মঙ্গলবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

গ্রন্থ পর্যালোচনা “পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে” আমির আসহাব


Cover
একুশের বই মেলা-২০১৪ তে সিদ্দিকীয়া পাবলিকেশন্স, ৩৮/৩ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় তরুণ কবি আমির আসহাব এর কাব্য গ্রন্থ “পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে”। এই গ্রন্থে ৪২টি কবিতা স্থান পেয়েছে। গ্রন্থের প্রচছদ অলংকরণ করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। জন্ম অবধি যাদের কাছে ঋণী সেই শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা’কে উৎসর্গ করেই এই কাব্য গ্রন্থের যাত্রা শুরু হয়। উক্ত কাব্য গ্রন্থের কবিতাগুলো মনের গভীরে প্রোথিত অনুভূতিকে উদ্বেলিত করার মত গদ্য রীতিতে রচিত হয়েছে।

কবি আমির আসহাব এই কাব্য গ্রন্থে কখনো ফুটিয়ে তুলেছেন সমাজের নানা অসঙ্গতি, কখনো অতি সহজ বর্ণনায় তুলে এনেছেন প্রেম-ভাবনার কাতরতা। কখনো তুলে এনেছে জীবনের কথা, কৃষকের কথা, সিমাহীন দু:খের কথা। বাংলা সাহিত্যে এমন গ্রন্থের কদর থাকা চাই। জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করাই তাঁর লেখার প্রধান উদ্দেশ্য। আবার দেশ ও দেশের মানুষের তরে কিছু করাটাও তাঁর একটা নেশা। সেই নেশা থেকেই এই কাব্য গ্রন্থের জন্ম। কবির শব্দ চয়ন খুবই সুন্দর। নিখুঁত আধুনিক গদ্য কবিতার যে আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য, আন্ত-বর্ণের মিল ছাড়া স্বরবৃত্তে অনুপ্রাসের প্রতিধ্বনি। আলোচ্য গ্রন্থের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এই গ্রন্থে কবি রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া করুণ কাহিনী তুলে ধরেছেন ‘রেশমা বলতে এসেছে‘ ও ‘অপেক্ষা’ কবিতায়। অপেক্ষা কবিতাটি পড়লে যে কারো চোখে জল এসে যাবে। কবির ভাষায়-
শরীরের অঙ্গ নাড়ানো অসম্ভব
চোখের পাতা খোলা না বন্ধ জানি না
সম্মুখে অন্ধকার;
কতটা নিচে আছি বোধগম্য নয়
শ্রবণ শক্তি ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর
ফাঁক-ফোকড়ে শুনছি কথোপকথন
উদ্ধার ত‍ৎপরতা চলছে …
কয়েকদিন যাবৎ আমি এমতাবস্থায়
প্রহর গুনছি তো গুনছি।
শুনেছি -
উদ্ধার কাজ আজ হতে ইতি,
ইট-বালু ইতোমধ্যে রক্তে ঘেমেছে
হৃদ-স্পন্দন দীর্ঘতর হচ্ছে
হঠাৎ সাড়া শব্দ নেই,
আবার নীরবতা ঘনীভূত হতে থাকে
আর আমি-
এক খন্ড পাথর হবার অপেক্ষায়।
“পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে” কাব্য গ্রন্থে কবি বিরহকে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের ভাষায়। প্রতিটি বিরহ-কাতর অন্তরের নীরব ক্রন্দনই যেন উদ্ভাসিত হয়েছে কিছু কবিতায়। তাইতো ‘অগোছালো ভালোবাসা’ নামক কবিতার শেষের কটি লাইনে ফুটে উঠেছে বিরহের করুন সুর।
ঐযে মেয়েটা, যে ভালোবাসতো আমাকে। সে এখন অন্যের সঙ্গিনী! ঢের সময় কেটেছে, নিজেকে সাজাতে বসিনি কখনো। আমাকে না পেয়ে গেছে দূরে।
আজ আমি সব থেকে মুক্ত, যা ইচ্ছে করতে পারি। পিছনে কোন টানাপোড়েন নেই,
যেমন এক পাগলের।
তরুণ কবি আমির ‍আসহাব মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানাধীন রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ১৯৮৭ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই-এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। কৈশোর থেকেই সৃজনশীল কাজে ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। এরই ধারাবাহিকতায় লেখালেখির হাতেখড়ি। স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত কবিতা- জীবন সায়াহ্নে, প্রথম আলোয় প্রথম প্রকাশিত কবিতা- পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে। জলকণা, কাব্যকথা, মেঘফুল, তীরন্দাজ, ছুটি, ধ্রুবতারা, শব্দের মিছিলসহ বেশ কিছু সাহিত্য পত্রিকায় প্রায় নিয়মিতভাবে ছাপা হচ্ছে তাঁর অসংখ্য কবিতা। বিভিন্ন ব্লগ, ই-বুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতোও নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে তাঁর কবিতা। সেই ধারাবাহিকতায় শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও কাব্য চর্চায় নিবিষ্ট তরুন কবি আমির আসহাব এর জীবন ঘনিষ্ট সাহিত্য কর্ম “পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে” এক দুঃখ-বেদনা বিরহের প্রতীক। যেখানে কোন শব্দ জড়তা নেই, শব্দের বাহুল্য নেই। নিরীক্ষা প্রয়াসী কবি ছন্দের সযত্ন শাসন মেনে শব্দ চয়ন, পঙক্তি বিন্যাস, দিয়ে জীবনের সুখ-দুঃখ ঘাত-প্রতিঘাতের অব্যক্ত বানী ব্যক্ত করে সমৃদ্ধ করেছেন “পিঁপড়ের পিছে পিঁপড়ে”।
এছাড়াও কবির প্রকাশিত ‘এ ড্রাই ট্রি’ শিরোনামে তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে একুশে বইমেলায়। আর যৌথভাবে প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি বই তার মধ্যে ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ, এখনো একা ও জলছাপ মেঘ‘ ‍উল্লেখযোগ্য।

কোন মন্তব্য নেই: