রঙধনু ১. কতদিন যাবৎ লেখালেখি করছেন?
আমির ইশতিয়াক: ১৯৯৭ সালে
নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকালীন সময় থেকে আমার লেখালেখির হাতেখড়ি। সেই থেকে আজ
অবধি অবিরাম লিখেই যাচ্ছি। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো একনাগারে। লেখতে লেখতে নাকি লেখক
হওয়া যায়। তাই অবিরত লিখছি। জানিনা কতদুর যেতে পারব। আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়
২০০০ সনের জুন মাসে ‘মাসিক
চিকিৎসা সাময়িকীতে’।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা, সাপ্তাহিক
ম্যাগাজিন. মাসিক ম্যাগাজিন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-কম্পিউটার
ও চিকিৎসা বিষয়ক মাসিক পত্রিকা, সাধারণ জ্ঞান ভিত্তিক
মাসিক পত্রিকা, দৈনিক পত্রিকা, কিশোর
পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, ব্লগ,
ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করে আসছি।
রঙধনু ২. এপর্যন্ত কোনো বই প্রকাশ পেয়েছে কি? যদি পেয়ে থাকে কয়টি ও কী কী?
আমির ইশতিয়াক: এ পর্যন্ত
আমার দুটো একক ও তিনটি যৌথ বই প্রকাশ হয়েছে। একক বই দুটো হলো- (১) এ জীবন শুধু তোমার জন্য (উপন্যাস) ২০০৩ইং; (২) প্রাণের প্রিয়তমা (উপন্যাস) ২০০৬ ইং; আর
যৌথ বই তিনটি হলো- (১) জলছবি বাতায়ন নববর্ষ সংকলন ১৪২১
(সম্মিলিত সংকলন) ২০১৪ইং; (২) শব্দতরী পঞ্চম বর্ষ,
প্রথম সংখ্যা (সম্মিলিত সংকলন) ২০১৪ইং; (৩) জলছবি বাতায়ন শ্রাবণ সংখ্যা ১৪২১ (সম্মিলিত সংকলন) ২০১৪ইং;
রঙধনু ৩. লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?
আমির ইশতিয়াক: আমি যখন
ক্লাশ নাইনে পড়ি, তখন একবার এক সিনিয়র ভাইয়ের বাসায়
যাই। সেখানে একটি প্রেমের উপন্যাস দেখলাম। উপন্যাসটি দেখে কিছুক্ষণ পড়লাম।
উপন্যাসটি যতই পড়ছি ততই ভালো লাগছে। তখন ঐ সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে ধার চেয়ে
উপন্যাসটি বাসায় নিয়ে আসি এবং একদিনেই উপন্যাসটি পড়ে শেষ করে ফেললাম। তখন আমার
মাথায় ভাবনা আসল এমন বইতো আমিও লিখতে পারব। দেখিনা চেষ্টা করে। তারপর থেকে চেষ্টা
করতাম। এ রকম উপন্যাস লেখা যায় কিনা। প্রতিদিন এক পাতা দুই পাতা করে একটি উপন্যাস
লেখার চেষ্টা করলাম। দীর্ঘ এক বৎসর চেষ্টা করে একটি উপন্যাস তৈরি করলাম। জীবনের
প্রথম বই লিখতে গিয়ে অনেক কাটাকাটি করলাম। এখনকার মতো তখন কম্পিউটার ছিল না। তাই
কাগজে কলমেই লিখতে হয়েছে। বইটি মুদ্রণের উপযোগি করার জন্য চারবার পান্ডুলিপি তৈরি
করলাম। তাছাড়া আমার বড় ভাই ছড়া, কবিতা লিখতেন। তাঁর ছড়া ও
কবিতা পড়তাম। তাকে অনুসরণ করে লেখার চেষ্টা করতাম। বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তাম। যখন কোন লেখা চাইত তখন ঐ পত্রিকার নিয়মানুযায়ী লেখা
তৈরি করে পাঠাতাম। মাঝে মাঝে পত্রিকায় আমার নাম আসত। তা দেখে খুব ভাল লাগল। এভাবে
লেখালেখির শুরু হয়েছে। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত লিখছি।
রঙধনু ৪. আপনার লেখালেখিতে উৎসাহ পান কার কাছ থেকে?
আমির ইশতিয়াক: আমার
লেখালেখিতে পরিবারের কাছ থেকে তেমন কোন উৎসাহ পাইনি। প্রথমে আমি নিজে নিজে লেখার চেষ্টা
করেছি। আমার লেখা দেখে বন্ধুরা উৎসাহ দিয়েছে। বিশেষ করে আমি যখন কলেজে অনার্স পড়ছি
তখন আমার ক্লাশফেন্ড ও আমার শিক্ষকরা আমাকে লেখালেখিতে উৎসাহ দিতেন। রঙধনু ৫.
বাংলাসাহিত্যের বর্তমান অবস্থাসম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই? আমির ইশতিয়াক: আমি মনে করি বাংলা সাহিত্য এখন আগের মতো নেই। এখানে
রাজনীতি ঢুকে গেছে। লেখকরা দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। লেখকদের আদর্শ হওয়া উচিত
কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ, ঠাকুর,
জসিম উদ্দিন, হুমায়ুন আহমদ। তা না হয়ে
লেখকদের আদর্শ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। যা মুঠেও উচিত
নয়। সকল পাঠকরাই তার প্রিয় লেখককে ভালোবাসেন। কিন্তু সেই প্রিয় লেখক যখন দলীয়
রাজনীতিতে জড়িয়ে যান তখন পাঠক মর্মাহত হন। পাঠক তখন দ্বিধাভিক্ত হয়ে যান কোন দলের লেখককে
সমর্থন করবেন। আমাদের দেশে সৎ ও নিষ্ঠাবান লেখক দরকার যারা সাহিত্যকে দলীয়করণ
করবেনা। আরেকটি কথা না বললেই নই তা হলো প্রকাশকদের ব্যবসায়সুলভ মনোভাব। তারা মানের
বিচারে বই প্রকাশ না করে নাম ও টাকার বিচারে বই প্রকাশ করে। নতুনদের বই টাকা ছাড়া
প্রকাশ করতে চায় না। প্রকাশকদের কারণে নতুনদের আত্মপ্রকাশ না হওয়ায় বাংলা
সাহিত্যের অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়।
রঙধনু ৬. পত্রিকায় এবং অনলাইনে নতুন যারা লিখছেন তাদের
উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
আমির ইশতিয়াক: পত্রিকায়
এবং অনলাইনে যারা লিখছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমার কথা তাহলো- আপনারা বেশি বেশি করে বই
পড়ুন। প্রবীণ ও নবীন সব ধরনের লেখকের বই পড়ুন। প্রথমে ভাল পাঠক হউন। তাহলে ভাল
লেখক হতে পারবেন। অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের মতো করে লিখুন।
রঙধনু ৭. অনলাইন এবং পত্রিকায়
লেখে এমন কার কার লেখা ভালোলাগে?
আমির ইশতিয়াক: অনেকের
লেখায় ভাল লাগে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শাহ আলম বাদশা, মোহাম্মদ এনামুল হক, এম.এ কাশেম, নাসির আহমেদ কাবুল, আমির আসহাব, রুদ্র আমিনসহ আরো অনেকের।
রঙধনু ৮. এসময় অনলাইনে কারা কারা ভালো লিখছেন?
আমির ইশতিয়াক: শাহ আলম বাদশা, মোহাম্মদ এনামুল
হক, এম.এ কাশেম, নাসির আহমেদ
কাবুলসহ আরো অনেকে।
রঙধনু ৯. অনলাইন সাহিত্যগ্রুপ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন
কী?
আমির ইশতিয়াক: অনলাইন
সাহিত্যগ্রুপ সাহিত্য চর্চার জন্য ইতিবাচক একটি দিক। তবে শুধু মাত্র সাহিত্য
গ্রুপে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমাদেরকে এর পাশাপাশি অন্য সকল মাধ্যমেই লেখালেখি
করতে হবে।
রঙধনু ১০. আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসম্পর্কে বলুন?
আমির ইশতিয়াক: আরা ভবিষ্যৎ
পরিকল্পনা হলো একজন সফল লেখক হওয়া। বেশি করে গল্প লিখতে চাই। গল্পের মধ্যে নতুনত্ব
আনতে চাই। রঙধনু
১১. অনলাইনে সাহিত্যচুরিসম্পর্কে কিছু বলুন। কীভাবে তা
ঠেকানো যায়?
আমির ইশতিয়াক: অনলাইনে সাহিত্য
চুরি একটি মারাত্মক সমস্যা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ব্লগ, অনলাইন পত্রিকা ও ফেসবুক গ্রুপ কর্তৃপক্ষ চোরের শাস্তির বিধান রেখে
নীতিমালা তৈরী করবে যাতে অন্যের লেখা চুরি না করে। চোর ধরা পড়ার সাথে সাথে চুরির
প্রমাণসহ সামাজিক মিডিয়াতে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। চোর প্রমাণিত হলে ব্লগ ও ফেসবুক
গ্রুপ থেকে সদস্যপদ বাতিল করতে হবে। সর্বপরি লেখা যাতে অন্যরা কপি করতে না পারে সে
ব্যবস্থা করতে হবে।
রঙধনু ১২. রঙধনুসম্পর্কে কিছু মতামত ও পরামর্শ বলুন?
আমির ইশতিয়াক: বাংলা
সাহিত্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রঙধনু নিরলসভাবে প্ররিশ্রম করে
যাচ্ছে। রঙধনুর সব সদস্যরাই একটিভ। বিশেষ করে এডমিনরা খুব পরিশ্রমী। বিভিন্ন
ক্যাটাগরিতে যারা বিজয়ী হচ্ছে তাদের আরো উৎসাহ দেয়ার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা
করলে রঙধনু আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
রঙধনু ১৩. সাক্ষাৎকার দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
আমির ইশতিয়াক: আপনাকেও
ধন্যবাদ। যারা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার সাক্ষাৎকারটি পড়েছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ।
সাক্ষাতকার গ্রহণে কবি শাহ আলম বাদশা
২টি মন্তব্য:
আপনার মন্তব্য লিখুন... অনেক ভালো লাগলো আপনার সাক্ষাতকার পড়ে কবি আমির ইশতিয়াক ভাই
ধন্যবাদ আয়নাল ভাই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন