কেন যেন
আজ সাকিরে মনটা ভাল লাগছে না। এশার নামায আদায় করে ঘরে এসে বসলো। ইচ্ছে হলো দেয়ালে
ঝুলানো ক্যালেন্ডারটির প্রতি চোখ বুলাতে। আর মাত্র পনের দিন বাকী ঈদের। অনেকদিন
যাবত বাবাকে কোন চিঠি লেখা হয়নি। তাই মনে মনে ভাবছে সে, ঈদ তো প্রায় নিকটবর্তী।
এবারের ঈদে বাড়িতে যেতে হবে। কাজেই বাবাকে একখানা চিঠি লেখার প্রয়োজন। কলম ও প্যাড
নিয়ে বসে পড়লো সে। চিঠি লিখতে লিথতে রাত
১০টা বেজে গেছে তার কোন খেয়াল নেই। কাজেই আর দেড়ী করা যাচ্ছে না, এখনি শুয়ে পড়তে হবে। কারণ ভোর রাতে উঠে পড়তে হবে। সামনে তার দাখিল পরীক্ষা। সে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করছে। ঈদের পর পরই তার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। পরদিন সকাল বেলা তাড়াতাড়ি চিঠিটা পোস্ট করে দিল।
১০টা বেজে গেছে তার কোন খেয়াল নেই। কাজেই আর দেড়ী করা যাচ্ছে না, এখনি শুয়ে পড়তে হবে। কারণ ভোর রাতে উঠে পড়তে হবে। সামনে তার দাখিল পরীক্ষা। সে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করছে। ঈদের পর পরই তার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। পরদিন সকাল বেলা তাড়াতাড়ি চিঠিটা পোস্ট করে দিল।
দিন যায়
রাত আসে এভাবে কেটে গেল ১০দিন।
আজ ডাক
পিয়ন এসে আঙিনায় পা রাখতেই তাছলিমা এগিয়ে আসলো। পিয়ন মুচকি হেসে বললো, এই নাও
তোমার ভাইয়ার চিঠি। চিঠি পেয়ে তাছলিমা আনন্দে নেচে উঠলো। দ্রুত মা-বাবার কাছে
আসলো। মা, ভাইয়ার চিঠি এসেছে।
মা
বললেন, কখন এলরে?
এইতো মা
এখন পিয়ন চাচা দিয়ে গেল।
মা
রহিমা বেগম দেখি বলে চিঠিটা হাতে নিলেন। আনন্দে চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু খসে পড়লো।
বাবা
কবির সাহেব বললেন পড়তো দেখি কি লিখেছে?
তাছলিমা
মার হাত থেকে খামটি নিয়ে ছিঁড়ে পড়তে লাগলো।
শ্রদ্বেয়
আব্বাজান,
পত্রের
শুরুতে আপনার প্রতি রইল আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম ও আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ। আশা রাখি
মহান প্রভুর অশেষ কৃপায় মা ও বোনকে নিয়ে ভাল আছেন। ভাল থাকাই আমার কামনা। আমিও
আপনাদের দোয়ায় বন্ধুদেরকে নিয়ে ভাল আছি।
পরসংবাদ
এই যে, আব্বা পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে আমাদের
মাদ্রাসা ১০দিন বন্ধ থাকবে। তাই আমি এবারের ঈদ বাড়িতে এসে করব। ঈদের দুদিন পূর্বে
বাড়িতে আসব। আমার জন্য কোন চিন্তা করবেন না। আমার লেখাপড়া ভালই চলছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষার
সিলেবাচ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। নামাযান্তে অন্তর থেকে আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে
আমি পরীক্ষায় কামিয়াবী হতে পারি। মাকে আমার সালাম দেবেন। বোনকে আমার স্নেহ ও
ভালোবাসা দিবেন।
আর
বিশেষ কি লিখব। পরিশেষে আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো ইতি টানলাম।
ইতি
আপনার
স্নেহের ছেলে
সাকিব
চিঠিটা
পড়া শেষ হতেই মা-বাবার চোখে মুখে যেন একটা খুশীর ছাপ ফুটে উঠল। আনন্দ ভরা কণ্ঠে
কবির সাহেব স্ত্রী রহিমাকে বললেন, ঈদ কি বারে হবে?
শুক্রবারে।
তাহলে
আর কদিন বাকী?
এতো
পাঁচদিন।
তাহলেতো
ঈদ প্রায় নিকটবর্তীই?
হ্যাঁ।
আর
মাত্র দু’দিন বাকী ঈদের। আজই সাকিব বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হবে। ইতোমধ্যে
মাদ্রাসা ছুটি হয়ে গেছে। ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে এই
বিশাল ঢাকা শহর থেকে অধিকাংশ লোকই গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যায়। প্রতিটা
চাকুরীজীবিই তার মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে একত্রে ঈদ করতে চায়। ঘরমুখী যাত্রীরা
ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য ইতোমধ্যে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
আজ সকাল
১০টায় সাকিব বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। কাজেই আর বিলম্ব না করে সে রিক্সা নিয়ে
রওয়ানা হয়ে গেল। সে দুইদিন পূর্বেই টিকেট কেটে রেখেছে। কারণ ঈদে যেই ভীড় তাছাড়া আর
কোন উপায় নেই। ঈদ উপলক্ষে ভাড়া দ্বিগুণ। মনে হয় তারা দেশটাকে মগের মুল্লুক পেয়েছে।
সাকিব বাসস্টেশন এসে দেখতে পেল প্রচন্ড ভীড়। পিঁপড়া হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই।
নারী-পুরুষ একত্রে লেপটা লেপটি করে গাড়িতে উঠছে। কেউ কেউ বা বাদুরের মতো গাড়ীতে
ঝুলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে যে সত্যিই ষোল কোটি তা ঈদ না এলে পুরোপুরি বুঝা যায় না।
সাকিবের
মনটা ছটফট করতে লাগল কখন বাড়ীতে ফিরবে। সে গাড়িতে উঠার কিছুক্ষণ পর সাকিব গাড়ীতে
কান্নার শব্দ পেল। সাকিব সে দিকে খেয়াল করতেই দেখতে পেল কয়েকজন জিন্স প্যান্ট
পরিহিত যুবক। দেখতে কলেজ, ভার্সিটির ছাত্রদের মতো। তাদের হাতে অস্ত্র! তারা একজন
ভদ্রলোককে লক্ষ্য করে তারা টিকেট কেটে এ বাসে উঠেছে। যুবকগুলোর উদ্দেশ্য ঐ
ভদ্রলোককে হত্যা করে তার টাকা-পয়সা সব লুট করে নিয়ে যাওয়া।
একজন
ডাকাত বলে উঠলো, সাবধান কেউ চিৎকার করবে না। তাহলে সবাইকে খতম করে ফেলব।
ডাকাতদের
কথা শুনে ভয়ে সাকিবের শরীরের লোম কাটা দিয়ে উঠল। আর মনে মনে সে আল্লাহর নাম স্মরণ
করল। লোকটির হাতে ছিল একটি ব্রিফকেস। ডাকাতদের মধ্য হতে একজন পিস্তল নিয়ে লোকটির
নিকট গেল। পরে তার কাছে টাকার ব্রিফকেসটা চাইল। ভদ্রলোকটি ব্রিফকেসটি দিতে চাইল
না। এমন অবস্থায় অন্য একজন ডাকাত লোকটির পেটের মধ্যে চাকু ঢুকিয়ে দিল। ভদ্রলোকটি
তখন একটি চিৎকার
দিয়ে সাথে সাথে মারা যায়। রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল গাড়ি। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে। সমস্ত
গাড়ি নিরব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যাত্রীদের কারো মুখে কোন শব্দ নেই। মুহূর্তে শোকের
ছায়া পড়ে গেল গাড়িতে।
একজন যুবক
ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে বললো, সাবধান কোথাও গাড়ী থামানোর চেষ্টা করবে না। তাহলে
বুঝতে পারবি পরিণাম কি হয়। তারপর কয়েকজন ডাকাত মিলে ভদ্রলোকের মৃতদেহটি টেনে হেচরে
বের করে চলতি গাড়ি থেকে ফেলে দেয়। গাড়ি অল্প কিছুদুর যাওয়ার পর যুবকগুলো
ড্রাইভারকে গাড়ি থামানোর কথা বলে। ড্রাইভার গাড়ি থামানোর পর ডাকাতগুলো ব্রিফকেস
নিয়ে নেমে পড়ল। সাথে সাথে যাত্রীদের কোলাহল বেড়ে গেল। সবাই লোকটির জন্য আপসোস করতে
লাগল।
আজ ছেলে
বাড়িতে আসবে তাই রহিমা বেগমের মনটা খুশী লাগছে। কখন ছেলে বাড়ি ফিরবে সেই প্রহর
গুনছে পাথের পানে তাকিয়ে। কবির হোসেনও ছেলের প্রতিক্ষায় বসে আছেন।
দুপুর
গড়িয়ে বিকেল হল। আস্তে আস্তে সূর্যের ত্যাজ কমে এলো। বিকেলের আগমন বার্তা জানিয়ে
দিল মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন আযান দিয়ে।
সাকিব
বাড়িতে এসে ‘মা’ ডাক দিতেই রহিমা বেগম বললেন, কিরে বাবা কেমন আছিস?
সাকিব
মুখ বিবর্ণ করে জবাব দিল বেশী ভাল না।
হ্যাঁ,
তাইতো তোর মুখটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। কি হয়েছে তোর?
ইতিমধ্যে
সাকিবের আগমন বার্তা শুনে তাছলিমা ও কবির হোসেন আসলেন। সাকিব তার বাবাকে লক্ষ্য
করে বললো, আব্বা আজ আসার পথে আমার চোখের সামনে এক ভদ্রলোকে খুন করতে দেখলাম।
একথা
শুনার সাথে সাথে কবির হোসেনের হৃদয়টা ছ্যাৎ করে উঠল।
রহিমা বেগম
চিৎকার দিয়ে
বললেন, কি বলিস বাবা! তোর কিছু হয়নিতো?
না মা,
আমার কিছু হয়নি। আমাদের চোখের সামনে এ সমস্ত ডাকাতরা বেড়ে উঠছে অথচ আমাদের দেশের
সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
মা
বললেন, চল ঘরে আয়। হাত মুথ ধুয়ে খেয়ে নে।
ছেলে
সুস্থ্য দেহ নিয়ে বাড়িতে এসে ফিরছে বিধায় রহিমা বেগম আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়
করে নিলেন।
আজ সেই
প্রতিক্ষিত ঈদ। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হচ্ছে ঈদুল আযহা। চারদিকে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল। সাজ সাজ রব।
চারপাশে শিশু-কিশোরদের কোলাহল চলছে। বাড়ি বাড়ি ফিরনি সেমাই খাওয়ার প্রতিযোগিতা
চলছে। সবার আনন্দে কবির হোসেন পরিবারও আজ আনন্দিত। আতর গোলাপ দিয়ে নানা রঙ বেরঙের পোশাক
পড়ে ছেলে-মেয়েরা ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে। পায়ে হেঁটে ঈদগাহের দিকে যাচ্ছে সাকিব। যথাসময়ে
ঈদের নামাজ আদায় করলো। ঈদগাহে অনেক বাল্য বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। নামায শেষে
তাদের সাখে কোলাকুলি করল। পরে তার বাবা ও বন্ধুদেরকে নিয়ে দাদা-দাদীর কবর জিয়ারত
করে বাড়ি ফিরল।
রচনাকাল-২৮
জুলাই ২০০০ খ্রিস্টাব্দ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন