দিনটি ছিল ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি। শীত পেরিয়ে বসন্ত এসেছে। চারদিকে কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হচ্ছে। কিন্তু শীত এখনো পুরোপুরিভাবে বিদায় নেইনি। বাংলা একাডেমিতে তখন চলছে অমর একুশে বই মেলা। টেলিভশেন শুনি, পত্রপত্রিকায় দেখি লেখক-পাঠক-প্রকাশের মিলন মেলা বই মেলা। কিন্তু কোন দিন বই মেলায় যাওয়া হয়নি। তাই অনেকদিন যাবত ভাবছি এবাবের বই মেলায় যাব। কিন্তু কিভাবে যাব? ঢাকা শহরের অলিগলি এখনও তেমন চিনি না। হাতে গুনা কয়েকবার ঢাকায় গেছি। আর একা গিয়েওতো আনন্দ নেই।
বই পড়া আমার শখ। বই হাতে পেলেই জট্পট্ তা পড়ে ফেলি। বই আমার প্রিয় বন্ধু। বন্ধু, বন্ধুকে ঠকাতে পারে কিন্তু বই মানুষকে ঠকাতে পারে না।
আমার প্রিয় বন্ধু মামুন। ভাবছি মামুনকে বলব মেলায় যাওয়ার জন্য। তাই মামুনের বাসায় চলে গেলাম। তাকে বললাম, দোস্ত চলনা বই মেলা থেকে ঘুরে আসি।
মামুন বইমেলায় অনেকবার গিয়েছে। সেও বইকে খুব ভালোবাসে। তাই সানন্দে সম্মতি জানালো। দিন তারিখ ঠিক করে ফেললাম ২১ শে ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল আটটায় রওয়ানা হবো।
এবারই প্রথম এ বছর শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে বাংলার দামাল ছেলে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার আরও নাম না জানা অনেকে মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে শহীদ হন। সেই থেকে প্রতি বছর তাঁদের স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শুধু বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আজ বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে এ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নতুন শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সনে এ দিবসটি বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে পালন করেছিল।
একুশের ফেব্রুয়ারির সকাল। হালকা কুয়াশার পর্দা ভেদ করে রক্তিম সূর্যটা পূবআকাশে ওকি দিল। হালকা রোদ এসে পড়লো আমার গায়ে। তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেল্লাম। আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন ছিল। মুহূর্তে সূর্যটা মেঘের আড়ালে চলে গেল।
মামুন এসে উপস্থিত। সকাল আটটায় রওয়ানা হলাম। প্রাকৃতিক সুন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ঢাকায় এসে পৌঁছলাম তা টেরও পেলাম না। গোলিস্তান থেকে রিক্সায় উঠে দু’জনে বাংলা একাডেমীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ঢাকার রাজপথ ছিল মানুষে ভরপুর। পিপঁড়া হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। এতো মানুষ ঢাকায় এসেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরের আনন্দ একটু ভিন্ন রকম। কারণ এ বছর প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হচ্ছে। খালি পায়ে গিয়ে হাজার হাজার লোক শহীদ মিনারে ফুল দিচ্ছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সমস্ত শহীদ মিনার। আমরা প্রথমে গেলাম। শহীদ মিনারে ফুল দিতে।
বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গনে ও অসংখ্য মানুষ। শতশত মানুষ একাডেমীর বই মেলায় প্রবেশ করছে। আমরা দু’জনে মেলাতে প্রবেশ করলাম। বিপুল সংখ্যক বই মেলায় এসেছে। শুধু বই আর বই। এতো বই একত্রে আমি আর কোনদিন দেখিনি। এই প্রথম এতো বই দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেল।
শান্ত পরিবেশ। নেই কোন হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি। সবাই যার যার পছন্দ মতো বই কিনেছ। কেউ কিছু কাউকে বলছে না। বিভিন্ন প্রকাশক বিক্রেতারা এখানে বই বিক্রি করছে। কয়েকজন বিদেশী লোক ও মেলায় এসেছে। আমরা দু’জন একে একে সবগুলো স্টল ঘুরে দেখলাম। টিউশনি করে মাত্র দুইশত টাকা জোগাড় করেছি। এই টাকা নিয়েই মেলায় আসলাম। দুইশত টাকা দিয়ে আর কটা বই কিনা যাবে। আমার বই দেখলেই বই কিনতে ইচ্ছা করে কিন্তু টাকার জন্য কিনতে পারি না। তবুও হাতে টাকা পেলেই বই কিনে ফেলি।
এই মেলার প্রাঙ্গনে এসে আজ আমার ইচ্ছা করছে মেলার সমস্ত বই কিনে ফেলি কিন্তু খোদা আমাকে সেই তৌফিক দেয়নি। মেলার এক কোনায় কম্পিউটার বসানো হয়েছে। মেলার কোথায় কোন বইটি আছে কম্পিউটার তা বলে দিচ্ছে। আমি ‘সাহিত্য কোষ’ অভিধানটি খুঁজছিলাম। কম্পিউটার বলে দিল নেই। মেলা থেকে আমি তিনটি বই কিনলাম। মামুন ও কয়েকটি বই কিনল।
যোহরের আযান হলো। দু’জনে মিলে যোহরের নামায আদায় করলাম।
ক্ষুধায় পেট চু,চু করছে। দু’জনে মিলে কিছু হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। পরে আবার মেলায় প্রবেশ করি। এরবার মেলার প্রাঙ্গনের দু’তলায় দালানে উঠি। দালানে উঠেই দেখি অসংখ্য কবি সাহিত্যিকের ছবি টাঙানো। আমরা দু’জন মুগ্ধ হয়ে তা দেখলাম।
যাদের চোখ কান খোলা তারা এ মেলোয় এসে অনেক কিছু শিখতে পারবে। এই প্রথম বারের মতো মেলায় আসলাম। ইচ্ছে করছে এই স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে কিন্তু ক্যামেরা আনতে পারিনি বলে স্মৃতিগুলো ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ছে। এবার বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। ইচ্ছে করছিল আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকতে। কিন্তু অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়ি ফিরতে হলো। আজকের দিনের এই নির্মল আনন্দ ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০০০।
বই পড়া আমার শখ। বই হাতে পেলেই জট্পট্ তা পড়ে ফেলি। বই আমার প্রিয় বন্ধু। বন্ধু, বন্ধুকে ঠকাতে পারে কিন্তু বই মানুষকে ঠকাতে পারে না।
আমার প্রিয় বন্ধু মামুন। ভাবছি মামুনকে বলব মেলায় যাওয়ার জন্য। তাই মামুনের বাসায় চলে গেলাম। তাকে বললাম, দোস্ত চলনা বই মেলা থেকে ঘুরে আসি।
মামুন বইমেলায় অনেকবার গিয়েছে। সেও বইকে খুব ভালোবাসে। তাই সানন্দে সম্মতি জানালো। দিন তারিখ ঠিক করে ফেললাম ২১ শে ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল আটটায় রওয়ানা হবো।
এবারই প্রথম এ বছর শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে।
১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে বাংলার দামাল ছেলে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার আরও নাম না জানা অনেকে মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে শহীদ হন। সেই থেকে প্রতি বছর তাঁদের স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শুধু বাংলাদেশে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আজ বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে এ দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নতুন শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সনে এ দিবসটি বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে পালন করেছিল।
একুশের ফেব্রুয়ারির সকাল। হালকা কুয়াশার পর্দা ভেদ করে রক্তিম সূর্যটা পূবআকাশে ওকি দিল। হালকা রোদ এসে পড়লো আমার গায়ে। তাড়াতাড়ি গোসল করে ফেল্লাম। আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন ছিল। মুহূর্তে সূর্যটা মেঘের আড়ালে চলে গেল।
মামুন এসে উপস্থিত। সকাল আটটায় রওয়ানা হলাম। প্রাকৃতিক সুন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ঢাকায় এসে পৌঁছলাম তা টেরও পেলাম না। গোলিস্তান থেকে রিক্সায় উঠে দু’জনে বাংলা একাডেমীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ঢাকার রাজপথ ছিল মানুষে ভরপুর। পিপঁড়া হাঁটার জায়গা পর্যন্ত নেই। এতো মানুষ ঢাকায় এসেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরের আনন্দ একটু ভিন্ন রকম। কারণ এ বছর প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করা হচ্ছে। খালি পায়ে গিয়ে হাজার হাজার লোক শহীদ মিনারে ফুল দিচ্ছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সমস্ত শহীদ মিনার। আমরা প্রথমে গেলাম। শহীদ মিনারে ফুল দিতে।
বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গনে ও অসংখ্য মানুষ। শতশত মানুষ একাডেমীর বই মেলায় প্রবেশ করছে। আমরা দু’জনে মেলাতে প্রবেশ করলাম। বিপুল সংখ্যক বই মেলায় এসেছে। শুধু বই আর বই। এতো বই একত্রে আমি আর কোনদিন দেখিনি। এই প্রথম এতো বই দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেল।
শান্ত পরিবেশ। নেই কোন হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি। সবাই যার যার পছন্দ মতো বই কিনেছ। কেউ কিছু কাউকে বলছে না। বিভিন্ন প্রকাশক বিক্রেতারা এখানে বই বিক্রি করছে। কয়েকজন বিদেশী লোক ও মেলায় এসেছে। আমরা দু’জন একে একে সবগুলো স্টল ঘুরে দেখলাম। টিউশনি করে মাত্র দুইশত টাকা জোগাড় করেছি। এই টাকা নিয়েই মেলায় আসলাম। দুইশত টাকা দিয়ে আর কটা বই কিনা যাবে। আমার বই দেখলেই বই কিনতে ইচ্ছা করে কিন্তু টাকার জন্য কিনতে পারি না। তবুও হাতে টাকা পেলেই বই কিনে ফেলি।
এই মেলার প্রাঙ্গনে এসে আজ আমার ইচ্ছা করছে মেলার সমস্ত বই কিনে ফেলি কিন্তু খোদা আমাকে সেই তৌফিক দেয়নি। মেলার এক কোনায় কম্পিউটার বসানো হয়েছে। মেলার কোথায় কোন বইটি আছে কম্পিউটার তা বলে দিচ্ছে। আমি ‘সাহিত্য কোষ’ অভিধানটি খুঁজছিলাম। কম্পিউটার বলে দিল নেই। মেলা থেকে আমি তিনটি বই কিনলাম। মামুন ও কয়েকটি বই কিনল।
যোহরের আযান হলো। দু’জনে মিলে যোহরের নামায আদায় করলাম।
ক্ষুধায় পেট চু,চু করছে। দু’জনে মিলে কিছু হালকা খাবার খেয়ে নিলাম। পরে আবার মেলায় প্রবেশ করি। এরবার মেলার প্রাঙ্গনের দু’তলায় দালানে উঠি। দালানে উঠেই দেখি অসংখ্য কবি সাহিত্যিকের ছবি টাঙানো। আমরা দু’জন মুগ্ধ হয়ে তা দেখলাম।
যাদের চোখ কান খোলা তারা এ মেলোয় এসে অনেক কিছু শিখতে পারবে। এই প্রথম বারের মতো মেলায় আসলাম। ইচ্ছে করছে এই স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে কিন্তু ক্যামেরা আনতে পারিনি বলে স্মৃতিগুলো ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ছে। এবার বাড়ির পথে পা বাড়ালাম। ইচ্ছে করছিল আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকতে। কিন্তু অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়ি ফিরতে হলো। আজকের দিনের এই নির্মল আনন্দ ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০০০।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন