মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪-এর সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘র‌্যাবের ক্রসফায়ার নাটক’ এবং আমার কিছু কথা

এক.
ইতোমধ্যে র‌্যব সদস্যদের অপারেশনের সময় ক্রসফায়ারে দেশের অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মারা গেছে। গত পাঁচ মাসে অসংখ্য সন্ত্রাসীকে র‌্যাব সদস্যরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে পুলিশ প্রশাসনের অব্যাহত ব্যর্থতার মধ্যে র‌্যাবের এই সাফল্য সাধারণ মানুষও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। আর এর মধ্যেই চারদলীয় জোট সরকারের ঘোষিত সন্ত্রাস বন্ধে আন্তরিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু র‌্যাবের এই অসাধারণ সাফল্য আওয়ামী লীগ নেতাদের গায়ে
আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কারণ তারা জানে গত নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়েছে শুধু মাত্র সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থতার কারণে। এখন যদি জোট সরকার সন্ত্রাস দমনে সফলতা অর্জন করে ফেলে তাহলে তারা আগামী নির্বাচনেও পরাজিত হবে। তাই যে কোন মূল্যে এই সরকারকে ব্যর্থ সরকার হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। তাইতো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাহেব র‌্যাবকে ‘নরঘাতক বাহিনী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দুই.
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছিল ‘র‌্যাবের ক্রসফায়ার নাটক।’ এই প্রতিবেদনের শুরুতেই রঞ্জন সেন লিখেছেন, “হাট এটাকের পর ক্রসফায়ার। অপরেশন ক্লিনহার্টের পর র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। হলিউড-বলিউডের থ্রিলার ছবিতে দেখা যায় এমন দৃশ্য। আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার সদস্যরা যখন তাদের হেফাজতে থাকা কাউকে খুন করতে চায় তখন তাকে তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে আদেশ দেয় পালিয়ে যেতে। এরপরের দৃশ্য গোলাগুলি। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে আটক সন্ত্রাসী। বাংলাদেশে এখন প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। যা হুবহু মিলে যায় হলিউড-বলিউডের ছবির দৃশ্যপটের সাথে। এর জেনোরক নাম এনকাউন্টার। বাস্তবে ক্রসফায়ার।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নতুন অস্ত্র র‌্যাব-এর কর্মকান্ড নিয়ে ইতোমধ্যে জনমনে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকান্ডের সাথে অপারেশন ক্লিনহার্টের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। জোট সরকারের ক্ষমতায় এক বছরের মধ্যে দেশকে সন্ত্রানমুক্ত করার আওয়াজ তুলে অপারেশস ক্লিনহাট শিরোনামে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআরকে মাঠে নামিয়ে দেয়া হয়। অভিযানের শুরুতে কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের আটক করা হলেও সপ্তাহ না গড়াতে সেনা সদস্যদের আসল রূপ বের হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্লিনহার্টেল প্রধান শিকারে পরিণত হয়। প্রাণ হারায় ৫৪ জন। সেনা ও পুলিশ সদস্যদের কথিত সন্ত্রাস বিরোধী এ অভিযান নিয়ে দেশব্যাপী চরম বির্তক সৃষ্টি হলে সরকার অপারেশন ক্লিনহার্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ক্লিনহার্টের তিক্ত অভিজ্ঞতা মানুষ ভুলার আগেই এ বছরের এপ্রিল মাসে সদস্যদের সমন্বয়ে গড়া র‌্যাব বাহিনীকে। অপারশেন ক্লিনহার্টের মতোই র‌্যাব সদস্যরা কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে বাহবা কুড়িয়ে নেয়। পাশাপাশি চালাতে থাকে নিজের মূল কাজ। র‌্যাব সদস্যদের হাতে ইতোমধ্যে খুন হয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা মঞ্জুর ইমাম হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী হাসান ইমাম, ...।”
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা উপরোক্ত রঞ্জন সেনের কথাগুলো পড়ে কি বুঝলেন? র‌্যাব বাহিনীর কি কোন সফলতা এখানে আছে? এই র‌্যাব বাহিনীকে রঞ্জন সেন হলিউড-বলিউডের থ্রিলার ছবির দৃশ্যপটের সাথে তুলনা করেছেন। র‌্যাব নাকি মানুষ খুন করেছে! এ পর্যন্ত র‌্যাবের ক্রসফায়ারে যারা নিহত হয়েছে তারা কি মানুষ? তারাতো মানুষ নয় শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাহলে এই রঞ্জন সেনদের এই সন্ত্রাসীদের জন্য এত দরদ কেন? কি চায় তারা? এই রঞ্জনদের কারণেই আজ সন্ত্রাসীরা, বোমাবাজরা সাহস পাচ্ছে। তারা চায়না দেশ হতে সন্ত্রাস নির্মূল হউক। তারা যদি সন্ত্রাস নির্মূল করতে চাইতোই তাহলে এমন একটা সফল বাহিনীকে নরঘাতক, খুনী বাহিনী বলতে পারতোনা। তারা মূলত: চায় এ দেশ একটা সন্ত্রাসী, ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হউক। এইসব জ্ঞান পাপী অন্ধ লোকদের কারণেই দেশে আজ শান্তি নেই। আমরা জানি যারা অন্ধ তারা কিছুই দেখেনা। কিন্তু এসব আওয়ামী লীগ কট্টরপন্থী অন্ধরা নিজেদের দোষ কখনো দেখেনা, বিপক্ষ দলের দোষতো দেখেই সাথে বিপক্ষ দলের ভাল কাজকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন। আসলে তাদের কাজ হচ্ছে বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করা। তারা কখনো দেশের শান্তি চায়না। তারা ক্ষমতায় থেকে পারেনি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। ক্ষমতার বাইরে থেকেও সরকারকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।
বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তো নির্বাচনে ফেল করার পর বলেই ফেলেছেন, ‘এ সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না। তাইতো ২০০১ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে আজ পর্যন্ত একের পর এক ইস্যু সৃষ্টির মাধ্যমে হরতাল, ভাংচুর করে রাজনৈতিক মাঠ গরম করে রাখছে। নির্বাচনে ভরাডুবির পর প্রথমে স্থূল কারচুপির অভিযোগ তুলেই আন্দোলনে নেমেছে শপথ গ্রহণ করবে না, সংসদে যাবে না, সংসদে কথা বলতে দেয়া হয় না, সংসদ থেকে ওয়াক আউট, ৩০ এপ্রিল ডেটলাইন, টার্মকার্ড, শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি, এক দফা আন্দোলন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন, ড. হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা অবশেষে স্বাভাবিক মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে প্রচার করা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ইত্যাদি ইস্যুতে তারা ৩ বছর দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। এখন তারাই র‌্যাবের সাফল্যকে নাটক বলে প্রচার করছে। (অসমাপ্ত)

প্রকাশকাল: বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৪ইং

কোন মন্তব্য নেই: