দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন পুরো বাংলাদেশ এক অঘোষিত কারাগারে
রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের আনাচে কানাচে গ্রেফতার হচ্ছে অসংখ্য সাধারণ
মানুষ ও ভিন্নমতপোষনকারী দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী। গ্রেফতার থেকে রেহায় পায়নি সংসদের
প্রধান বিরোদলীয় নেতাকর্মী, ১৮ দলের অন্যতম শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, পত্রিকার
সম্পাদক, আলেম ওলামা, আইনজীবী ও নারীরা। তাদের মধ্যে ‘আমার
দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আটক আছেন। হেফাজতের অসংখ্য নেতা
কারাগারে আটক আছেন।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতারকৃত বিএনপির শীর্ষস্থানীয়
উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে যারা বর্তমানে কারাগারে আছেন তারা হলেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির সাংসদ নাজিম
উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, বিএনপির
ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের
উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সাংসদ সরদার সাখাওয়াত
হোসেন কবুল, সাংসদ শাম্মী আখতার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, স্বেচ্ছাসেবক
দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক
শফিউল বারী, ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বজলুর করিমকে,
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ব্যবসায়ী নেতা আবদুল
আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিদ আউয়াল, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা,
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ
নাছির উদ্দিন, রওশন আরা ফরিদ, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান
সালাউদ্দিন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ,
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, স্থায়ী
কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, বিএনপির চেয়ারপার্সনের
উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের
বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। এছাড়াও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের
ভূঁইয়া, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদসহ নাম না
জানা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে আটক আছেন। পূর্ব
থেকেই যারা বিএনপি নেতাদের মধ্যে কারাগারে আছেন তারা হলেন- বিএনপির নেতা
মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান
বাবর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী,
বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম প্রমুখ।
উপরোক্ত নেতারা কেউ সন্ত্রাসী নয়। শুধু মাত্র বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, বিএনপির নেতা ও
সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে যুদ্ধাপরাধীর মামলায় গ্রেফতার করা হয়। আর বাকীরা সাধারণ হাস্যকর ভিন্ন ভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতার
করার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে
রিমান্ডে নেয়া হয়। আমরা দেখেছি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে
কিভাবে গ্রেফতার করছে পুলিশ। সন্ত্রাসী ধরার কায়দা গভীর রাতে ওয়াল টপকে তালা
ভেঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তাকে। অথচ এই রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এই সরকারের
গ্রেফতারের ভয়ে পার্টি অফিসে নিসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছিলেন। যেখানেও তিনি রেহায় পাননি।
কারাগারে আটকৃত নেতাদের তালিকার মধ্যে ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরীকদল
জামায়াতের ইসলামীর নেতাদের তালিকা সবচেয়ে বড়। জামায়াতে ইসলামীর
শীর্ষস্থানীয় উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন তারা হলেন-জামায়াতে
ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতে
ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির
মুহাম্মদ আবদুস সুবহান, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফ, জামায়াতের
সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল জামায়াতের নেতা কামারুজ্জামান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি
এম আজহারুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিবিরের কেন্দ্রীয়
সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেনসহ নাম না জানা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের হাজার
হাজার নেতাকর্মী আটক আছেন।
উপরোক্ত নেতারা মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে
আটক আছেন। অথচ এই ইস্যুটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জীবিত থাকাবস্থায় মিমাংসিত
হয়েছিল। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর সেই ইস্যুটাকে জাতির সামনে এনে দেশকে দ্বিধাবিভক্ত
করছে এ সরকার। অথচ আওয়ামীলীগের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা যুদ্ধাপরাধী আছেন। তাদের
বিচার কিন্তু করছে না সরকার। শুধু মাত্র ভিন্নমত পোষন করার কারণে তাদের আজ কাঠগরায়
দাঁড়াতে হচ্ছে। অথচ একসময় এই জামায়াতই ছিল আওয়ামীলীগের মিত্র! এখন বিএনপির মিত্র
হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সহ্য হয়নি।
উপরোক্ত শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী ও ভিন্নমতপোষনকারী
শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে আটক করে সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। শুধু
কারাগারে রেখে ক্ষান্ত হয়নি সরকার। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে
নির্যাতনও চালানো হচ্ছে। অথচ বড় বড় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে তাদেরকে
বন্দী করা হচ্ছে না। বিশেষ করে সরকারের মদদে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে
অপরাধ করে যাচ্ছে তা যেন প্রশাসন দেখে ও না দেখার ভান করছে। ফাঁসির আসামীরা
রাষ্ট্রপতিকর্তৃক ক্ষমা পাচ্ছে। অসংখ্য নিরপরাধ ও সামন্য অপরাধের কারণে আজ হাজার
হাজার মানুষ কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সাংবাদিক সাগর-রুনির প্রকৃত
হত্যাকারীদেরকে সরকার গ্রেফতার করতে পারেনি। সামনে হয়তো গ্রেফতারের তালিকা আরো
দীর্ঘ হতে পারে। গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে ভিন্নমতপোষনকারীদের দমন করার নামে সমগ্র
বাংলাদেশকে এক কারাগারে রূপান্তিত করছে সরকার। যা জাতির জন্য কতটুকু শুভ হবে তা
জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই একটু ভেবে দেখবেন। এভাবে ভিন্নমতকে দমন করা যায় না। ইতিহাস
সাক্ষ্য দেয় যুগে যুগে নির্যাতিতরা জয়ী হয়েছে। নির্যাতন করে সরকার বেশীদিন ক্ষমতায়
ঠিকে থাকতে পারবে না। ভিন্নমতপোষনকারীদের উপর যত নির্যাতন হবে তত তাড়াতাড়ি সরকারের
পতন হবে। কারণ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। একদিন না একদিন ক্ষমতা ছাড়তে হবে। সেই কথাটি
সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না।
পাঁচ বছর পর পর দেশে নির্বাচন হয়। জনগণ যে দলকে ভোট দিবে সেদল
ক্ষমতায় বসবে এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক প্রন্থাকে অস্বাভাবিক প্রন্থায় নিয়ে
জনগণের মতকে উপেক্ষা করে, সংবিধান সংশোধন করে, বিরোধীদলীয় নেতাদেরকে কারাগারে
বন্ধী করে, দলীয়ভাবে নির্বাচনের আয়োজন করে এ সরকার। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে
ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায় সরকার। সেই পাতানো নির্বাচনে বিরোধীদল অংশগ্রহণ
করেনি বলে আজ তাদেরকে কারাগারে বসবাস করতে হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার
করে কতদিন টিকবে এ সরকার তা জানি না। একমাত্র আল্লাহ ভাল জানেন।
লেকক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট
1 টি মন্তব্য:
সত্যি আজ দেশ এক কারাগারে রুপান্তরিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন