক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। সামাজিক সম্যাগুলোর মধ্যে বেকার সমস্যা অন্যতম। আধুনিক বিশ্বে উন্নত ও অনুন্নত দেশেই কম বেশি বেকার সমস্যা বিদ্যমান। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একটি মারত্মক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা কত তার সঠিক কোন তথ্য নেই। বাংলাদেশে বেকার সমস্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শহরে বেকারের সংখ্যা
দিন দিন মারাত্মকহারে বেড়েই চলেছে। এদেশের শিক্ষিত ব্যক্তিরা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান নীতির কারণে মূলত শহরমুখী হচ্ছে যদিও তারা গ্রাম থেকে আগত।
অপরদিকে গ্রামের অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ও শহরের চেয়ে কম নয় বরং গ্রামের অশিক্ষিত বেকার আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। তবে গ্রামের অশিক্ষিত বেকার কাজের সন্ধানে শহের এসে আবার ভিড় জমাচ্ছে। ফলে শহরেই বেকার সমস্যার চাপটা বেশি দেখা দিচ্ছে। আবার অনেকে জমিজমা বিক্রি করে বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
বেকার সমস্যার কারণে সামাজিক সমস্যাও দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বেকারত্ব অপরাধের অন্যতম কারণ। বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে অপরাধের হার বৃদ্ধির একটি প্রত্যক্ষ সর্ম্পক রয়েছে। বেকারত্ব আমাদের সমাজে হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এর পরিণাম মোটেও ভালো নয়। কেননা বেকাত্বের ফলে মাদকাশক্তি, পতিতালয়ে গমন, জুয়া খেলা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে বেকার ছেলে-মেয়েরা। বেকারত্ব মানুষকে মানুষের কাছে খাঁটো করে। দয়া ও করুণা ভিক্ষা করতে বাধ্য করে। বেকার জনগোষ্ঠীর একটি মহল কখনও বা প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ মহলের নানা অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়।
বেকার সমস্যার একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাই শিক্ষিত বেকার সমস্যার বৃদ্ধির মূল কারণ। এদেশে তাত্ত্বিক শিক্ষাই বেশি দেয়া হচ্ছে। ব্যবহারিক বৃত্তিমূলক টেকনিক্যাল শিক্ষা পর্যাপ্ত পরিমাণে না দেয়ার ফলে বেকার সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা জীবন ও কর্মবিমুখতার সৃষ্টি করছে। তত্ত্বনির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবার ফলে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকার ফলে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রী পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরাও বেকার হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া অতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের দেশের বেকার সমস্যার আরেকটি কারণ।
শিক্ষার্থীদের চাকরি কেন্দ্রিক মনমানসিকতার ফলে বেকার সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। কারণ তারা লেখাপড়া করে ভালো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য। চাকরি না পাওয়াকে তারা বেকার সমস্যা মনে করে। অথচ চাকরিই কোন দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আমাদের দেশে এমন কতিপয় ঘরকুনো স্বভাবের পুরুষ ও মহিলা আছে যারা নিজের গ্রাম ছেড়ে দূরে কাজ পাবার সম্ভবনা থাকলেও যেতে চায় না। ফলে এসব ঘরকুনোদের কারণে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অনতিবিলম্বে সরকারকে বেকার সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করে এর সমাধান করতে হবে। গ্রামীণ বেকার সমস্যা কমানোর জন্য প্রয়োজন ক্ষুদ্রায়তনের কুটির শিল্প স্থাপন করা। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো অবশ্যই জরুরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেশন জট দূরীকরণ করতে না পারলে অনেকের চাকরির বয়স পার হয়ে যাবে। সেশন জটের অন্যতম কারণ হরতাল। তাই এই হরতালকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনা যাবে না। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে, তবে আরো কমাতে হবে। চাকরির আশায় যেন কোন ছাত্র বসে না থাকে সেজন্য চাকরির পাশাপাশি স্বনিয়োজিত পেশা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বেকার জনগোষ্ঠির একটি অংশকে সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান ব্যবসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে অনেক বেকার জনগোষ্ঠির অনেকেই স্বাবলম্বী হবার প্রয়াস পাবে এবং চাকুরির ক্ষেত্রে প্রার্থীর চাপ কমবে।
তাই অচিরেই বেকার সমস্যা সমাধানে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ একটি বেকার মানুষ দেশের বোঝা। অলস হয়ে বসে না থেকে যে, যে কাজ পারি সে কাজে নিয়োজিত থাকলে অল্প দিনে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব।
প্রকাশকাল: বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৫ইং
অপরদিকে গ্রামের অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ও শহরের চেয়ে কম নয় বরং গ্রামের অশিক্ষিত বেকার আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। তবে গ্রামের অশিক্ষিত বেকার কাজের সন্ধানে শহের এসে আবার ভিড় জমাচ্ছে। ফলে শহরেই বেকার সমস্যার চাপটা বেশি দেখা দিচ্ছে। আবার অনেকে জমিজমা বিক্রি করে বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
বেকার সমস্যার কারণে সামাজিক সমস্যাও দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বেকারত্ব অপরাধের অন্যতম কারণ। বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে অপরাধের হার বৃদ্ধির একটি প্রত্যক্ষ সর্ম্পক রয়েছে। বেকারত্ব আমাদের সমাজে হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এর পরিণাম মোটেও ভালো নয়। কেননা বেকাত্বের ফলে মাদকাশক্তি, পতিতালয়ে গমন, জুয়া খেলা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে বেকার ছেলে-মেয়েরা। বেকারত্ব মানুষকে মানুষের কাছে খাঁটো করে। দয়া ও করুণা ভিক্ষা করতে বাধ্য করে। বেকার জনগোষ্ঠীর একটি মহল কখনও বা প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ মহলের নানা অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়।
বেকার সমস্যার একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাই শিক্ষিত বেকার সমস্যার বৃদ্ধির মূল কারণ। এদেশে তাত্ত্বিক শিক্ষাই বেশি দেয়া হচ্ছে। ব্যবহারিক বৃত্তিমূলক টেকনিক্যাল শিক্ষা পর্যাপ্ত পরিমাণে না দেয়ার ফলে বেকার সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা জীবন ও কর্মবিমুখতার সৃষ্টি করছে। তত্ত্বনির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থা দেশের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবার ফলে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকার ফলে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রী পাস করা ছাত্র-ছাত্রীরাও বেকার হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া অতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের দেশের বেকার সমস্যার আরেকটি কারণ।
শিক্ষার্থীদের চাকরি কেন্দ্রিক মনমানসিকতার ফলে বেকার সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। কারণ তারা লেখাপড়া করে ভালো একটা চাকরি পাওয়ার জন্য। চাকরি না পাওয়াকে তারা বেকার সমস্যা মনে করে। অথচ চাকরিই কোন দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আমাদের দেশে এমন কতিপয় ঘরকুনো স্বভাবের পুরুষ ও মহিলা আছে যারা নিজের গ্রাম ছেড়ে দূরে কাজ পাবার সম্ভবনা থাকলেও যেতে চায় না। ফলে এসব ঘরকুনোদের কারণে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অনতিবিলম্বে সরকারকে বেকার সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করে এর সমাধান করতে হবে। গ্রামীণ বেকার সমস্যা কমানোর জন্য প্রয়োজন ক্ষুদ্রায়তনের কুটির শিল্প স্থাপন করা। শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটানো অবশ্যই জরুরী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সেশন জট দূরীকরণ করতে না পারলে অনেকের চাকরির বয়স পার হয়ে যাবে। সেশন জটের অন্যতম কারণ হরতাল। তাই এই হরতালকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় আনা যাবে না। জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে, তবে আরো কমাতে হবে। চাকরির আশায় যেন কোন ছাত্র বসে না থাকে সেজন্য চাকরির পাশাপাশি স্বনিয়োজিত পেশা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বেকার জনগোষ্ঠির একটি অংশকে সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান ব্যবসার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এতে করে অনেক বেকার জনগোষ্ঠির অনেকেই স্বাবলম্বী হবার প্রয়াস পাবে এবং চাকুরির ক্ষেত্রে প্রার্থীর চাপ কমবে।
তাই অচিরেই বেকার সমস্যা সমাধানে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। কারণ একটি বেকার মানুষ দেশের বোঝা। অলস হয়ে বসে না থেকে যে, যে কাজ পারি সে কাজে নিয়োজিত থাকলে অল্প দিনে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব।
প্রকাশকাল: বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৫ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন