সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৪

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অতীত ও বর্তমান

১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকচক্রের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমি আজকের বাংলাদেশ। অনেক রক্ত আর ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের ফলে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। গণতন্ত্রকে রক্ষা করাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণতন্ত্রের সেই নির্ভেজাল রূপ আয়ু পেল না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এক দল সুবিধাবাদী লোক তখন মরিয়া হয়ে উঠে। আর
তখন গণতন্ত্রের সলিল সমাধী রচনা করে তৈরি হয় বাকশাল। জনগণের ইচ্ছার মৃত্যু ঘটিয়ে এক শ্রেণীর কুচক্রী হত্যার রাজনীতি বেছে নেয়। আর তখন একমাত্র শক্তি হয়ে দাঁড়ায় অস্ত্র। জাতি হয়ে পড়ে অসহায়, দুর্বল। গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা চালু থাকে ঠিকই কিন্তু জনগণ ভোট দেয়ার অধিকার পুরোপুরি পায়নি। জনগণের পরিবর্তে ভাড়া করা লোক দিয়ে ভোট প্রদান করে গণতন্ত্রের সর্বনাশ করে। সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসিত হয় বাংলার জমিনে। আর এভাবে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। ফলে মানুষ হারায় তার অধিকার। তখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভোট গ্রহণ করা হয় যা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে চলতে চলতে ক্ষমতায় একের পর এক চলে আসে স্বৈরাচার। দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রামের পর অবশেষে এদেশের গণতন্ত্র পূর্ণজীবিত হয় ১৯৯১ সালে। বাংলার মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে ১৯৯১ সালে নির্বাচনে আবার সে অধিকার ফিরে আসে। আর তখন মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে গণতন্ত্রের পুর্ণজাগরণ ঘটিয়েছিল। ১৯৯১ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের সরকার। তার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ও চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু একদল লোক আবার এ গণতন্ত্রকে মারার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা চায়না দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। ফিরে আসুক জনগণের অধিকার। তারা শুধু ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে সরকারকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হঠানোর চেষ্টায় লিপ্ত। অবশেষে তারা সফল হয়। দেশে চলে আসে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকার। জনগণের চাপে এই সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে আবার গণতন্ত্রকে গলাটিপে ধরে। একপর্যায়ে তারা সফলও হয়। গত ৫ জানুয়ারি আবার গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়। জনগণ বঞ্চিত হয় ভোটাধিকার থেকে।
আমাদের দেশ অনুন্নত দেশ। এদেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে হলে সকলের সদিচ্ছা ও সক্রিয় কর্ম প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে তা কোনদিনই সম্ভব নয়। তাই দেশের মঙ্গলের জন্য গণতন্ত্রকে মর্যাদা দেয়া এখনই দরকার। অশুভ শক্তির কালো থাবা থেকে এদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বার বার রক্তাক্ত হয়েছে। তাই আর নয় রক্তাক্ত। আমরা চাই গণতন্ত্রের অধিকার নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকুক যুগ যুগ ধরে।
লেখক- কলামিষ্ট
২০/০১/২০১৪খ্রি: