কিংবদন্তীর প্রাণপুরুষ সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক আজ আর আমাদের মাঝে নেই, একথা ভাবতেই চোখে জল এসে যায়। তিনি যে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। মানুষ মরণশীল। কেউ অমর নয়। কেউ আগে বা কেউ পরে এ দুনিয়া থেকে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। তাই সে নিয়মেই সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন। দেখতে দেখতে একটি বছর চলে গেল। ২৭ মার্চ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
ব্যক্তিগতভাবে সামসুদ্দীন আহমেদ এছাকের সাথে আমার কোন কথাবাতা হয়নি বা তাঁর কোন সানিধ্য পায়নি। আমি যখন ২০০৩ সনের আগস্ট মাসে নরসিংদীতে আসি, তখন থেকেই শুনতে পাই তিনি অসুস্থ। ২০০৪ সনের প্রথম দিকে যখন আরশীতে মুখের কর্তৃপক্ষের সাথে আমার পরিচয় হয় তখন আমি প্রায়ই আরশীনগর যেতাম। তখন দেখতাম অসুস্থ এছাক বটগাছের নিচে বসে থাকতেন। তাঁর অসংখ্য ভক্ত তাকে দেখার জন্য আরশীনগর আসত। তখন আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি। তখন যদি জানতাম যে তিনি এভাবে অকালে চলে যাবেন তাহলে তাঁর চরণধুলি নিয়ে ধন্য হতাম। তাঁর গুনের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি একাধারে একজন গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, অভিনেতা, ছড়াকার, লেখক, ন্যায়বিচারক, প্রকৃতি প্রেমিক, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। বাস্তবে তিনি বিলাসী জীবন যাপন না করে সাদাসিধেভাবে সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করতেন। তাঁর প্রমান তাঁর পোশাক আশাকে পাওয়া যেত। তিনি র্সবদা সাধারণ ফতোয়া ও লুঙ্গী পরিধান করতেন। শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষে মানুষটি ছিল অটল। সাংস্কৃতিক ধারক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক সংগীত একাডেমী। অসংখ্য গান, কবিতা, নাটক লিখেছেন। সুর করেছেন বহু গানে। বাংলাদেশ রেডিও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন। এসবের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি থাকবেন চির অম্লান হয়ে।প্রকৃতি প্রেমিক সামসুদ্দীন আহমেদ এছাক গাছপালা, ফুল, লতাপাতা, পশু পাখিকে যে কতটুকু ভালবাসতেন তা শধুমাত্র তাঁর সৃষ্টিশীল কর্মের মধ্যে অনুভব করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে তিনি তৈরি করেন নরসিংদীর একমাত্র র্পাক আরশীনগর র্পাক ও মিনি চিড়িয়াখানা। কোন দর্শনার্থী যখন তাকে খুঁজত তখন তাকে কোথাও পাওয়া না গেলেও এই আরশীনগর পার্কে পাওয়া যেত।
তাঁর জনপ্রিয়তা যে কতছিল তাঁর প্রমাণ নরসিংদীর সদর আসন থেকে ৪ বার এমপি নির্বাচিত হওয়া। আমার মনে হয় তিনি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন তবুও যেকোন প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করতে পারতেন। তিনি যে কতটুকু সাহিত্যমনা ছিলেন তার উজ্জ্বল প্রমাণ নরসিংদী থেকে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আরশীতে মুখ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করা এবং এতে নিয়মিত সাহিত্য পাতা চালুকরন। বাস্তবে তিনি মরে গেছেন। কিন্ত তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন সৃষ্টিশীল কর্মের মধ্য দিয়ে। যুগ যুগ ধরে তাকে স্মরণ করবে নরসিংদী তথা বাংলাদেশের অসংখ্য ভক্তরা।
প্রকাশকাল: বুধবার, ২৯ মার্চ ২০০৬ইং
1 টি মন্তব্য:
আমার বাবা। আমার গর্ব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন