বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩

পুলিশ আমাদের বন্ধু না শত্রু


দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক ধরনের থাকলেও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কথাই সবার আগে আসে। কারণ তারা একই সাথে নিয়মিত বাহিনী হিসেবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কাজে নিয়োজিত আছে। এক সময় মানুষ পুলিশকে খুব ভয় পেতো এবং শ্রদ্ধা করতো। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম গ্রামে পুলিশ আসলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভয়ে কেঁদে ফেলত এবং পালানোর চেষ্টা করত। আর সন্ত্রাসীরা তখন পালিয়ে যেত। কিন্তু এখন
মানুষ পুলিশকে ভয় পায় না। সন্ত্রাসীরা রাজপথে প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ হত্যো করে পুলিশ তাকিয়ে দেখে। বাচ্চা ছেলে মেয়েরা পুলিশ দেখলে কাঁদেও না বা ভয়ে পালায় না। বরং তাদের পিছু নেই। কারণ যুগে যুগে পুলিশের সাথে সাধারণ জনগণের সর্ম্পক অবনতি হচ্ছে। পুলিশ এখন যম হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। তাদের বুটের তলায় এখন গণতন্ত্র পিষ্ট হয়। পিতৃতুল্য শিক্ষকদেরকে তারা পিপার স্পে নিক্ষেপ করে আহত করে। দুজন শিক্ষক ইতিমধ্যে মারাও গেছেন। পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু কিন্তু তারা এখন জনগণের বন্ধু না হয়ে শত্রুতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছের বন্ধুত্বের কোন আচরণ পায় না। তারা এখন নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। এমন অভিযোগও আছে তারা মেয়েদেরকে ধরে এনে ধর্ষণ করছে বা তাদের হেফাজতে থাকালীন অবস্থায় ধর্ষিত হচ্ছে। বিরুধীদলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা বাঁধা দিচ্ছে। ফলে বাধে সংঘর্ষ। এর দায় কখনো পুলিশ নিতে চয় না। নিরূপায় হয়ে মানুষ যখন পুলিশের নিকট যায় তখন ঘুষ না দিলে কোন কাজই করতে চায় না তারা। পাসপোর্ট ভেরিভেশনের নামে পুলিশ সাধারণ জনগণের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ভেরিভেশনে স্বাক্ষর করে। রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে ডাইভারদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া পুলিশের একটি রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি যুদ্ধঅপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে শিবিরের কিছুদিন পর পর সংঘর্ষ হচ্ছে। আহত হচ্ছে পুলিশ। কিন্তু কেন? পুলিশ ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে শিবির দেখলেই গুলি করবে। পুলিশ কিভাবে বুঝবে যে ছেলেটা শিবির? কারো গায়ে কি শিবির লেখা থাকবে? নাকি শিবির নিধনের নামে বিশ্বজিতের মতো সাধারণ জনগণকে পুলিশের বুলেটের নিচে পড়তে হবে? এটা কিসের আলামত দেখতে পাচ্ছি। একাত্তরের সেই ঘটনা কি পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। সেদিন পাকিস্তানী পুলিশ এদেশের জনগণের উপর গুলি চালিয়েছিল।
২০১১ সালের জুলাই বিরোধী দলের হরতালে জয়নুল আবদিন ফারুককে সংসদ ভবনের সামনে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করে আহত করেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের তখনকার এডিসি হারুন অর রশিদ। এই পুলিশ কর্মকর্তা ফারুককে পিটিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দেন এবং  গালাগালি করেন। এর কিছুদিন পর তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। জয়নুল আবদিন ফারুকের উপর হামলাই শুধু নয়, সাম্প্রতিককালে পুরান ঢাকায় তরুণ দরজি বিশ্বজি হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও হারুন অর রশীদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। রাজপথে প্রকাশ্যে কতিপয় সন্ত্রাসী বিশ্বজিতকে কুপিয়ে যখন হত্যা করে তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডিসি হারুন পুলিশের কিছু সদস্য।
সম্প্রতি বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে রাজপথে পেটানোর কারণে বর্তমান পুলিশের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদকে 'রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক' দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তাঁর বক্তব জাতিকে হতাশ করেছে এবং এই পুরষ্কার পুলিশের ধরনের নির্যাতনকে সাহ দেয়া হয়েছে। 
পুলিশের আচরণ ও ভূমিকা নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে। যুগে যুগে পুলিশের পোশাক পাল্টিয়েছে কিন্তু স্বভাব পাল্টাতে পারেনি। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু পুলিশের কোন পরিবর্তন হয় না। আজকে যারা সরকারে আছে তাঁদেরকে এক সময় রাজপথে পিঠিয়েছে পুলিশ। এখন আবার যারা বিরোধীদলে আছে তাঁদেরকে পিঠাচ্ছে। আবার আজকের সরকার যখন বিরোধী দলে যাবে তখন তাঁদেরকে পিঠাবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে পুলিশের শাসন। আজ পুলিশ অপরাধ করলে তার বিচার হয় না বরং উল্টো রাষ্ট্র তাকে পদক দিয়ে ভূষিত করে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এদেশ পরিচালনা করবে পুলিশ!

রচনাকালঃ ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি:

কোন মন্তব্য নেই: