শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩

রাজনীতির নোংরা খেলায় ঝরে যাচ্ছে শত প্রাণ


দশম জাতীয় সংসদকে ঘিরে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য নিজেদের ইচ্ছামত সংবিধান সংশোধন করেছে। জনমতের তোয়াক্কা না করে সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদালতের দোহাই দিয়ে বাতিল করেছে। যার ফলে দীর্ঘদিন বিরোধীদলসহ দেশের ৯০% লোক এর বিরোধীতা করে আসছেতত্ত্ববধায়ক
সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে দীর্ঘ আড়াই বছর যাবত হরতাল, অবরোধ, লংমার্চ, সভাসমাবেশ করে আসছে বিরোধীদল এবং বার বার তারা বলে আসছে তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা পূর্ণবহাল না করলে নির্বাচনে যাবে না। সর্বশেষ তাই হলো। সরকার বিরোধীদলের কোন দাবীর প্রতি কর্ণপাত করেনি। সরকার একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল। আর তখন থেকেই শুরু হয়ে গেল বিরোধীদলের সহিংস রাজনীতির নোংরা খেলা
আওয়ামীল, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি সবাই যার যার মতো খেলছে। কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কেউ ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য। কেউ তাদের অস্থিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য। কেউ একুল থেকে ওকুল খেলে যাচ্ছে। এই রাজনৈতিক খেলার ফলে বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মরছে। কেউ মারামারি করে মরছে। কেউ পুলিশের গুলি খেয়ে মরছে। কেউ যৌথ বাহিনীর বন্ধুক যুদ্ধে মরছে। কেউ আগুনে পুরে মরছে। কেউ পথযাত্রী হয়ে মিছিলকারীদের হামলার শিকার হয়ে মরছে। এসব মানুষের মৃত্যু নিয়ে খেলোয়ারদের কোন চিন্তা নেই, আপেক্ষও নেই। তারা ক্ষমতার নেশায় বুদ হয়ে আছে। ক্ষমতা তাদেরকে ‍অন্ধ করে দিচ্ছে। এই ক্ষমতা যে চিরস্থায়ী নয় তা তারা বুঝে না। একসময় জনগণ এইসব খেলোয়ারদেরকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন তারাই এই জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে মরণ খেলায় মেতে উঠেছে। এদেশের মানুষ ভোটারবিহীন নির্বাচন দেখেছে কিন্তু প্রার্থীবিহীন নির্বাচন দেখেনি। বর্তমান সরকারের কল্যাণে দেশের জনগণ তা দেখছে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। কিছু কিছু রেকর্ড আমাদের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসলেও এই রেকর্ড আমাদের জন্য কতটা সৌভাগ্য বা মঙ্গলজনক তা ভবিষ্যই বলে দিবে। এইজন্য আপাযত আওয়ামীলগকে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। কারণ এমন নির্বাচন এদেশের ইতিহাসে হয়নি এমনকি বিশ্বে কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এটি গিনেজ বুকে স্থান পেলে আশ্চার্য হওয়ার কিছু নেই।  
এই খেলোয়াররা স্বার্থের জন্য এরশাদকে বন্ধু বানাতে পারে আবার স্বার্থের জন্য তাকে হাসপাতালে বন্ধি করে রাখতে পারে। আবার স্বার্থের জন্য বিশেদে পাঠাতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এরা স্বার্থের জন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে পারে আবার স্বার্থের জন্য সেই তত্ত্ববধায় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করতে পারে। এরা স্বার্থের জন্য যুদ্ধাপরাধে বিচারের নামে জামায়াত-বিএনপির বিচার করতে পারে। আবার স্বার্থের জন্য মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারকে বৈধ্যতা দিতেও এরা দ্বিধাবোধ করে না। এরা পারে না এমন কোন কাজ নেই। এরা শুধু পারে না তাদের হিংসাত্মক রাজনীতির বলি হয়ে যারা প্রাণ দিচ্ছে তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে। তাদের পরিবারকে একটু শান্ত্বনা দিতে। এরা লাশের উপর উঠে নৃত্য করতে পারে। বৈঠা দিয়ে পিঠিয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে। গান পাউডার, পেট্টোল, বোমা দিয়ে ও আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে। এরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাতে পারে আবার ঠুনকো ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিন্নমতপোষণকারীকে জেলে ঢুকিয়ে দিতে পারে।
আমরা এমন খেলা আর দেখতে চাই না। এই হিংসাত্মক, একতরফা খেলা আর সহ্য হচ্ছে না। আপনাদের প্রতি অনুরোধ রইল এই হিংসাত্মক রাজনৈতিক মরণ খেলা বন্ধ করুন। যদি এই মরণ খেলা বন্ধ না করেন তাহলে জনতার জনরোষ থেকে আপনারা কিন্তু রেহায় পাবেন না। এমন খেলা খেলুন যে আমাদেরকে আনন্দ দেই। যে খেলা দেখে দেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বস্থি পাবে। জনগণ আপনাদেরকে ভোট দেয় পাঁচ বছর শান্তিপূর্ণ খেলা উপহার দেয়ার জন্য। যে দল বেশী ভাল খেলে সে দল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আবার নির্বাচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জনগণ আপনাদেরকে নোংরা রাজনৈতিক খেলার জন্য ভোট দেয়নি। প্রার্থীবিহীন একতরফা নির্বাচেনর জন্য মাধ্যমে পাঁচ বছরের বেশী ক্ষমতায় থাকার জন্য ভোট দেয়নি। জনগণ আপনাদেরকে শাসন করে পাঁচ বছরে একদিন। আর আপনারা জনগণকে শাসন করেন পাঁচ বছর। এই একটা মাত্র দিন শাসন করার সুযোগ থেকেও আপনারা জনগণকে বঞ্চিত করছেন কোন অধিকারে?
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট

                               

কোন মন্তব্য নেই: