শিশুকালে ছেলে-মেয়েরা খাদ্য ব্যতীত আর অন্য কোন কিছুরই তেমন প্রয়োজন পরে না। বয়:প্রাপ্তির সাথে সাথে তাদের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। তখন তাদের মধ্যে দেখা দেয় কামরিপু। এ রিপু চরিতার্থ করণে তখন পুরুষ নারীর সহিত এবং নারী পুরুষের সহিত মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে। উভয়ের দেহ মনে যৌবনের জোয়ার সৃষ্টি হয়। তখন প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা লাভের জন্যে নর-নারীর মন ব্যাকুল হয়ে উঠে।
মানুষ সামাজিকক জীব। একা বসবাস করতে পারে না। তাইতো মানুষ মানুষের সাথে করে প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা। এর ফলে তৈরি হয় সুন্দর পরিবার, সমাজ। ভালোবাসা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আর এই চিরন্তন সত্যকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। প্রেম মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রেম পবিত্র, প্রেম স্বর্গীয়। তাইতো কবি এই প্রেমকে নিয়ে লিখেছেন- ‘‘প্রেমেরে শিখা চিরকাল জ্বলে, স্বর্গ হতে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে।’’ এছাড়াও এ প্রেমকে কেন্দ্র করে উপন্যাসিক লিখেছেন উপন্যাস, কবি লিখেছেন কবিতা, কাহিনীকার লিখেছেন চলচ্চিত্রের কাহিনী, প্রবন্ধকার লিখেছেন প্রবন্ধ।
কিন্তু আমাদের সমাজে এমন কতিপয় ভণ্ড প্রেমিক-প্রেমিকা আছে যারা প্রেমের নামে এ পবিত্র প্রেমকে করেছে অপবিত্র। তারা যৌন আবেগাপ্লুত হয়ে প্রেমের নামে অবৈধভাবে যৌন কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আর একে কোরআনের ভাষায় বলা হয় জিনা বা ব্যভিচার। আর জিনাকারীর শাস্তি সর্ম্পকে পবিত্র কোরআনে সুরা আন-নুর এর ২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘ব্যভিচারী নারী ও ব্যাভিচারী পুরুষ উভয়ের প্রত্যেককেই একশত করে কষাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও। আর তাদের এই শাস্তিদানের সময় ঈমানদার লোকদের একটি দল যেন অবশ্যই প্রত্যক্ষ করে।’’
আলোচ্য আয়াতে ব্যভিচারী নারী ও পুরুষের শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাধীন সুস্থ বিবেকবান অবিবাহিত নারী-পুরুষ যদি ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করার কথা বলা হয়েছে। আর ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ যদি বিবাহিত হয়, তবে তাদের শাস্তির হল পাথর নিক্ষেপ করে উভয়কে মেরে ফেলতে হবে।
এখন ভণ্ড প্রেমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলি। আমাদের সমাজে এমন কতিপয় প্রেমিক আছে যাদেরকে বিশ্ব প্রেমিক খেতাব দেয়া যায়। যারা একের পর এক প্রেম করে সেঞ্চুরী পর্যন্ত করে ফেলে। তারা যে কোন সুন্দরী যুবতী দেখলেই তার সাথে ভাব করার জন্য পিছনে ঘুরতে থাকে। একদিন হয়তো মেয়েটি সরল বিশ্বাসে ছেলেটির সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হয়তো কোন এক সময় যৌনকাজে লিপ্ত হয়। সময় সুযোগ বুঝে প্রেমিক তার ইজ্জত লুণ্ঠন করে চলে যায়। আমরা জানি জোর করে যৌন মিলন করাকে বলে ধর্ষণ। আর বিয়ের পূর্বে দু’জনের সম্মতিতে যৌন মিলন করাকে বলে ব্যভিচার। আর ব্যভিচারের শাস্তির কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকায় এমন ধরণের খবর অহরহ দেখতে পাচ্ছি যে, প্রেমিক তার প্রেমিকাকে সিনেমা দেখানোর নাম করে চার পাঁচ বন্ধু মিলে তাকে গণধর্ষণ করছে। প্রেমিক প্রেমিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলন করে অবৈধ সন্তান তার গর্ভে দেয়। পরে এক সময় সে তাকে ফাঁকি দিয়ে তার জীবন থেকে পালিয়ে যায়।
হে ভণ্ড প্রেমিক ভাইয়েরা আপনারা একটু চিন্তা করে দেখুনতো, আপনাকে সরল মনে মেয়েটি বিশ্বাস করেছিল। আপনাকে নিয়ে কতনা রঙিন ছবি এঁকেছিল। কি করলেন আপনি তার জীবনটাকে। কেন আপনি তার সাথে ছলনা করলেন? এই মেয়েটি অন্যের ঘরে গিয়ে শান্তি পাবে? আপনার জন্য কেন তাকে সারা জীবন পাপের গ্লানি টানতে হবে? আপনাদের মত যারা প্রেমের নামে মিথ্যে অভিনয় করে এ রকম জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন তাদেরকে ধিক্।
এতক্ষণে হয়তো মেয়েরা আমার খুব প্রশংসা করছেন তাই না! ভাবছেন লেখকটা খুব ভালো আমাদেরকে কিছুই বলে নাই শুধু ছেলেদেরকে বলছে। আর অপর দিকে ছেলেরা হয়তো আমার প্রতি ক্ষেপে গেছেন তাই না! ভাবছেন, শুধু আমাদেরকে দোষ দিচ্ছেন। না ভায়েরা ক্ষেপে যাবেন না যা সত্য তাই বললাম। তবে মেয়েদেরকে কিন্তু আমি ছাড়ছি না। তারাও ছেলেদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাদের কথাও বলছি শুনুন। আর মেয়েরা এতক্ষণে ছেলেদের কথাইতো শুনলেন এবার আপনারা কিভাবে ছেলেদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন তা দেখুন।
আপনারা কিন্তু প্রেমের ব্যাপারে একেবারে পিছিয়ে নন। কতিপয় ভণ্ড প্রেমিকা আছে যারা সাময়িক আনন্দ ও ক্ষণিকের সুখের জন্যে ছেলেদের সাথে একাধিক প্রেম করতে থাকে। বিশেষ করে যারা একটু সুন্দরী তারাতো তাদের রূপের মাধুরী দিয়ে পুরুষদেরকে পাগল করে তুলে। তারপর বছরের পর বছর চলতে থাকে মিথ্যে প্রেমের অভিনয়। কিন্তু সরলমনা পুরুষ নারীর ছলনা বুঝতে পারে না। মন ভুলানো ও যৌন সুরসুরিমূলক কথাবার্তায় তার প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। পরিশেষে এই ছলনাময়ী নারীরা প্রেমিকের মানি ব্যাগ শেষ করে, বিভিন্ন উপঢৌকন গ্রহণ করে। পরে এক সময় সুযোগ বুঝে অন্যের হাত ধরে চলে যায়। তারপর ধিব্বি ঘর সংসার করতে থাকে অন্য পুরুষের। আর ভুলেও তার কথা মনে করে না। এর ফলে পুরুষরা দেখায় ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। ফলে ঘটে নারী হত্যা, এসিড নিক্ষেপ ও সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা।
হে ভণ্ড প্রেমিকারা একটু চিন্তা করুনতো এসব সরলমনা পুরুষরা আপনাকে নিয়ে কত মধুর স্বপ্ন দেখেছিল। গড়েছিল স্বপ্নের তাজমহল। কিন্তু আপনি তার সাথে ছলনা করে তার জীবনটা করে দিলেন নষ্ট। কি অপরাধ ছিল তার?
যাহোক এখন আপনাদের সবার প্রতি অনুরোধ, প্রেম করুন কিন্তু অবৈধ প্রেম করবেন না। যা সমাজ কোন দিন মেনে নিবে না। প্রেমের নামে ক্ষণিকের জন্য যৌন মিলন করে নিজের সোনালী জীবনটা ধবংস করবেন না। প্রেমের ফাঁদে ফেলে কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। কারো মনে আঘাত দিবেন না। জানেনতো কারো মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান কথা। খাঁটি প্রেম করুন, খাঁটি প্রেম করে ব্যর্থ হলেও যার মধ্যে পাবেন অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দ।
প্রকাশকাল: বুধবার, ২ জুন ২০০৪ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন