[ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা]
ছোট্ট
এই বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা খুব কম নয়। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন,
কুয়াকাটা, সুন্দরবন, জাফলং, মাধবকুন্ড, লালবাগ কেল্লা ইত্যাদি খুব পরিচিত
জায়গা ছাড়াও এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ভ্রমণ জায়গা। আর এসব জায়গার
দৃশ্যও অনেক মনোরম। যেমন কক্সবাজারের প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত নতুন
এবং সুন্দর। এজন্য কবি জীবনানন্দ দাশ বার বার এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন
এবং ধবল বকদের ভীড়ে তাঁকে খুঁজতেও বলেছেন।
পেশাদার অপেশাদার সকল
ভ্রমণকারীরাই এই ভ্রমণকে এক ধরনের বিনোদন হিসেবেই বিবেচনা করেন। পেশাদারদেৃর
কাছে আবার এটি নেশাও বটে। তারা অবসর, চাকুরী বা ব্যবসাজনিত কারণে বিভিন্ন
স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন যাদেরকে পর্যটকও বলা যেতে পারে। এই ঘুরে বেড়ানো
জিনিসটাও আজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বা World Tourism
Organization পর্যটনের নিম্নমুখী এবং ঊর্ধ্বমুখীতা যাচাই করে মানদন্ড
প্রণয়ন করে থাকে। এটি স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা
হিসেবে বিবেচিত। তারা কোন ব্যক্তিকে পর্যটক রূপে আখ্যায়িত করতে গিয়ে
বলেছেন, “যিনি ধারাবাহিকভাবে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে কোন স্থানে ভ্রমণ ও
অবস্থানপূর্বক স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের
উদ্দেশ্যে অবসর, বিনোদন বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ অন্যান্য
বিষয়াদির সাথে জড়িত, তিনি পর্যটকের মর্যাদা উপভোগ করবেন।”
ভ্রমণপ্রিয়
মানুষ বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন নামে ভ্রমণে যেতে চান। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের
এরকম আকাক্সক্ষাই কাম্য। সত্যি কথা বলতে কি এই আধুনিক সময়ে ভ্রমণ ভালোবাসেন
না কিংবা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন
হবে। রসকসহীন মানুষও ভ্রমণের গন্ধ পেলে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু
বর্তমান ব্যস্ত সময়ে মানুষ ভ্রমণের সুখ খুব কমই পায়। তারা অনেক সময়েই দুধের
স্বাদ ঘোলে মেটান। বিভিন্ন ভ্রমণ কাহিনী পড়ে সময় কাটান। এদিক দিয়ে সবচেয়ে
উৎকৃষ্ট হচ্ছে সৈয়দ মুজতবা আলীর “দেশে বিদেশে” কিংবা অন্নদাশঙ্কর রায়ের
“পথে প্রবাসে”। এরপরেই বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ একটি বিশেষ স্থান করে ফেলে।
ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা ভ্রমণ করেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে চান যা কিনা
ভ্রমণের জনপ্রিয়তারই নির্দেশক। এক্ষেত্রে পেশাদার অপেশাদার উভয়
ভ্রমণকারীরাই ভ্রমণ করে এসে কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন। অন্নদাশঙ্কর রায় এ নিয়ে
একটি সুন্দর উক্তি করে গেছেন। তিনি বলেন, “ভ্রমণ থেকেই হয় ভ্রমণ কাহিনী।
কিন্তু ভ্রমণকারীদের সকলের হাত দিয়ে নয়”। তবু প্রতি বছর বাংলাদেশে অন্তত
শ’খানেক ভ্রমণ বই প্রকাশিত হয়। দৈনিক পত্রিকাগুলো এ নিয়ে আলাদা পাতা বের
করেন। এমন কি ভ্রমণকে ভিত্তি করেই বের হয় বিভিন্ন পত্রিকা। এ সব কিছু
ভ্রমণের জনপ্রিয়তারই নির্দেশক। অন্যদিকে যারা পেশাদার লেখক তাদের ভ্রমণ
কাহিনীগুলো হয়ে যায় ভ্রমণ বিষয়ক কালজয়ী বই।
আমি একজন ভ্রমণ পিপাসু
মানুষ। ভ্রমণের গন্ধ পেলেই ছুটে যায় সেখানে। সাথে সব সময় একটি ডায়েরি ও কলম
রাখি। যা কিছু দেখি তাই সংকেতে লিপিবদ্ধ করে রাখি ডায়েরীতে। যা পরবর্তীতে
হয়ে উঠে এক ভ্রমণকাহিনী। ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ রাত তখন ৮:০০টা বাজে। হঠাৎ আমার
রুমমেট শরীফ এসে বললো, তার সাথে চট্টগ্রাম যেতে হবে। কারণ সে এবার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। ২৪ তারিখ ভর্তি পরীক্ষা
অনুষ্ঠিত হবে। তাই আজ রাতেই ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে হবে। এত দূরের পথ তাই
একা যাবে না বিধায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান করলো। আমি কখনো চট্টগ্রাম
যায়নি। তাছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখার খুব ইচ্ছা। এতদিন মনে মনে একজন
সঙ্গী খুঁজছিলাম। আজ যেহেতু পেয়ে গেলাম তাই আর এ সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক
হবে না। তবে শরীফকে আমি একটা শর্ত দিলাম। তাহলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যেতে
হবে। তা না হলে আমি যাব না। একথা বলার পর শরীফ রাজী হয়ে গেল।
কোন পূর্ব
পরিকল্পনা নেই। নেই কোন পূর্ব প্রস্তুতি। ঝটপট রাতের খাবার সেরে তৈরি হয়ে
নিলাম। ১১:৩০ মিনিটে দুজনে নরসিংদী রেলস্টেশনে আসলাম। ১২:০০টায় ট্রেন আসবে
তাই টিকেট কেটে নিলাম। ৯০ টাকা দিয়ে দুটো হাফ টিকেট কেটে নিলাম। ট্রেন আসল।
প্রচুর মানুষ। দুজনে ঠেলাঠেলি করে কোন মতে ট্রেনে উঠলাম। বসার কোন সিট
নেই। এমনকি দাঁড়িয়েও থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ভেতরে প্রচুর মানুষ। একজনের
দেহের সাথে আরেক জনের দেহ লেগে আছে। চাপাচাপি করে কোন মতে দাঁড়ালাম।
ইতোমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিল। অনেক মহিলা উঠেছে। ভীড়ের মধ্যে পড়ে অনেকে কান্না
কাটি শুরু করে দিয়েছে। ডানে বামে সব দিকে ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গেছে। আমার
সামনেই ছিল টয়লেট। দুর্গন্ধ নাকে আসছে। বমি আসার উপক্রম হলো। কি করি কোন
উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। যতই রাত গভীর হচ্ছে ততই চোখে ঘুম আসছে। ভাবলাম সামনে
কয়েকটা স্টেশনের ট্রেন থামলে হয়তো লোকজন কমে যাবে, কিন্তু না বরং লোকজন
আরো বাড়ল। খুব কষ্টে রাত পার করে দিলাম। আমার জীবনে সবচেয়ে কষ্টের রাত মনে
হয় এটি। ভোর চারটার পর থেকে আস্তে আস্তে মানুষ কমতে লাগল। তখন বসার জায়গা
পেলাম। জীবনের প্রথম দীর্ঘ রেল জার্নিতে খুব কষ্ট পেলাম। এমন যদি হবে জানলে
লোকাল ট্রেনে আসতাম না। আস্তে আস্তে আলো ফুটতে শুরু হলো। সীতাকুন্ড আসার
পর দেখতে পেলাম সারি সারি পাহাড়, আঁকা বাঁকা উঁচু নিচু রাস্তা ইত্যাদি। এসব
দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম লাগল।
২৩ তারিখ সকাল আটটায় ট্রেন চট্টগ্রাম এসে
পৌঁছল। ট্রেন থেকে নেমে ট্রেন যাত্রী ছাড়া তেমন কোন লোকজনকে দেখতে পেলাম
না। দুই একটা বাস এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে দেখলাম। সাথে কিছু রিক্সা ও আসা
যাওয়া করছে। ঢাকার মত এত লোকজন চট্টগ্রামে নেই। কারণ চট্টগ্রাম শহর ঢাকা
শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ নয়। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটি মসজিদে প্রবেশ করলাম।
এখানে দেখতে পেলাম ইমাম সাহেব ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে আরবি পড়াচ্ছেন। আমরা
হাত মুখ ধুয়ে মসজিদের বারান্দায় বসলাম। প্রচুর খিদে পেয়েছে। সাথে ছিল
ভনরুটি ও কলা। তা দুজনে মিলে খেয়ে নিলাম।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২
কি.মি.উত্তরে হাটহাজারী থানায় প্রকৃতির এক অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। ৮:৩০ মিনিটে আমরা সেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের
দিকে রওয়ানা হলাম। রাস্তায় বের হয়ে দাঁড়াতেই একটি বাস এসে আমাদের সামনে
দাঁড়ালো। বিশ্ববিদ্যালয় যাব শুনেই আমাদেরকে গাড়িতে টেনে তুললো। ১০:০০ টায়
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছলাম। শরীফের গ্রামের বাড়ির রেজাউল নামের একজন
সিনিয়র ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই কর্টেজে থাকে। আমরা প্রথমে ওনার এখানেই
উঠলাম। এখানে এসে প্রথমে আমার বাল্য বন্ধু আজিজকে ফোন করলাম। সে এই
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স এ পড়ছে। সে জানালো আজকের রাতটা হলে থাকতে সকালে
বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা করবে। আমরা পরে হাত মুখ ধুয়ে রেজাউল ভাইয়ের এখানেই
ঘুমিয়ে পড়লাম। ১ টায় ঘুম থেকে উঠে গোসল করি। পরে নামায পড়ে হলে গিয়ে
দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। বিকালে মনির, মামুন নামের দুজন বন্ধু জুটে গেল।
তারা আমাদেরবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি ঘুরিয়ে দেখায়। রাতের খাবারের পর
শাহ আমানত হলের ৩৩৯ নং কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ি।
২৪ তারিখ সকাল ১০ টায় শরীফ
পরীক্ষা দেয়ার জন্য বাণিজ্য অনুষদে চলে যায়। আমি বাণিজ্য অনুষদের পাশে শহীদ
মিনারে আজিজের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আজিজের সাথে আমার
দেখা হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আমার ক্লাস ফ্রেন্ড সুমন রায়ের সাথেও দেখা হলো।
তার বাসায় গেলাম। শরীফের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আজিজকে নিয়ে হলে চলে আসি।
এখানে দুপুরের খাবারের পর আজিজের সাথে তার বাসায় গেলাম। আজিজকে বললাম,
চট্টগ্রাম শহরটা ঘুরে দেখব। তুই সাথে থাকতে হবে। বিশেষ করে পতেঙ্গা সমুদ্র
সৈকতে যেতে হবে। তা না হলে চট্টগ্রাম আসাটা ব্যর্থ হবে। এত বড় শহর স্বল্প
সময়ে কি আর ঘুরে দেখা সম্ভব। তারপরও আজিজ আমাদেরকে নিয়ে বিকালে ঘুরতে বের
হলো। ৩:৩০ মিনিটে আমরা প্রথমে ফয়েজ লেকে আসলাম। এখানে বেশিক্ষণ দেড়ী করতে
পারলাম না। কারণ বেশী দেড়ী হলে সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাব
না। তাই তাড়াতাড়ি ফয়েজ লেক ত্যাগ করে সমুদ্র সৈকতের দিকে পা বাড়ালাম। বিকাল
৫:৩০ মিনিটে আমরা তিনজন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পতেঙ্গার ঐতিহাসিক
সমুদ্র সৈকতে এসে উপস্থিত হলাম।
[তিন বন্ধু]
চট্টগ্রাম
শহরে ঘুরতে গিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত না দেখলে পুরো ভ্রমনটাই বৃথা। ভারতের
মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া কর্ণফুলী নদী, পার্বত্য চট্টগ্রাম
এবং চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে
বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। এ নদীর মোহনায় বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র
বন্দর ‘চট্টগ্রাম বন্দর’। ঊৎস হতে এ নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার হলেও
কাপ্তাই বাঁধ থেকে মোহনা পর্যন্ত সাড়ে ৮৮ কিলোমিটার।
পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচলিত আছে আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জোছনা রাতে তারা দু’জন নৌ-ভ্রমণে বের হন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানের ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা এটি উদ্ধারে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান। তাকে আর খোঁজে পাওয়া যায়নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এ করুণ কাহিনী থেকে নদীটির নাম কর্ণফুলী নামকরণ হয়।
পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এ সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কি.মি.। এখানে আসলে দেখা যায় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেষ্টিত মেরিন একাডেমী। পতেঙ্গা যাওয়ার পথে অনেক বড় বড় কারখানা চোখে পড়বে। যাওয়ার পথের অনেকটা জুড়েই পাশে থাকবে কর্ণফুলি নদী। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণীঝড়ে এই সৈকতটি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে সমূদ্র সৈকতে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেড়ী বাঁধ দেয়া হয়েছে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার পথে নৌবাহিনীর গল্ফ ক্লাব পর্যটকদের মন কাড়ে খুব সহজেই। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এর অনেক জেটি এইখানে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের আরেকটি প্রাণকেন্দ্র। পর্যটকদের মিলনমেলা। ইতোমধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকাল হতে না হতেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। মনোমুগ্ধকর এক পর্যটন এলাকা মনোরম পরিবেশ এর কারণে যে কেউ বার বার ছুটে আসতে চায় এই সৈকতে। কর্ণফুলী নদীর মোহনা সংলগ্ন নেভাল একাডেমীর সম্মুখে বিকাল হতে না হতেই শুরু হয় জোড়া জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার আনাগোনা। পরিবেশটা এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে, কারো মনে যদি কোন দুশ্চিন্তা থাকে এবং সে যদি এই নেভাল একাডেমী কিংবা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ধারে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে তাহলে দুশ্চিন্তাগুলো মন থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যাবে নিমিষেই। এরূপ মনকাড়া সৌন্দর্য্য কার দেখতে ভাল লাগে বলুন। তাই এমন সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এত দূর থেকে তিনজন চলে আসলাম এখানে।
আনোয়ারা থানার পাশে আছে অসংখ্য সবুজ পাহাড়। বামদিকে নদীর ওপারে জলদিয়া সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় অসংখ্য জাহাজ। ভেড়ি বাঁধের ধারে সারি সারি ঝাউগাছ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য বসে থাকে। সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলায় নামার জন্য নেই কোন সুব্যবস্থা। ভেড়িবাঁধ থেকে নামার জন্য তৈরি করা হয়নি কোন সিঁড়ি। মাটির তৈরি বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য বাঁধের ভেতরে ফেলা হয়েছে কংক্রিট ব্লক ও পাথর। বিশাল আকারের এসব কংক্রিট ব্লক ও পাথরের উপর দিয়েই কষ্ট করে নামতে হয় পর্যটকদেরকে। তাতে অনেকে পা পিচলে পড়ে আহত হয়।
পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচলিত আছে আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জোছনা রাতে তারা দু’জন নৌ-ভ্রমণে বের হন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানের ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা এটি উদ্ধারে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান। তাকে আর খোঁজে পাওয়া যায়নি। রাজপুত্র রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এ করুণ কাহিনী থেকে নদীটির নাম কর্ণফুলী নামকরণ হয়।
পতেঙ্গা চট্টগ্রাম শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এ সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কি.মি.। এখানে আসলে দেখা যায় সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেষ্টিত মেরিন একাডেমী। পতেঙ্গা যাওয়ার পথে অনেক বড় বড় কারখানা চোখে পড়বে। যাওয়ার পথের অনেকটা জুড়েই পাশে থাকবে কর্ণফুলি নদী। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণীঝড়ে এই সৈকতটি ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে সমূদ্র সৈকতে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা বেড়ী বাঁধ দেয়া হয়েছে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর ঘাটি বিএনএস ঈসা খান পতেঙ্গার সন্নিকটে অবস্থিত। পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার পথে নৌবাহিনীর গল্ফ ক্লাব পর্যটকদের মন কাড়ে খুব সহজেই। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এর অনেক জেটি এইখানে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের আরেকটি প্রাণকেন্দ্র। পর্যটকদের মিলনমেলা। ইতোমধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকাল হতে না হতেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। মনোমুগ্ধকর এক পর্যটন এলাকা মনোরম পরিবেশ এর কারণে যে কেউ বার বার ছুটে আসতে চায় এই সৈকতে। কর্ণফুলী নদীর মোহনা সংলগ্ন নেভাল একাডেমীর সম্মুখে বিকাল হতে না হতেই শুরু হয় জোড়া জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার আনাগোনা। পরিবেশটা এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে, কারো মনে যদি কোন দুশ্চিন্তা থাকে এবং সে যদি এই নেভাল একাডেমী কিংবা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ধারে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে তাহলে দুশ্চিন্তাগুলো মন থেকে কোথায় যেন হারিয়ে যাবে নিমিষেই। এরূপ মনকাড়া সৌন্দর্য্য কার দেখতে ভাল লাগে বলুন। তাই এমন সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এত দূর থেকে তিনজন চলে আসলাম এখানে।
আনোয়ারা থানার পাশে আছে অসংখ্য সবুজ পাহাড়। বামদিকে নদীর ওপারে জলদিয়া সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় অসংখ্য জাহাজ। ভেড়ি বাঁধের ধারে সারি সারি ঝাউগাছ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য বসে থাকে। সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলায় নামার জন্য নেই কোন সুব্যবস্থা। ভেড়িবাঁধ থেকে নামার জন্য তৈরি করা হয়নি কোন সিঁড়ি। মাটির তৈরি বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য বাঁধের ভেতরে ফেলা হয়েছে কংক্রিট ব্লক ও পাথর। বিশাল আকারের এসব কংক্রিট ব্লক ও পাথরের উপর দিয়েই কষ্ট করে নামতে হয় পর্যটকদেরকে। তাতে অনেকে পা পিচলে পড়ে আহত হয়।
[সূর্যকে হাতের মুঠোয় নেয়ার চেষ্টা।]
সাগর
দেখে আমরা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। অন্যান্য পর্যটকদের সাথে আমরাও
কংক্রিট ব্লক ও পাথরের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে নেমে পড়লাম। তখন আমার খুব ভয়
লাগছিল না জানি পড়ে যায় কিনা। তারপর প্যান্ট উচিয়ে পানিতে নেমে পড়লাম। আমরা
ধীরে ধীরে পানির উপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আর বড় বড় ঢেউ এসে আমাদেরকে ভিজিয়ে
দিচ্ছে। লোনা পানিতে দাপাদাপি আর ঢেউয়ের তালে তালে নাচানাচি করার মজাই
আলাদা। এখানে ভেড়িবাঁধ ঘেষে যে খালি জায়গা রয়েছে তাতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য
দোকানপাট। ফলে জোয়ারের সময় পানি যখন সংক্রিট ও পাথরে চলে আসে তখন পর্যটকদের
হাঁটার জায়গা থাকে না। তখন বাধ্য হয়েই তাদেরকে ভেড়িবাঁেধর উপরে চলে আসতে
হয়। এখানে বসার জন্য আমব্রেলা, ফিটকটস ও চেয়ার নেই। তাই পর্যটকরা বসার কোন
জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে পাথরকে বসার জন্য বেছে নেয়। আর এই পাথরে বসেই দেখে
সমুদ্রের উতাল পাতাল ঢেউ। সমুদ্রের মমতাময়ী আহ্বানে আবার লুকিয়ে থাকে
রাক্ষুসী থাবা। মুহূর্তের মধ্যে প্রচন্ড ঢেউ এসে নিয়ে যেতে পারে সমুদ্রের
মাঝে। আর তখন রাক্ষুসী সমুদ্র থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যেমনি
করে গত ১৩ মার্চ ২০০৪ সানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ১১ জন
ছাত্র/ছাত্রী সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভাটার টানে
মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি। কবি যতবার চট্টগ্রাম এসছেন ততবার তিনি এই সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। এখানে বসেই তিনি রচনা করেছেন অমর কাব্য গ্রন্থ ‘সিন্ধু হিন্দোল’। এখানে সমুদ্র সৈকতের ভ্রমণের দৃশ্য ধরে রাখার জন্য রয়েছে মোবাইল স্টুডিও। ১২টি স্টুডিওর ১২ জন মোবাইল ক্যামেরাম্যান সারাদিন ঘুরে বেড়ায় পতেঙ্গায়। বাঁশের মাথায় স্টুডিওর নাম লেখা ব্যানার উড়িয়ে বসে থাকে পাথরের উপর। আমরা যেহেতু পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া সমুদ্র সৈকতে এসেছি তাই কোন ক্যামেরা আনিনি। তাই আমরা মোবাইল স্টুডিও থেকে কয়েকটি ছবি তুলি। এই সব মোবাইল স্টুডিওর লোকেরা পর্যটকদের নাম ঠিকানা লিখে রাখেন। পরবর্তীতে সেই ছবি ওয়াশ করে ডাকে পাঠিয়ে দেন। এখানে আছে স্পিডবোট। ১০ টাকার বিনিময়ে সমুদ্র ঘুরিয়ে আনা হয় পর্যটকদেরকে। আরো আছে কয়েকটি ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমুদ্র ভ্রমণ করা যায়। বিশেষ করে শিশুরা ঘোড়ায় চড়তে ও ছবি তুলতে খুব মজা পায়।
এদিকে সমুদ্র সৈকত দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সূযাস্তের দৃশ্য উপভোগ করলাম। সূর্যকে সামনে নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবিও তুললাম। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার পর আমরা চলে এলাম আপন ঠিকানায়।
তথ্যসূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি। কবি যতবার চট্টগ্রাম এসছেন ততবার তিনি এই সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। এখানে বসেই তিনি রচনা করেছেন অমর কাব্য গ্রন্থ ‘সিন্ধু হিন্দোল’। এখানে সমুদ্র সৈকতের ভ্রমণের দৃশ্য ধরে রাখার জন্য রয়েছে মোবাইল স্টুডিও। ১২টি স্টুডিওর ১২ জন মোবাইল ক্যামেরাম্যান সারাদিন ঘুরে বেড়ায় পতেঙ্গায়। বাঁশের মাথায় স্টুডিওর নাম লেখা ব্যানার উড়িয়ে বসে থাকে পাথরের উপর। আমরা যেহেতু পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া সমুদ্র সৈকতে এসেছি তাই কোন ক্যামেরা আনিনি। তাই আমরা মোবাইল স্টুডিও থেকে কয়েকটি ছবি তুলি। এই সব মোবাইল স্টুডিওর লোকেরা পর্যটকদের নাম ঠিকানা লিখে রাখেন। পরবর্তীতে সেই ছবি ওয়াশ করে ডাকে পাঠিয়ে দেন। এখানে আছে স্পিডবোট। ১০ টাকার বিনিময়ে সমুদ্র ঘুরিয়ে আনা হয় পর্যটকদেরকে। আরো আছে কয়েকটি ঘোড়া। ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমুদ্র ভ্রমণ করা যায়। বিশেষ করে শিশুরা ঘোড়ায় চড়তে ও ছবি তুলতে খুব মজা পায়।
এদিকে সমুদ্র সৈকত দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সূযাস্তের দৃশ্য উপভোগ করলাম। সূর্যকে সামনে নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবিও তুললাম। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার পর আমরা চলে এলাম আপন ঠিকানায়।
তথ্যসূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট
রচনাকাল: বধুবার ১৯ জানুয়ারি ২০০৫ খ্রি:
নক্ষত্রব্লগ কর্তৃক সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতা-২০১৫ এর পুরস্কার প্রাপ্ত
1 টি মন্তব্য:
চাইলেই সব কিছু আপনার আপন হয় না
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন