ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো আমাদের দেশে উম্মুক্ত করে দেয়ায় দর্শক এখন ভারত মুখী হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভারতের সংস্কৃতি গ্রাস করে ফেলছে। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ভারতের চ্যানেলগুলো দেখা যাচ্ছে। বাংলা হিন্দি উভয় চ্যানেলই তারা দেখছে। চ্যানেলগুলোর মধ্যে স্টার জলসা, জি বাংলা, জি বাংলা
সিনেমা ইত্যাদি। আমাদের দেশের বাংলা চ্যানেলগুলো তারা দেখছে না। বিশেষ করে শহরের গৃহবধূ ও তরুণ-তরুণীরা ভারতের চ্যানেলগুলো বেশী দেখছে। এসব চ্যানেলে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত একই নাটক ধারাবাহিকভাবে দেখায়। এসব চ্যানেল দেখে আমাদের দেশের নারীরা কি শিখছে? কিভাবে অন্যের সংসারে আগুন লাগানো যায়, কিভাবে পরকীয়া প্রেম করা যায়, কিভাবে সম্পত্তি নিয়ে ষড়ষন্ত্র করা যায়, কিভাবে ভালো মানুষ সেজে অন্যের বুকে ছুরি যায় ইত্যাদি শিখছে।
ভালো মানুষ সেজে ছুরি মারার প্রবণতা শিখার একটি কৌশল নিয়ে একটি নাটকের অভিজ্ঞা এখানে তুলে ধরতে চাই। আমি বাসায় টিভি রাখছি মূলত খবর দেখার জন্য। সারাদিন কর্মস্থলে থাকি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। বাসায় গিয়ে যখন খবর দেখার জন্য রিমোট হাতে নেই তখনই আমার স্ত্রী রিমোট কেড়ে নিয়ে ভারতীয় চ্যানেল দেখা শুরু করে। বলে যে, তুমি একটু পরে খবর দেখ আমি নাটকটা দেখে নেই। কারণ হিসেবে জানতে পারলাম প্রতিদিন সে সন্ধ্যার পরে বেশ কিছু ভারতীয় নাটক দেখে। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর সাথে মাঝে মাঝে একটু একটু করে নাটক শেয়ার করতে লাগলাম। তারমধ্যে সন্ধ্যা সাতটায় জি বাংলা চ্যানেলে প্রচার করা হয় রাশি তার নাম নামে একটি সিরিয়াল। সেই সিরিয়ালটির বেশ কিছু পর্ব দেখার অভিজ্ঞা হয়েছে আমার। নাটকটি এ পর্যন্ত দেখে যা অভিজ্ঞতা হলো তার সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি। রাশি নামে একজন বুদ্ধিমতি প্রতিবাদী নারী বিক্রমপুর নামক গ্রামে বাস করে। শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অপলা রায়। অপলা রায়ের তার বড় বোনের স্বামীর সম্পদের প্রতি লোভ পড়ে এবং এক পর্যায়ে বোনকে মানসিকভাবে পাগল বানিয়ে বোনের স্বামীকে বিয়ে করে। বোনের এক ছেলেকে নিয়ে সংসার পাতে। পরে তার সংসারে দুটি সন্তান হয়। সন্তান হওয়ার পর থেকে তার স্বামীকেও পাগল বানিয়ে এক হোটেলে বন্ধি করে রাখে সম্পদ দখলের জন্য। বাড়ির সবাইকে বলে যে, তার স্বামী মারা গেছে। তিন সন্তান নিয়ে বর্তমানে তার সংসার। অপলা রায়ের ছেলের সাথে রাশির পরিচয় হয়, তারপর বিয়ে, কিন্তু এ ঘটনা অপলা রায় মেনে নিতে পারেনি। রাশিকে বাড়ী থেকে তাড়ানোর জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করলো অপলা রায় কিন্তু রাশির বুদ্ধির কাছে অপলা রায় হার মানল। এবার অপলা রায় রাশিকে বোন ও স্বামীর মতো পাগল বানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এখানেও অপলা রায় রাশির কাছে হার মানে। বরং অপলা রায়ের সকল ষড়যন্ত্র রাশি জেনে যায়। অপলা রায়ের স্বামী অর্থ্যাৎ রাশির শ্বশুর যে জীবিত আছে এ খবর রাশি জেনে যায়। এবার অপলা রায় রাশিকে মারার জন্য ফন্দি করে। এখন থেকে বাড়ির সবার সাথে ভালো মানুষ সাজে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, তিনি রাশিকে মারতে যাচ্ছে। এক সময় তার ছেলে উজ্জল ও রাশির বিয়ে মেনে নেয় এবং হানিমুনে পাঠায়। সেখানে তার লোক পাঠিয়ে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাশিকে। তারপর রাশির কি হবে আর অপলা রায় নতুন কি চাল চালবে তা আমার জানা নেই। নাটক দেখলে বলা যাবে। এখন প্রশ্ন হলো এ নাটকটি দেখে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা কি শিখছে। কিভাবে স্বামীকে ঠকানো যায়, কিভাবে পুত্রবধূকে মারা যায়। কিভাবে বোনকে ঠকানো যায়। সর্বপরি কিভাবে ভালো মানুষ সেজে তলে তলে ছুরি মারা যায়।
এছাড়াও আরো অন্যান্য চ্যানেলে প্রায়ই একই ধরনের নাটক প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিটি নাটকই কয়েকটি পরিবার নিয়ে রচিত হয় প্রতিটি পরিবারে এক বা একাধিক দুষ্ঠু প্রকৃতির মহিলা চরিত্র থাকে যারা সবসময় পরিবার ভাঙ্গনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যা আমাদের সমাজে প্রভাব পড়ছে।
ভারতের নাটকগুলো থেকে আমাদের নাটকগুলো বাস্তব সম্মত। তারা নাটকে দেখায় ঘুমাতে যাওয়ার সময়, খাওয়ার সময় অর্থ্যাৎ সর্বাবস্থায় তারা দামী শাড়ী গয়না পরে থাকে। তাদের নাটকের প্রতিটা চরিত্রের বেশভূশা সর্বাস্থায় একই থাকে। চমকপদ কিছু দৃশ্য থাকে। কিছু নাটকে আবার অশ্লীল দৃশ্যও থাকে। পোশাক আশাকে তেমন শালীনতা নেই। একই দৃশ্য কল্পনার মাধ্যমে বার বার দেখানো হয়। তারপরও এসব নাটক আমরা সপরিবারে দেখছি। নাটককে বলা হয় সমাজের দর্পণ। অথচ ভারতীয় এসব নাটকের মধ্যে সমাজের কোন চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ আমাদের দেশের নাটকগুলির মধ্যে বাস্তবতা থাকে। কিন্তু এখগুলো আমরা দেখছি না।
ভারতের নাটকগুলো থেকে আমাদের নাটকগুলো বাস্তব সম্মত। তারা নাটকে দেখায় ঘুমাতে যাওয়ার সময়, খাওয়ার সময় অর্থ্যাৎ সর্বাবস্থায় তারা দামী শাড়ী গয়না পরে থাকে। তাদের নাটকের প্রতিটা চরিত্রের বেশভূশা সর্বাস্থায় একই থাকে। চমকপদ কিছু দৃশ্য থাকে। কিছু নাটকে আবার অশ্লীল দৃশ্যও থাকে। পোশাক আশাকে তেমন শালীনতা নেই। একই দৃশ্য কল্পনার মাধ্যমে বার বার দেখানো হয়। তারপরও এসব নাটক আমরা সপরিবারে দেখছি। নাটককে বলা হয় সমাজের দর্পণ। অথচ ভারতীয় এসব নাটকের মধ্যে সমাজের কোন চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ আমাদের দেশের নাটকগুলির মধ্যে বাস্তবতা থাকে। কিন্তু এখগুলো আমরা দেখছি না।
এখন কথা হচ্ছে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? আমি আপনি ইচ্ছে করলেই এইসব চ্যানেল থেকে সরে আসতে পারব না। কারণ রিমোট টিপলে চ্যানেল সামনে আসে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ঠিকিয়ে রাখার জন্য সরকারীভাবে এসব চ্যানেলের অনুমতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের চ্যানেল যদি ভারত না দেখায় তাহলে আমরা কেন তাদের চ্যানেল দেখব? তাদের সংস্কৃতি গলদকরণ করব। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে জানব, বুঝব। যেসব চ্যানেল আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিল নয় সেসব চ্যানেল বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান করছি। তা না হলে আমাদের দেশে নিজস্ব কোন সংস্কৃতি থাকবে না।
রচনাকালঃ ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি:
রচনাকালঃ ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন