সকল প্রাণী মরনশীল। চিরকাল কোন প্রাণী বেঁচে থাকে না। একদিন না একদিন সবাইকে মরতে হবে। পৃথিবীতে সৃষ্ট জীবের এটাই পরিণতি। এই পরিণতি মানুষ বিনা বাক্যে মেনেই জীবন ধারন করছে। তবে এ মৃত্যুর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে। স্রষ্টার ইচ্ছায় মানুষ পৃথিবীতে আসে আবার তার ইচ্ছায় পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। ফলে কেউ মৃত্যুবরন করলের
আতœীয় স্বজনরা শোক প্রকাশ করে কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এ মৃত্যু যদি অস্বাভাবিকভাবে হয় তাহল্ েএ শোক কাটিয়ে উঠা যায় না। কিন্ত আমরা র্বতমানে বাংলাদেশে এ কোন মৃত্যুর দৃশ্য দেখেছি। দেশের প্রতিটি সাধারণ নাগগরিকের বুক কাপিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে আতঙ্কের ঢেউ। দেশ আজ বোমাতঙ্কে কাঁপছে। চৌদ্দ কোটি মানুষের বুক ধরপর করে কাঁপছে। কখন জানি কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো পিতা, কারো স্বামী বোমা হামলার শিকার হয়ে লাশ হয়ে ফিরে আসে। কোন নিরাপত্তা কোন কৌশলই বোমা হামলা থেকে রেহাই দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের জাতীয় নেতা নেত্রীরা একে অপরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। সরকারী দল বলছে, বিরোধীদলের মদদ পেয়ে এটা হচ্ছে, আবার বিরোধীদল বলছে, সরকারের ছত্রছায়ায় এ কাজ করা হচ্ছে। আবার তারা দায়ী করছে সরকারের শরীক দল জামায়াতে ইসলামকে। অথচ তার সুনিদিষ্ট কোন প্রমান নেই কারো কাছে। প্রমান ছাড়া এমন একটা র্স্পশকাতর বিষয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে দরকার দল মত র্নিবিশেষে সকলে মিলে জঙ্গি দমনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। এ ব্যপারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক দল ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্ত দুঃকজনক হলেও সত্যি ১৪ দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই আহ্বানকে তিনি প্রতারণা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার ভাষায়, দেশের বর্তমান অবস্থায় এ সরকারকে বিতাড়ন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, দেশ ও মানুষকে বাঁচানোর জন্য বর্তমান চলমান আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার নিজেই সন্ত্রাসী ও খুনী। তাদের সাথে খুনের শিকার বিরোধী দলের আলোচনা হয় কিভাবে? অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঃ জলিল এমপি বলেছেন, ’জামায়াতকে কেবিনেটে রেখে আলোচনা প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি যে কথা বলেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। তবে এটা সত্যি একটি দল চাচ্ছে চারদলকে ভাঙ্গন। চারদল থেকে যদি জামায়াতকে সরিয়ে দেয়া যায় তাহলে বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত। তাহলে কি জনগণের প্রশ্ন উঠতে পারে না যারা চারদলের ভাঙ্গন চাচ্ছে তাদের মদদের এসব বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে।
১৯৭১ সালে আমরা এক হয়েছিলাম বলেই দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। কিন্ত এর পরে আমরা আর একত্রিত হতে পারেনি। আর একত্রিত হতে পারিনি বলেই কোন জাতীয় ইস্যুর সমাধান হয়নি। প্রতিটি জাতীয় ইস্যুতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। বোমাবাজির ঘটনা ও একটি জাতীয় ইস্যু। আর এই ইস্যুতে বিরোধী দল সংলাপের অংশ নিতে ক্ষতি কি? শেখ হাসিনা চাচ্ছেন সরকারের পতন। কিন্তু সরকারের পতন হলেই কি বোমাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে এই গ্যারান্টি কি তিনি দিতে পারবেন? তাঁর শাসনামলেও তো বোমাবাজি হয়েছে। তখন কি তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন? সংলাপের জন্য কোন র্পূব শর্ত আছে বলে আমি মনে করি না। র্পূব র্শত দিয়ে কোন সংলাপ সফল হয় না। যারা র্পূবশর্ত দিয়ে সংলাপ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য এটা হতে পারে না। নিশ্চয় অন্য কোন উদ্দেশ্য এখানে লুকিয়ে আছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে। এটা একটা আশার দিক। আশা করি বিরোধী দলও সংলাপে অংশগ্রহণ করবে, তা না হলে তাদের উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। তারা কি আতœঘাতী বোমা হামলার চেয়ে সরকারের পতন ও জোটের ভাঙ্গনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে এ কথা বলতে হয় রাজনীতি এখন আর দেশ ও মানুষের মঙ্গলের জন্য নয়, শুধু ক্ষমতা দলের জন্য।
বাংলাদেশে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে বহুবার। কিন্ত জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন তেমন হয়নি এখনও মানুষ বুকের রক্ত পানি করে জীবনের ঘানি টানছে। আর আমাদের নেতা নেত্রীরা এসব দৃশ্য দেখছে আর একে অপরকে দোষারোপ করছে। তারা শুধু নিজেদের চেহারা ছাড়া অন্য কারো চেহারা দেখেন না। তারা জনগনের ভাষা বুঝতে অক্ষম। তারা কিভাবে জনগনকে বোকা বানিয়ে তাদের পক্ষে রায় নিবে সে ধান্ধায় ব্যস্ত।
আওয়ামী লীগ এক সঙ্গে সব দলের সাথে আন্দোলন করতে পারে, কিন্ত একই টেবিলে বসে আলোচনা করতে লজ্জা লাগে কেন? এটা আপামর জনগণের জিজ্ঞাসা। এদেশ কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয় যে যখন যা খুশী তাই নিয়ে লেখবেন। দেশের প্রয়োজনে সবাইকে লজ্জা, প্রতিহিংসা, ভেদাভেদ ভুলে একই টেবিলে বসে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে দেশকে যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষ তাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।
প্রকাশকাল: বুধবার, ৭ ডিসেম্বর ২০০৫ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন