ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর, একথা আজ শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানী অথবা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের হুসিয়ারি সংকেত নয়, এ কথা সর্বজনবিদিত। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক উপলদ্ধি করে এক প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন, ''Drink poison but leave smoking". অর্থাৎ ধূমপান বিষপানের চেয়েও মারাত্মক। কারণ বিষপানের সাথে সাথে জীবনের মৃত্যু ঘটে কিন্তু ধূমপানের ফলে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে। এর ফলে সামাজিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটে। ব্যক্তি সমাজ নিশ্চিত অকল্যাণের দিকে ধাবিত হয়। ধূমপান যে স্বাস্থ্য রক্ষা, শরীর গঠন ও নানা প্রকার রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অপকার ছাড়া কোন উপকার করে না, একথা স্বয়ং ধূমপায়ীরাও স্বীকার করে।
ধূমপান অন্যান্য নেশার মত এক ধরনের নেশা। পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রচলিত একটি মারাত্মক নেশা। মানুষ যে কোন নেশায় একবার অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা সহজে ত্যাগ করতে পারে না। তাইতো ধূমপায়ীরা মাদকাসক্ত অন্যান্য নেশাখোরদের মত ক্রমাগত ধূমপান করে যায়। যারা ধূমপান করে তাদের যদি দরিদ্রতার কারণে দুমুঠো অন্ন না জুটে তাহলেও তারা এক টুকরা সিগারেটের জন্যে পাগলপারা হয়ে যায়। এমন কি অন্যের নিকট একটি সিগারেটের জন্যে হাত পাততেও লজ্জাবোধ করে না। তবুও সে ধূমপান করবে। এক বেলা ভাত না খেয়ে থাকতে পারবে কিন্তু ধূমপান না করে থাকতে পারবে না। আমি দেখেছি যারা গরিব ভিক্ষুক আছে তারা অন্যের খাওয়া সিগারেটের শেষাংশ সংগ্রহ করে তাতে আবার অগ্নি সংযোগ করে নেশা মেটায়। এ নেশা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে অশুভ ফল বয়ে আনে। অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা প্রধানত কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে জড়িয়ে পড়ে। আর প্রাপ্তবয়স্কগণ স্মাটনেস, আভিজাত্য ও সামাজিকতা বজায় রাখতে অথবা অন্যের দেখাদেখি এ মরণ ব্যাধি অভ্যাস গড়ে তুলে। ধূমপান ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির জন্যে এক জীবন্ত অভিশাপ। এ অভিশাপ সমাজকে গ্রাস করে আছে। মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে পুষ্টির জন্যে, দেহের বৃদ্ধি করার জন্যে। কিন্তু ধূমপান এমন এক অভিশপ্ত অভ্যাস যা জীবনের ধবংস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। এটি দেহ গঠনের পরিবর্তে দেহের ক্ষতিসাধণ করে। ধূমপান জনিত এ বদঅভ্যাস কখনো আবার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের উচিত ধূমপানের মত মারাত্মক বদঅভ্যাস অচিরেই আমাদের সমাজ থেকে দূর করা।
ধূমপানের মত ভয়াবহ মারাত্মক কুঅভ্যাস থেকে যারা আজ মুক্ত আছে তারাই পেয়েছে পরিপূর্ণ জীবন। আর যারা এ কু-অভ্যাসকে আকঁড়ে ধরে রেখেছে তারা জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা হয়তো জানেনা এর শেষ পরিমাণ কি? যারা ধূমপানের পরিণাম সর্ম্পকে কিছুই জানে না তাদেরকে আমি বুঝাতে পারব কিন্তু যারা বুঝেও না বুঝার ভান করে তাদেরকে আমি কিছুতেই বুঝাতে পারব না। দুঃখ লাগে তখন, যখন দেখি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষিত প্রফেসর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ধূমপানে আসক্ত। আমার মত ক্ষুদ্র লেখক ঐসব উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চ শ্রেণীর লোকদেরকে বুঝাতে পারব না যে ধূমপান জীবনে কতটুকু ক্ষতি করে। যারা ধূমপান সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ তারা আমার কথাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়–ন।
আপনারা সবাই জানেন সবকিছুরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে। কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত ধূমপানের কোন ইতিবাচক দিক খুঁজে পাইনি। আপনারা পেয়েছেন কিনা আমি জানি না। তা ছাড়া আমরা ধূমপানকে আবার ধূমপানও বলতে পারি না। কারণ আমরা জানি তরল জাতীয় কোন কিছু পান করা হয় এবং বস্তু জাতীয় কোন কিছু খাওয়া হয়। কিন্তু আমরা যে ধূমপান বলি এটাকে আমরা খাওয়াও বলতে পারি না আবার পানও বলতে পারি না। কারণ ধোঁয়া কিন্তু খাওয়া যায় না আবার পানও করা যায় না। তা শুধু সিগারেট টেনে ধোঁয়া মুখের ভেতর নিয়ে তারপর শূন্যে উড়িয়ে দেয়া। এর ভাষাগত রূপ কি হতে পারে আমি কোন বাংলা ব্যাকরণে পাইনি। যাক এটা নিয়ে আর আলোচনা করার দরকার নেই। কারণ এটা আমার আলোচনার বিষয় নয়। এখন কথা হলো যারা নিয়মিত ধূমপান করেন তারা হয়তো নিম্নের কয়েকটি পয়েন্টকে ধূমপানের ইতিবাচক দিক ভাবতে পারেন।
১। ধূমপানের ফলে শরীর শিথিল ও মনোরম হয়।
২। নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখে।
৩। একঘেয়েমী কাটাতে ধূমপান সাহায্য করে।
৪। সিগারেট হাতে থাকলে নিজেকে স্মার্ট মনে হয়।
যারা আমার উপরোক্ত ৪টি পয়েন্টকে ইতিবাচক ভেবে থাকেন তারা ভুল করবেন। আমি মনে করি মোটেও ধূমপানের কোন ইতিবাচক দিক নেই। ধূমপান ক্ষতি ছাড়া আর কিছু আমাদেরকে উপহার দিতে পারে না। কিছু কিছু কাজ আছে যা করলে দুনিয়াতে ক্ষতি হয় আখেরাতে লাভ হয়। আবার কিছু কিছু জিনিস আছে যা শুধু দুনিয়াতে লাভ হয় আখেরাতের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হয়। কিন্তু ধূমপান এমন একটি কাজ যা শুধু দুনিয়া নয় দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জগতেই মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান বর্তমানে সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে জঘন্য না হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ। এবার আমি ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো একে একে আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরলাম। আমরা ধূমপানের ক্ষতিকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি।
১। শারীরিক
২। আর্থিক
৩। পরিবেশগত
এবার শারীরিক দিকগুলো আলোচনা করছি।
১। প্রথম ধূমপানের ফলে যৌন ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে। দেখা দেয় পরিবার ভাঙ্গন।
২। ধূমপায়ীর মুখে প্রচন্ড র্দুগন্ধ হয়। অনেক অধূমপায়ীর স্ত্রী স্বামীর এই অসহনীয় দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ফলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝাগড়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়।
৩। ধূমপায়ীর ঠোঁট কালো হয়ে যায়।
৪। ধূমপানের ফলে মরণব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ক্যান্সার মানুষকে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
৫। আয়ু কমে যায়।
৬। আলসার হয়।
৭। গ্যাস্ট্রিক হয়।
৮। ফুসফুসে ক্যান্সার হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, ধূমপানের ফলে ধোঁয়ার সাথে নিকোটিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে প্রথমে ফুসফুসে প্রবেশ করে, পরে তার রক্তের সাথে মিশে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু অংশ পুনরায় বের করে দেয়া ধোঁয়ার সঙ্গে বের হয়ে আসে। এর ফলে নিয়মিত যারা ধূমপান করে তাদের ফুসফুসের ভেতর খুব ধীরে ধীরে মৌচাকের মত নিকোটিন জমতে থাকে। এই বিষ এক সময় ফুসফুসকে পঙ্গু করে দেয়। এই নিকোটিন অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদি কোন সুস্থ্য মানুষের দেহে বিশটি সিগারেটের নিকোটিন এক সাথে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো যায়, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য।
৯। স্তন ক্যান্সার হয়।
১০। যক্ষ্মা হয়।
১১। শ্বাসকষ্ট হয়।
১২। হাঁপানি হয়।
১৩। দন্ত ক্ষয়, দাঁতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
১৪। হৃদরোগ হয়।
১৫। দৃষ্টি শক্তির ক্ষতিসাধন করে। এক সময় চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
১৬। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান।
১৭। হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে।
১৮। উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
১৯। স্বাস্থ্য নষ্ট করে।
২০। ক্ষুধামান্দা দেখা দেয়।
২১। গর্ভবতী নারীরা যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে তাদের শিশুর শারীরিক ওজন কম হবে। আবার মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।
২২। সিগারেট শুধু নিজে জ্বলে না, অন্যকে জ্বালায়। যেমন যারা ধূমপান করে না তারা যদি ধূমপায়ীদের নিকট বসা থাকে তাহলে তাদের উপরও ধূমপানের প্রভাব পড়ে।
২৩। ধূমপানের ধোঁয়া শিশুদের উপর প্রভাব পড়ে। এই বিষাক্ত ধোঁয়ার ফলে অনেক শিশু হাঁপানিতে ভুগতে পারে।
উপরোক্ত শারীরিক ক্ষতিগুলো ছাড়াও আরো আনেক ক্ষতিকর দিক আছে। যা লিখে শেষ করা যাবে না।
মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সীনা বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর এত ধূলি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত, তাহলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থ্য জীবিত থাকত।’’
হামবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ট্রেন ভিলেন বাগ বলেন,‘‘ ধূমপানের মত মানব সৃষ্ট মহামারী সভ্যতাকে নিশ্চিতভাবে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।’’
হাকিম মহাত্ম জালিনুস বলেছেন, ‘‘তোমরা ধূলোবালি, ধূমপান ও পচা দুর্গন্ধময় পদার্থ থেকে দূরে থেকো, তাহলে তোমার চিকিৎসার প্রয়োজন হবে না।’’
এবার আসা যাক আর্থিক ক্ষতির দিকে। আর্থিক দিক দিয়ে ধূমপান আমাদের ব্যক্তি জীবনে অনেক ক্ষতি করছে।
১। কিছু কিছু ধূমপায়ী আছে যারা সিগারেট টানার পর সিগারেটের অবশিষ্ট অংশের আগুন না নিভিয়ে যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছে যার ফলে অসাবধানতাবশত ঘটে যাচ্ছে মারাত্মক অগ্নিকান্ড। আর এ অগ্নিকান্ডের ফলে আমাদের দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
২। ধরা যাক একজন লোক যদি দুই টাকা দামের সিগারেট প্রতিদিন ১০টি করে টানে তাহলে দেখা যায় প্রতিদিন বিশ টাকা তার পকেট থেকে চলে যাচ্ছে। ম্যাচের কথা নাই বললাম। এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, একজন মানুষের মাসে ৬০০ টাকা এবং বছরে ৭২০০ টাকা তার পকেট থেকে খরচ হচ্ছে। এখানে সম্ভাব্য হিসেব দেখানো হচ্ছে ধূমপায়ীর ধরণ ভেদে এর কম বেশী হতে পারে। এখন এ হিসাবকে যদি সামনের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে দেখতে পাব যে আমাদের দেশের শতকরা ৫০% লোক ধূমপান করে। তাহলে দেখা যাবে যে, ১৩ কোটি মানুষের মধ্যে ৬,৫০,০০,০০০ (ছয় কোটি পঞ্চাশ লক্ষ) অর্থাৎ সাড়ে ছয় কোটি লোক ধূমপান করছে। এখন আমার হিসেব অনুসারে একজন মানুষ যদি দৈনিক ধূমপানের জন্যে ২০ টাকা খরচ করে তাহলে দৈনিক সাড়ে ছয় কোটি মানুষ খরচ করছে ১৩০,০০,০০০,০০/- (একশ ত্রিশ কোটি) টাকা। আর এত টাকা যদি দৈনিক অপচয় হয় তাহলে তা মাসে, বছরে যুগের পর যুগে কত হচ্ছে হিসেব কে করে?
ধূমপায়ী ভাই ও বোনেরা একটু ভেবে দেখুনতো এভাবে যদি আমরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অপচয় করি তাহলে আমাদের দেশ কিভাবে উন্নতি করবে? এই টাকা গুলো যদি আমরা এতিম, মিসকিন, গরীব দু:খীকে দিতাম, সেবামূলক কাজে ব্যয় করতাম যেমন- মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব, স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করতাম বা নিজেরাই কোন কাজে লাগাতাম তাহলে দেশ কতনা উন্নত হতো। আমাদেরকে অন্যের কাছে উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য ভিক্ষুকের মত হাত পাততে হতো না। আজ কেন আমরা বিশ্বের দরবারে পিছিয়ে আছি? আমাদের দেশে কি নেয়? সবইতো আছে। নেই শুধু নৈতিক জ্ঞান। আমরা যেখানে সেখানে টাকা অপচয় করি। অপচয় ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারি না বলে আজ আমরা বিশ্ব দরবারে গরিব হয়ে আছি। শুধু ধূমপান নয়, আরো বিভিন্ন দিক দিয়ে আমরা দেশের সম্পদ অপচয় করছি। যার হিসেব করা যাবে না। আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্য ধূমপান একটি অমানবিক আর্থিক অপচয়। যে দেশের মানুষ দুমুঠো অন্নের জন্যে হাহাকার করে, অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটায়, বিবস্ত্র অবস্থায় পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়, বসত বাড়ির অভাবে ফুটপাতে, রেল স্টেশনে রাত কাটায়, সে দেশের মানুষরা ধূমপানের মত ক্ষতিকর খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে যা শুনতে সত্যিই অবাক লাগে। তাও যদি দেশের বা নিজের কিছু উপকার হতো ধূমপানের ফলে তাহলেও মেনে নেয়া যেত এই অপচয়। যেখানে কোন উপকার আসছে না আমাদের রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত জীবনে তাহলে সেখানে কেন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছি? এটা আমার ধূমপান ভাইদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
এতক্ষণ ধূমপানের শারীরিক ও আর্থিক দিক নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার আসা যাক ধূমপানের পরিবেশগত কারণ নিয়ে আলোচনা।
১। ধূমপানের ধোঁয়ার ফলে বাতাস দূষিত হয়।
২। যেখানে সেখানে সিগারেটের শেষাংশ ও পোড়া অংশ ফালানোর ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
৩। ধূমপায়ী ব্যক্তি ধূমপান করে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যার পাশে বসে ধূমপান করছে তারও সমান ক্ষতি হচ্ছে।
এতক্ষণ দুনিয়ায় ধূমপানে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় জীবনে কতটুকু ক্ষতি করে তার কিছু অংশ আলোচনা করলাম। এবার আসা যাক আখেরাতে ধূমপান কতটুকু ক্ষতি করে তা ইসলামের দৃষ্টিতে আলোচনা করা হলো। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। যে সব বস্তু পবিত্র ও মানুষের জন্যে কল্যাণকর সেগুলোকে আল্লাহ পাক হালাল করেছে আর যেসব বস্তু অপবিত্র ও মানুষের জন্য অকল্যাণকর সেগুলোকে হারাম করেছে। মানুষ হালাল বস্তু গ্রহণ করবে এবং হারাম বস্তু বর্জন করবে তাহলে তারা কল্যাণ ও মুক্তি পাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৭২ নং আয়াতে ঘোষণা করেন- ‘‘তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও, যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দান করেছি।’’
আল্লাহ তায়ালার সুষ্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও মানুষ অজ্ঞতাবশত নানা কু-প্ররোচনায় ধূমপানের মত কু-অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ছে। এখন ইসলামের আলোকে ধূমপানের কুফল গুলো বর্ণনা করা হলো।
১। ধূমপানের ফলে প্রচুর টাকা অপচয় হয়। আর অপচয় করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা সূরা বনি ইসরাইলের ২৭ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’’
২। ধূমপান করার ফলে ধূমপায়ীদের প্রচুর অর্থ সম্পদ দরকার হয়। তখন তারা পিতা-মাতার উপর জুলুম করে অর্থ সংগ্রহ করে। যদি পিতা-মাতা এই অর্থ যোগান দিতে অপরাগ হয়, তখন তারা সামাজিক অনাচার, অত্যাচার শুরু করে। পরিণামে তারা চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী হয়।
৩। ধূমপানের ফলে প্রচুর অর্থ সম্পদ নষ্ট হয়। স্বল্প উপার্জনকারীরা এ অর্থ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। তখন সংসারে নেমে আসে দু:খ, দুর্দশা, অশান্তি।
৪। ধূমপানের ফলে নেশাগ্রস্ত হয়ে মাঝে মাঝে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। তখন তারা যে কোন অপরাধে লিপ্ত হয়।
৫। ইবাদতে বাঁধার সৃষ্টি হয়। সিগারেট, চুরুট, বিড়ি, গাজা, উক্কা, ইত্যাদি পোড়া তামাকের দুর্গন্ধ যে কত বিরক্তিকর তা অধূমপায়ী মাত্রই অনুভব করতে পারেন। ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে অন্য মুসল্লীদের খুবই কষ্ট হয়। তাই ধূমপান ইবাত কবুল হওয়ার অন্তরায়। তাইতো মহানবী (স.) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুর্গন্ধময় দ্রব্য খায়, সে যেন মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।’’
সর্বশেষে ধূমপানের প্রতিকার সর্ম্পকে আলোচনা করে আমি আমার লেখার ইতি টানছি। সমাজকে ধূমপানের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করার জন্যে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
১। পিতা-মাতাদের উচিত নিজে ধূমপান ত্যাগ করা এবং তাদের সন্তানদেরকে ধূমপানের কুফল সর্ম্পকে সর্তক করা। তারা যাতে গোপনে বা প্রকাশ্যে ধূমপান করতে না পারে সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখা।
২। রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম ও গণমাধ্যমগুলোতে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো প্রচার করা।
৩। বিভিন্ন সভা, সেমিনার করে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সমাজের মানুষের কাছে তুলে ধরা।
৪। শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, মসজিদের ইমাম ও সচেতন নাগরিকরা যার যার অবস্থান থেকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার সিলেবাচে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো অর্ন্তভূক্ত করা।
৬। ধূমপানের জন্য সহায়ক উৎপাদন খাতের উপর কঠোরতা আরোপ করা।
৭। ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি করে ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
৮। সরকারকে অইন প্রয়োগ করে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। প্রয়োজন হলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে।
৯। ধূমপানের বিরুদ্ধে প-িত ব্যক্তিবর্গরা যেসব উপদেশ বাণী প্রদান করেছেন যেসব উপদেশগুলো জনগণকে শুনানো।
১০। সরকার ও শিক্ষিত সচেতন নাগরিকগণ ধূমপানের বিরুদ্ধে পোস্টার, লিফলেট, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, দোকানে, অফিসে-আদালতে ঝুলিয়ে রাখা। তাতে লেখা যেতে পারে- ধূমপান ছেড়ে দিন, ফুলের সুবাস নিন। ধূমপান বিষপান, ধূমপান স্বস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইত্যাদি।
১১। পত্রিকার মাধ্যমে ধূমপানের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা।
১২। সর্বোপরি ধূমপানের শারীরিক, সামাজিক, আর্থিক ও নৈতিক দিক তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নি:সন্দেহে বলা যায় যে, ধূমপান একটি সামাজিক ও জাতীয় ব্যাধি। তাই একটি সুস্থ সবল জাতি গঠনে ধূমপানের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলা আজ সময়ের অপরিহার্য দাবি। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে ধূমপান মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করি।
প্রকাশকাল: বুধবার, ২৬ মে ২০০৪ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন