মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

জোট সরকারের তিন বছর সাফল্য ও ব্যর্থতা

গত ১০ অক্টোবর ২০০৪ইং তারিখে বর্তমান সরকারের ৩ বছর পূর্ণ হলো। তিন বছর পূর্তিতে জোট সরকারের সফলতা, ব্যর্থতার হিসেব নিকাশ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে একটি সরকারের পূর্ণ মেয়াদ হলো পাঁচ বছর। তাই পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে একটি সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার হিসেব করা খুবই কঠিন। তবুও ইতোমধ্যে জোট সরকার তিন বছরে বহুলাংশে সফল হয়েছে যা বিগত সরকার পাঁচ বছরেও করতে পারেনি। কোন সরকারই ১০০%
সফলতা অর্জন করতে পারবে না। কিছু না কিছু ব্যর্থতা থাকবেই। বর্তমান জোট সরকারেরও তিন বছর পূর্তিতে আমরা হিসেব করে দেখেছি সফলতা ব্যর্থতা দুই-ই আছে। সামান্য কিছু ব্যর্থতা ছাড়া বাকী সবটাই ছিল বর্তমান জোট সরকারের সফলতা। তবে যেহেতু সরকারের হাতে আরো দুই বছর সময় রয়েছে সেহেতু আশা করা যায় বাকী দুই বছরে সেই ব্যর্থতাটুকুও সরকার কাটিয়ে উঠতে পারবে। এবার দেখা যাক গত তিন বছরে সরকার কি কি সফলতা অর্জন করেছে।
১.    দেশকে আওয়ামী লীগ নির্যাতন হতে মুক্ত করা।
২.    পলিথিন মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। (তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় সরকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পলিথিন ব্যবহার করছে।)
৩.    ইটিভি বন্ধ করা।
৪.    আদমজী জুট মিল বন্ধ করা।
৫.    এবতেদায়ী মাদ্রাসায় বিনামূল্যে বই বিতরণ করা।
৬.    ঢাকা শহর থেকে ২০ বছরের পুরানো বাস উঠিয়ে দেয়া।
৭.    সন্ত্রাস নির্মূলে সেনা অভিযান সফল হওয়া।
৮.    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি চালু করা।
৯.    বয়স্ক ভাতার পরিধি বৃদ্ধি করা।
১০.    ঢাকা শহর থেকে বেবি ট্যাক্সি তুলে দেয়া।
১১.    আওয়ামীলীগ সরকারের সৃষ্ট গডফাদার বিলুপ্তি করা।
১২.    মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করা।
১৩.    নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যায়ন করার সুযোগ দিয়ে উপবৃত্তি চালু করা।
১৪.    দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০২ গঠন করা।
১৫.    কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী ফাঁসির রায় কার্যকর করা।
১৬.    দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা।
১৭.    বেসরকারী শিক্ষকদেরকে ঈদ বোনাস দেয়া।
১৮.    ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপনির্বাচন অবাধ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
১৯.    যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকরণ।
২০.    চট্টগ্রামে বিশাল অস্ত্রের চালান আটক করা।
২১.    পে-কমিশন গঠন করা।
২২.    কাদিয়ানীদের সমস্ত বই নিষিদ্ধ করা।
২৩.    নকলমুক্ত করে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা।
২৪.    এশিয়া মহাদেশে প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর বৃত্তিপ্রস্তর করা। বর্তমানে চট্টগ্রামে এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
২৫.    মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণ করা।
২৬.    ভাসানী নভোথিয়েটার উদ্বোধন করা।
২৭.    কৃষিঋণের সুদমওকুফ করা।
২৮.    ভৈরব বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, গাবখান, সেতু, শিকারপুর দেয়ারিয়া সেতু, বাগেরহাটে দাড়টানা সেতু, পাকশীতে লালনশাহ্ সেতু, ধরলা সেতু, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গাসহ ছোট বড় অসংখ্য সেতু চালু করা হয়েছে। তাছাড়া ঘোড়াশাল সেতুসহ অনেক সেতু নির্মাণাধীন রয়েছে। যমুনা সেতুর উপর দিয়ে রাজশাহী খুলনা ও লালমনিরহাট থেকে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি রেল চলাচল শুরু করা।
২৯.    দেশের সকল জেলা শহরে বিটিভির ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত করা।
৩০.    সিলেট ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা। জিয়া আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর বহুতল বিশিষ্ট কারপার্ক নির্মাণসহ টার্মিনাল ভবনের সম্প্রসারণ করা।
৩১.    কুষ্টিয়ায় লালন একাডেমী কমপ্লেক্স নির্মাণ করা।
৩২.    ক্রীড়া ক্ষেত্রে সফলতা রয়েছে অনেক। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত মুসলিম মহিলা গেমসে বাংলাদেশ মহিলা দল এ্যাথলেটিক্সে ১টি স্বর্ণ, ১টি রৌপ্যসহ ৭টি পদক লাভ করে। দাবার জিয়াউর রহমান গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব লাভ করে। ২০০২ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশীয় যুব ফুটবল (অনুর্ধ্ব ২০) বাছাইপর্বে বাংলাদেশ এ গ্রুপ চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০২ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত তিন জাতি চ্যালেঞ্জকাপ ক্রিকেট ট্রফিতে বাংলাদেশ ‘এ’ দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ৯ম সাফ গেমসে বাংলাদেশ ৩টি স্বর্ণসহ ৪০টি পদক লাভ। ২০০৪ সালে চ্যালেঞ্জ কাপ হকিতে বাংলাদেশ শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়। তাছাড়া আরো অসংখ্য সফলতা রয়েছে খেলাধূলায়।
৩৩.    বিদেশী সাহায্য ছাড়াই স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করা।
৩৪.    দুর্নীতিমুক্ত ত্রাণ তৎপরতা।
৩৫.    সন্ত্রাস নির্মূলে র‌্যাব গঠন করা।
৩৬.    ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রির্পোট পেশ করা।
তাছাড়া ছোট বড় অসংখ্য সফলতা রয়েছে বর্তমান জোট সরকারের যা লিখতে গেলে ছোটখাট একখানা বই হয়ে যাবে।

এবার বর্তমান জোট সরকারের ব্যর্থতার চিত্রের দিকে নজর দেয়া যাক।
১.    দেশের বিরুদ্ধে বিদেশে গিয়ে অপপ্রচারকারীদের শাস্তি না দেয়া।
২.    কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা দেয়া।
৩.    লোডশেডিং বন্ধ না করা।
৪.    স্বতন্ত পরীক্ষাকেন্দ্র গঠন না করা।
৫.    বোমা হামলা বৃদ্ধি।
৬.    ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস।
৭.    ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতি।
৮.    দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি।
৯.    ফাজিল ও কামিলকে ডিগ্রী ও মাস্টার্সের মান না দেয়া।
১০.    এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে প্রাইমারীর ক্ষমতায় এনে উপবৃত্তি না দেয়া।

আগামী দুই বছরে যদি উপরোক্ত ব্যর্থতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে তাহলে আশা করা যায় বর্তমান জোট সরকার ১০০% সফলতা অর্জন করতে পারবে।

প্রকাশকাল: বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০০৪ইং

কোন মন্তব্য নেই: