অন্যান্য নেশার মত মদ পান করাও একটি নেশা। বাংলায় নেশা শব্দটি এসেছে মূল আরবি শব্দ ‘নাশাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ মত্ততা। সাধারণের চেয়ে বেশি যে কোন আকর্ষণকে নেশা বলা হয়।
অপরদিকে ইংরেজি ড্রাগ শব্দটি ইতালীর মূল ‘ড্রগে’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো গাছ-গাছরা থেকে আহরণ করা ‘‘শুষ্ক ঔষধি’’। আমরা ড্রাগের বাংলা প্রতিশব্দ পাই ভেষজ থেকে।
অপরদিকে ইংরেজি ড্রাগ শব্দটি ইতালীর মূল ‘ড্রগে’ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো গাছ-গাছরা থেকে আহরণ করা ‘‘শুষ্ক ঔষধি’’। আমরা ড্রাগের বাংলা প্রতিশব্দ পাই ভেষজ থেকে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রদত্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘ড্রাগ হলো এমন বস্তু যা জীবন্ত জীব গ্রহণ করলে তার এক বা একাধিক কার্যকলাপের ঈষৎ পরিবর্তন ঘটায়।
ধূমপানের ফলে যেমন একটি মানুষ তিলে তিলে শেষ হয়ে যায় তেমনি মাদক দ্রব্যের ফলেও একটি মানুষ কুড়ে কুড়ে নি:শেষ হয়ে যায়। এই মাদকাসক্তি তথা নেশার কারণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
বেকারত্ব: একজন ছাত্র লেখাপড়া করে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেও চাকুরী পায়না, তখন সে হতাশাগ্রস্থ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে এক সময় সে নেশার জগতে প্রবেশ করে।
সঙ্গীদের চাপ: স্কুল, কলেজে পড়াকালীন সময় একজন ছাত্র যখন দেখে যে, তার অন্য বন্ধুটি নেশা করে। তারা তাকে নেশার জগতে আসার জন্য আহ্বান করে। এতে সে উৎসাহ পায়। ফলে সে নেশা করতে অভ্যস্থ হয়। তাছাড়া অনেক বন্ধু বান্ধব আছে যারা তার অপর বন্ধুকে জোর পূর্বক নেশা করায়।
যৌবনের বিদ্রোহী মনোভাব: অনেক যুবক আছে যখন তাঁদের যৌবন চাঙ্গা হয়ে উঠে তখন তারা যে কোন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে মাদকদ্রব্যের মত নেশায়ও তারা অভ্যস্থ হযে যায়।
পারিবারিক পরিমন্ডলে মাদকের প্রভাব: অনেক পরিবারে দেখা যায় পিতা নেশা করে। ছেলে তার পিতাকে অনুসরণ করে নেশা করতে থাকে। পিতা তখন তার ছেলেকে শাষণ করতে পারে না।
ধর্মীয় অনুভূতির অভাব: ধর্মীয় জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে মাদকের সুফল-কুফল সর্ম্পকে জানে না। ফলে তারা মাদকাসক্তিতে আসক্ত হয়।
মাদকের সহজলভ্যতা: এখন দেশের আনাচে কানাচে যেখানে সেখানে অতি সহজে হাতের নাগালে নেশা জাতীয় দ্রব্য পাওয়া যায়। তার ফলে মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
শিক্ষা কার্যক্রমে বিষয়টি অনুপস্থিত: মাদক দ্রব্যের কুফল সর্ম্পকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা এ সর্ম্পকে অজ্ঞ থাকে। আর এ অজ্ঞতার ফলে মাদক দ্রব্য সেবনকারী অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েই চলছে।
আনন্দ লাভ: কয়েকজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন পার্টি বা অনুষ্ঠানে নেশা করে আনন্দ ফূর্তি করে। যার ফলে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বেশি হচ্ছে।
নেশার প্রতি কৌতূহল: অনেকে আছে তার অপর বন্ধুকে মদ পান করতে দেখে আসক্ত হয়।
জীবনের প্রতি আস্থাহীনতা: জীবনের প্রতি যখন কোন মানুষের বিতৃষ্ণা এসে যায় তখন সে জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। ফলে মাদক দ্রব্য সেবন করে।
অর্থাভাব: অর্থের অভাবে অনেক সময় যুবকরা মাস্তানি, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, দস্যুতা, ডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় থেকে শুরু করে খুন-খারাবি পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। যার ফলে সে নেশা পানে আসক্ত হয়ে পড়ে।
এতক্ষণ মাদকাসক্তির কারণগুলো আলোচনা করা হলো। এবার তার প্রতিকারের উপায় আলোচনা করা হলো।
প্রচার মাধ্যমে আন্দোলন: সংবাদপত্রসহ সমস্ত ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াগুলো যদি মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে তাহলে মাদক দ্রব্য প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
দারিদ্র বিমোচন ও কর্মস্থান: মাদক দ্রব্য নিবারণের অন্যতম মাধ্যম হলো দারিদ্র বিমোচন করে কর্মসংস্থান করা।
পারিবারিক শান্তি : প্রতিটি পরিবারে যদি শান্তি থাকে তাহলে মাদক দ্রব্য প্রতিরোধ হবে।
মাদকের সহজলভ্যতা বন্ধ: যেখানে সেখানে নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করা বন্ধ করতে হবে।
ধর্মী অনুভূতি জাগরণ: প্রতিটি মানুষ যদি ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে ধর্মীয় অনুভূতি অনুভব করে তাহলে মাদকদ্রব্য নিবারণ সম্ভব।
পূর্ণবাসন ব্যবস্থা: যারা গরীব দু:খি আছে তাদের সকলের পুর্নবাসন করতে হবে।
সামাজিক আন্দোলন: সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকেরা বিভিন্ন সভা করে যুবকদেরকে মাদকের কুফল সর্ম্পকে অভিহিত করবে।
মাদক তৈরি বন্ধকরণ: সরকারিভাবে মাদক তৈরি কারখানা বন্ধ করতে হবে।
শাস্তি: মাদক দ্রব্য সেবনের কারণে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
চোরাচালান: বিভিন্ন দেশ হতে চোরা পথে মাদকদ্রব্য আসা বন্ধ করতে হবে।
উপরোক্ত প্রতিরোধগুলোর ব্যবস্থা নিলে আশা করা যায় মাদকদ্রব্য সমাজ থেকে নির্মূল করা সম্ভব। মাদকের বিষাক্ত ছোবল আজ দেশ ও জাতির জন্য এক মারাত্মক আতংক। এর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি এর প্রতিরোধ করা দরকার। তা না হলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই আমি মনে করি সরকারের একার পক্ষে এ মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেশে আসবে অনাবিল সুখ, শান্তি।
প্রকাশকাল: বুধবার, ৭ জুলাই ২০০৪ইং
৩টি মন্তব্য:
আপনার কাছে আমি
নতুন লেখা প্রকাশ করব ফোন01761504407
জনাব আয়নাল হক এটা আমার ব্যক্তিগত ব্লগ। এখানে আপনি লিখতে পারবেন না। ধন্যবাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন