আমার ছেলেবেলা একটি অভাবী পরিবারে কেটেছে। পরিবারে অভাব থাকলেও ঈদের দিনে আনন্দের কোন কমতি ছিল না আমার মাঝে। আর সেই ছেলেবেলাটা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানাধীন ধরাভাঙ্গা গ্রামে কাটিয়েছি। এখানেই আমার জন্ম; তাই ছেলেবেলার ঈদ কেটেছে মা-মাটি ও প্রকৃতির সাথে, খেলার সাথীদের সাথে আনন্দ ফূর্তি করে। রোযা শুরু হতেই কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যেত ঈদের আর কত দিন বাকী আছে। প্রতিদিন আঙ্গুলের কর গুণে গুণে হিসাব করতাম কত দিন পর ঈদ হবে। প্রথম ও শেষ রোযা রাখতাম। মা বলতেন, শিশুরা ফেরেশতার মত নিষ্পাপ। এই দুটো রোযা রাখলে সব রোযা রাখা হয়ে যাবে।
শহরের চেয়ে গ্রামের ঈদ অনেক আনন্দের। কারণ গ্রাম হচ্ছে মানুষের শিকড়। মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ফিরে ঈদকে ঘিরে। বছরের ক্লান্তি ভুলে প্রিয় মানুষের সাথে কিছু সময় অবসর কাটাবার জন্য মানুষের কি নিরন্তর চেষ্টা; তা উপলব্ধি করতাম গ্রামের পাশে মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই শহর থেকে নৌকা ও লঞ্চের মাধ্যমে গ্রামের আসতেন সকল শ্রেণীর মানুষেরা। পাড়ার ছেলেরা মিলে সবাই মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখতাম; কিভাবে হাজার হাজার মানুষ নৌকা, লঞ্চ বোঝাই করে গ্রামমুখী হচ্ছে। আমাদের ঘাটে যখন লঞ্চ থামতো তখন দেখতাম আমাদের চেনা জানা কেউ আছে কিনা। থাকলে দৌঁড়ে গিয়ে তাকে সালাম দিতাম। কৌশল জিজ্ঞাসা করতাম।
ঈদ এলে আমাদের এলাকায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যেত। বিশেষ করে ঈদ-উল ফিরত এর সময় চাঁদ উঠার একদিন পূর্বে প্রতি ঘরে ঘরে পিঠা বানানো হতো। বাড়ির আশে পাশের সবার মতো আমার মাও পিঠা বানাতেন। মা গায়িল, সায়িট দিয়ে গুড়ি কুড়তেন। তারপর পানি সিদ্ধ করে মাধা তৈরি করে পিঠা বানাতেন। আমি তখন আমার মাকে পিঠা বানানোর কাজে সাহায্য করতাম। আমি লতি বানিয়ে দিতাম। মা তখন নিপুণ হাতে সুন্দর করে পিঁড়ির উপর হাত ঘুরিয়ে সেয়ুই বানাতেন। আমার দাদিও তখন আমার মাকে সাহায্য করতেন।
আমাদের বাড়ীর দক্ষিণ পাশে বিরাট বড় একটি বিল। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার জন্য সেই বিলের পাড়ে সবাই ভিড় করতাম। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আকাশে চাঁদ উঠবে, সেই চাঁদের জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করতাম, কখন সেই চাঁদ বয়ে আনবে আনন্দের বার্তা। আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ কখন উঁকি দেবে সেই যে আকুলতা, চাঁদ আজ উঠবে, না কাল উঠবে সেই যে আনন্দময় অনিশ্চয়তা; সেটা এক অপার আনন্দেরই উপলক্ষ। কে কার আগে চাঁদ দেখবে এই নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। যে আগে চাঁদ দেখতে পেত সে লাফিয়ে উঠে বলতো, ‘ঐ চাঁদ উঠেছে... ঐ চাঁদ উঠেছে...।’ তারপর শুরু হতো আনন্দ মিছিল। ‘এক দুই সাড়ে তিন রাত পোহালেই ঈদের দিন’ সেøাগানে মুখরিত হতো আমাদের মিছিল। পাড়ার সকল ছেলে-মেয়েরা এক সাথে মিছিল করতাম গ্রামের রাস্তা দিয়ে। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রেডিওতে বাজতো আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর গান ‘ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এল খুশীর ঈদ...’। পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদের মাইকে ভেসে আসতো ঈদ মোবারক ধ্বনি ও নামাযের সময়সূচী।
ঈদের আগের রাতেতো উত্তেজনায় ঠিকমত ঘুমাতে পারতাম না। সারা রাত হৈ চৈ করতাম। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করতাম। আমাদের গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। সেই নদীতে পাড়ার ছেলে-মেয়ে, আবাল বৃদ্ধ, নারী পুরুষ সবাই সকাল বেলা দল বেধে গোসল করতে যেতাম। পিপঁড়ার সারির মতো দল বেধে এক সাথে মেঘনায় যাওয়া ও ফিরে আসা, সে যে কি আনন্দ তা ভাষায় বুঝানো যাবে না। তারপর নতুন কাপড় পড়তাম। অভাবের সংসার ছিল তারপরও আব্বার যতটুকু সাধ্য ছিল ততটুকু দিয়ে আমাদের জন্য নতুন কাপড় আনতেন। আমরা তিন ভাই এক বোন ছিলাম। মা ঈদের দিন সকালে গুড় দিয়ে সেয়ুই পাক করতেন। ভাই-বোন সবাই মিলে মায়ের হাতের সেয়ুই খেয়ে রোযা ভাঙ্গতাম। ঈদগাহে যাওয়ার সময় বাবা আমাদের সবাইকে ৫ টাকা করে দিতেন। মা আদর করে আমাকে জামা কাপড় পড়িয়ে দিতেন। সুন্দর করে আমার চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিতেন। তারপর পরিবারের সবার সাথে জায়নামায হাতে নিয়ে পাঞ্জাবী পায়জামা পরে ঈদগাহে যেতাম।
ঈদগাহ এর বাইরে বসতো সাময়িক ঈদের মেলা। নানান হাবিজাবি নিয়ে গ্রামের ছেলেরা পসরা সাজাতো। সেখানে গিয়ে ২ টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনতাম। বাকী ৩ টাকা দিয়ে ছোট ভাইবোন ও বন্ধুদের নিয়ে কিছু কিনে খেতাম। আমার সহপাঠীদের মধ্যে আল আমীন, আজিজুল, ইসমাঈল, অলিউল্লাহ্, আজহারুল এরা সব সময় আমার পাশে থাকত। ইমাম সাহেব যখন নামায শুরু করেন তখন আমরা সবাই দল বেঁধে নামাযে দাঁড়াতাম। নামায শেষে বন্ধু-বান্ধব ও পাড়ার মুরুব্বীদের সাথে কোলাকুলি করতাম। পরে আব্বার সাথে ঈদগাহের পাশে কবরস্থানে যেতাম। সেখানে আমাদের পরিবারের যেসব সদস্য শুয়ে আছে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট হাত তুলে দোয়া করতাম। তারপর বাসায় এসে এ বাড়ী ও বাড়ী গিয়ে ফিরনী সেমাই খেতাম। ঈদের দিন বিকালে সহপাঠীদের সাথে মাঠে খেলতে যেতাম। রাতেও উঠানে বসে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। এভাবে কেটে যেত ঈদের দিন।
ছেলেবেলার কুরবানীর ঈদটা ছিল একটু বিব্রতকর! আব্বা কুরবানী দিতে পারতেন না। মুরগী জবাই করা হতো। পাশের বাড়ীর লোকজন আমাদেরকে মাংস দিতেন। লজ্জায় অন্য বাড়ীতে যেতাম না। ঈদগাহ থেকে এসেই ইমাম সাহেব গরু জবেহ করার জন্য প্রস্তুত হতেন। আমাদের সমবয়ী ছেলে-মেয়েরা গরু জবেহ দেখার জন্য ইমাম সাহেবের পিছে পিছে ঘুরতাম। কিছুক্ষণ পর পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হৈ চৈ শুরু হয়ে যেত। গরুকে যখন মাটিতে শুয়ানো হয় তখন আমরা সবাই গরুর কাছাকাছি চলে যেতাম। যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালানো হয়; তখন লাফিয়ে দৌঁড়ে চলে যেতাম। এভাবে গ্রামের সকল গরু জবেহ করা দেখতাম। তারপর বাড়ীতে এসে সেমাই খেতাম। বিকেল বেলা চুলার নিকট বসে থাকতাম কখন মাংস রান্না হবে আর কখন খাব। এভাবে কুরবানীর ঈদটা কেটে যেত।
আমাদের সেই সময়ে ঈদ ছিল অত্যন্ত আনন্দের। ঈদ উপলক্ষে, আত্মীয়স্বজনদের হতো মিলন মেলা, তার যে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তখনকার ঈদের স্মৃতিচারণ করলে মনে হয়, আবার যদি সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারতাম! আবার যদি সেই আনন্দের ছোঁয়া পেতাম! কী যে সেই আন্তরিকতা, মমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, আনন্দঘন পরিবেশ, সামাজিক বন্ধন, সর্ম্পকের দৃঢ়তা, এখন কি আর তা আছে? ছেলেবেলার সেই ঈদের আনন্দ আর এখন পাই না। এখন আর মানুষের মধ্যে সেই আন্তরিকতা, মায়া, মমতা, ভালোবাসা নেই।
শহরের চেয়ে গ্রামের ঈদ অনেক আনন্দের। কারণ গ্রাম হচ্ছে মানুষের শিকড়। মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে ফিরে ঈদকে ঘিরে। বছরের ক্লান্তি ভুলে প্রিয় মানুষের সাথে কিছু সময় অবসর কাটাবার জন্য মানুষের কি নিরন্তর চেষ্টা; তা উপলব্ধি করতাম গ্রামের পাশে মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই শহর থেকে নৌকা ও লঞ্চের মাধ্যমে গ্রামের আসতেন সকল শ্রেণীর মানুষেরা। পাড়ার ছেলেরা মিলে সবাই মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখতাম; কিভাবে হাজার হাজার মানুষ নৌকা, লঞ্চ বোঝাই করে গ্রামমুখী হচ্ছে। আমাদের ঘাটে যখন লঞ্চ থামতো তখন দেখতাম আমাদের চেনা জানা কেউ আছে কিনা। থাকলে দৌঁড়ে গিয়ে তাকে সালাম দিতাম। কৌশল জিজ্ঞাসা করতাম।
ঈদ এলে আমাদের এলাকায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যেত। বিশেষ করে ঈদ-উল ফিরত এর সময় চাঁদ উঠার একদিন পূর্বে প্রতি ঘরে ঘরে পিঠা বানানো হতো। বাড়ির আশে পাশের সবার মতো আমার মাও পিঠা বানাতেন। মা গায়িল, সায়িট দিয়ে গুড়ি কুড়তেন। তারপর পানি সিদ্ধ করে মাধা তৈরি করে পিঠা বানাতেন। আমি তখন আমার মাকে পিঠা বানানোর কাজে সাহায্য করতাম। আমি লতি বানিয়ে দিতাম। মা তখন নিপুণ হাতে সুন্দর করে পিঁড়ির উপর হাত ঘুরিয়ে সেয়ুই বানাতেন। আমার দাদিও তখন আমার মাকে সাহায্য করতেন।
আমাদের বাড়ীর দক্ষিণ পাশে বিরাট বড় একটি বিল। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার জন্য সেই বিলের পাড়ে সবাই ভিড় করতাম। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আকাশে চাঁদ উঠবে, সেই চাঁদের জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করতাম, কখন সেই চাঁদ বয়ে আনবে আনন্দের বার্তা। আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ কখন উঁকি দেবে সেই যে আকুলতা, চাঁদ আজ উঠবে, না কাল উঠবে সেই যে আনন্দময় অনিশ্চয়তা; সেটা এক অপার আনন্দেরই উপলক্ষ। কে কার আগে চাঁদ দেখবে এই নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। যে আগে চাঁদ দেখতে পেত সে লাফিয়ে উঠে বলতো, ‘ঐ চাঁদ উঠেছে... ঐ চাঁদ উঠেছে...।’ তারপর শুরু হতো আনন্দ মিছিল। ‘এক দুই সাড়ে তিন রাত পোহালেই ঈদের দিন’ সেøাগানে মুখরিত হতো আমাদের মিছিল। পাড়ার সকল ছেলে-মেয়েরা এক সাথে মিছিল করতাম গ্রামের রাস্তা দিয়ে। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রেডিওতে বাজতো আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর গান ‘ও মন রমযানের ঐ রোযার শেষে এল খুশীর ঈদ...’। পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদের মাইকে ভেসে আসতো ঈদ মোবারক ধ্বনি ও নামাযের সময়সূচী।
ঈদের আগের রাতেতো উত্তেজনায় ঠিকমত ঘুমাতে পারতাম না। সারা রাত হৈ চৈ করতাম। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করতাম। আমাদের গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। সেই নদীতে পাড়ার ছেলে-মেয়ে, আবাল বৃদ্ধ, নারী পুরুষ সবাই সকাল বেলা দল বেধে গোসল করতে যেতাম। পিপঁড়ার সারির মতো দল বেধে এক সাথে মেঘনায় যাওয়া ও ফিরে আসা, সে যে কি আনন্দ তা ভাষায় বুঝানো যাবে না। তারপর নতুন কাপড় পড়তাম। অভাবের সংসার ছিল তারপরও আব্বার যতটুকু সাধ্য ছিল ততটুকু দিয়ে আমাদের জন্য নতুন কাপড় আনতেন। আমরা তিন ভাই এক বোন ছিলাম। মা ঈদের দিন সকালে গুড় দিয়ে সেয়ুই পাক করতেন। ভাই-বোন সবাই মিলে মায়ের হাতের সেয়ুই খেয়ে রোযা ভাঙ্গতাম। ঈদগাহে যাওয়ার সময় বাবা আমাদের সবাইকে ৫ টাকা করে দিতেন। মা আদর করে আমাকে জামা কাপড় পড়িয়ে দিতেন। সুন্দর করে আমার চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিতেন। তারপর পরিবারের সবার সাথে জায়নামায হাতে নিয়ে পাঞ্জাবী পায়জামা পরে ঈদগাহে যেতাম।
ঈদগাহ এর বাইরে বসতো সাময়িক ঈদের মেলা। নানান হাবিজাবি নিয়ে গ্রামের ছেলেরা পসরা সাজাতো। সেখানে গিয়ে ২ টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনতাম। বাকী ৩ টাকা দিয়ে ছোট ভাইবোন ও বন্ধুদের নিয়ে কিছু কিনে খেতাম। আমার সহপাঠীদের মধ্যে আল আমীন, আজিজুল, ইসমাঈল, অলিউল্লাহ্, আজহারুল এরা সব সময় আমার পাশে থাকত। ইমাম সাহেব যখন নামায শুরু করেন তখন আমরা সবাই দল বেঁধে নামাযে দাঁড়াতাম। নামায শেষে বন্ধু-বান্ধব ও পাড়ার মুরুব্বীদের সাথে কোলাকুলি করতাম। পরে আব্বার সাথে ঈদগাহের পাশে কবরস্থানে যেতাম। সেখানে আমাদের পরিবারের যেসব সদস্য শুয়ে আছে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট হাত তুলে দোয়া করতাম। তারপর বাসায় এসে এ বাড়ী ও বাড়ী গিয়ে ফিরনী সেমাই খেতাম। ঈদের দিন বিকালে সহপাঠীদের সাথে মাঠে খেলতে যেতাম। রাতেও উঠানে বসে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। এভাবে কেটে যেত ঈদের দিন।
ছেলেবেলার কুরবানীর ঈদটা ছিল একটু বিব্রতকর! আব্বা কুরবানী দিতে পারতেন না। মুরগী জবাই করা হতো। পাশের বাড়ীর লোকজন আমাদেরকে মাংস দিতেন। লজ্জায় অন্য বাড়ীতে যেতাম না। ঈদগাহ থেকে এসেই ইমাম সাহেব গরু জবেহ করার জন্য প্রস্তুত হতেন। আমাদের সমবয়ী ছেলে-মেয়েরা গরু জবেহ দেখার জন্য ইমাম সাহেবের পিছে পিছে ঘুরতাম। কিছুক্ষণ পর পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হৈ চৈ শুরু হয়ে যেত। গরুকে যখন মাটিতে শুয়ানো হয় তখন আমরা সবাই গরুর কাছাকাছি চলে যেতাম। যখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালানো হয়; তখন লাফিয়ে দৌঁড়ে চলে যেতাম। এভাবে গ্রামের সকল গরু জবেহ করা দেখতাম। তারপর বাড়ীতে এসে সেমাই খেতাম। বিকেল বেলা চুলার নিকট বসে থাকতাম কখন মাংস রান্না হবে আর কখন খাব। এভাবে কুরবানীর ঈদটা কেটে যেত।
আমাদের সেই সময়ে ঈদ ছিল অত্যন্ত আনন্দের। ঈদ উপলক্ষে, আত্মীয়স্বজনদের হতো মিলন মেলা, তার যে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তখনকার ঈদের স্মৃতিচারণ করলে মনে হয়, আবার যদি সেই ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারতাম! আবার যদি সেই আনন্দের ছোঁয়া পেতাম! কী যে সেই আন্তরিকতা, মমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, আনন্দঘন পরিবেশ, সামাজিক বন্ধন, সর্ম্পকের দৃঢ়তা, এখন কি আর তা আছে? ছেলেবেলার সেই ঈদের আনন্দ আর এখন পাই না। এখন আর মানুষের মধ্যে সেই আন্তরিকতা, মায়া, মমতা, ভালোবাসা নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন