আর্শ্চযের বিষয় যে, এই অকৃতজ্ঞ হুমায়ুন আজাদ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসে গত ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানবাধিকার ও লেখকের স্বাধীনতা: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ বক্তৃতায় অংশ নেন। এটাই ছিল তার জীবনের সর্বশেষ আলোচিত বক্তৃতা। এই বক্তৃতায় তিনি মসজিদ-মাদ্রাসা, সমাজ-সংস্কৃতি, সরকার ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য পেশ করেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘প্রগতিশীল দলগুলোর এখন সময় হয়েছে দেশের মসজিদ মাদ্রাসায় খোঁজ নেয়া যে, এসব জায়গায় ধর্ম চর্চা হয়না, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ হয়। মসজিদ-মাদ্রাসাকে পবিত্র স্থানে গণ্য করা হলেও উগ্রপন্থীরা মসজিদকে ব্যবহার করছে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। দুর্নীতি কালোবাজারি যত বাড়ছে মসজিদ-মাদ্রাসাও তত বাড়ছে। আমাদের দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা কেন্দ্রিক মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কালোবাজারিরাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছে। মৌলবাদ শুধু মানুষের অধিকারই বিনষ্ট করে না, মানুষকে বিনষ্ট করে। কারণ, মৌলবাদ কারো অধিকার স্বীকার করতে চায় না। বাংলাদেশ এই বন্যার চেয়েও মৌলবাদে প্লাাবিত হয়েছে বেশি। জিয়াউর রহমান সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করেছে এবং লম্পট, বদমাশ স্বৈরাচার এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ আমাদের দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারহীন করে তুলেছে। রাষ্ট্রধর্মের পরিণতি হলো বাংলাদেশের মৌলবাদ। এদেশে মানুষের বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। আফগানিস্থানের মৌলবাদ বাংলায় রপ্তানি করা হয়েছে। বিদেশের টাকা এনে আমাদের দেশের মানুষকে মৌলবাদে দীক্ষিত করা হচ্ছে।’
এছাড়াও তিনি আরো অনেক কথা বলেছেন। তখন ড. হুমায়ুন আজাদের এই আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। বিভিন্ন সংগঠন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল, সমাবেশ করে। ধর্মের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও করুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য আপামর জনগণ তার শাস্তি দাবি করেন। পরে তিনি মৌলবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জার্মান লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পেন’ এর আমন্ত্রণে এক বছরের জন্য ফেলোশীপ নিয়ে ৭ আগস্ট শনিবার জার্মানীর মিউনিখের উদ্দেশ্যে চুপিসারে যাত্রা করেন এবং ৮ আগস্ট সেখানে পৌঁছান। ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ‘পেন’-এর সভাপতির সাথে সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়রের এক ঘন্টা পার হওয়ার পরও তিনি সেখানে না গেলে এবং তাকে টেলিফোনেও না পেয়ে ‘পেন’ এর একজন সদস্য তার এ্যাপার্টমেন্টে যান। সেখানে তার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পুলিশকে ডাকা হয়। পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ভিতরে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পায়। পরে জরুরী ডাক্তার এসে তাকে পরীক্ষা করে মৃত্যু সর্ম্পকে নিশ্চিত হন এবং তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ১১ আগস্ট বুধবার দিবাগত রাত ১০ থেকে ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার মধ্যে কোন এক সময় ঘুমের মধ্যে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ঐ রাতে একটি ককটেল পার্টিতে যান এবং সেখানে তিনি খুবই উৎফুল্ল ছিলেন। পার্টিতে পানাহারের পর তিনি তার কক্ষে রাতে ঘুমাতে যান। ধারণা করা হয় তিনি ঐ রাতে মদপান করেছিলেন।
মদপান সর্ম্পকে তিনি তার ‘আমার বিশ্বাস’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন। মধ্যপান একেবারে খারাপ নয়, আমি খাই, শামসুর রাহমান খান এবং খায় লাখ লাখ বাঙালী এবং খেয়েছেন গ্যালিলিও, নিউটন, শেক্সপিয়ার টলস্টয়, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন, খান অজস্র সচিব, সম্পাদক, অধ্যাপক, মন্ত্রী, সেনাপতি, রাষ্ট্রপতি, উপাচার্য, বিচারপতি, দূত, পুলিশ। নিষেধ মানসিক রোগ সৃষ্টি করে; মুসলমান যখন মদ খায় তার মনে অপরাধবোধ জন্মে, কেননা পরিবার ও সমাজ তাকে মনে করে মাতাল। দেখে খারাপ চোখে... এই অসুস্থতা থেকে উঠে আসতে হবে মুসলমানকে; মদকে মনে করতে হবে একটি পানীয়; যা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ পান করে।’
অথচ জার্মানীতে হুমায়ুন আজাদের স্বাভাবিক মুত্যুকে মেনে নেয়নি তার পরিবার, হুমায়ুনপন্থী ও আওয়ামী লীগ পন্থিরা। তারা এ মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে দাবি করে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলসহ অধিকাংশ নেতাই হুমায়ুন আজাদের নতুন মৃত্যুর জন্য চারদলীয় জোট সরকার ও মৌলবাদীদেরকে দায়ী করেন। এ মৃত্যুর জন্য হুমায়ুন আজাদের বড় মেয়ে মৌলি আজাদ সরাসরি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘৭ তারিখ বাবাকে বিদায় দিতে গিয়ে এয়ারপোর্টে নিজামীর সাথে দেখা হয়। তখন থেকেই আমার ভয় করছিলো। এ ঘটনার মাধ্যমে আমার সেই আশংকাই সত্যি হল। হুমায়ুন আজাদের পরিবারকে সান্ত¡না দিতে আসা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকেই মৌলি আজাদ কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘‘আপনারা এখানে কেন? রাস্তায় নামেন, আন্দোলন করেন। বড় একটা ইস্যু পেয়েছেন, এই ইস্যুতে মৌলবাদীদেরকে দেশ থেকে বের করেন। জামাতকে দুর করেন। তার এই বালিকা সুলভ আবেগতাড়িত বক্তব্যের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মিছিলও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
ড. হুমায়ুন আজাদের লাশ দাফন নিয়ে প্রথমে পরিবার সূত্রে জানানো হয় তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার মরদেহ মেডিকেলে কাঁটাছেড়ার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করে গেছেন। তার কথানুযায়ী লাশ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে দেয়া হবে। কিন্তু এর দুদিন পরই তার লাশ দাফন নিয়ে নতুন নাটক রচনা করেন। পরিবার থেকে দাবি তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থিত কাজী নজরুল ইসলামের মাজারের সাথে তার লাশ দাফনের। এ মাজার এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের তীর্থকেন্দ্রের মতো। ১৯৭৬ সালের পর এ পর্যন্ত অনেক নামী-দামী ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ এ পর্যন্ত কাউকে এখানে দাফন করার দাবী উঠেনি। কিন্তু যিনি ধর্মে অবিশ্বাসী ও স্বঘোষিত নাস্তিক তার লাশ দাফন করার দাবী তোলাটা একটা হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ড. হুমায়ুন আজাদ বরাবরই ধর্মের বিদ্বেষী ছিলেন। এমনিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্ম্পকেও তার বক্তব্য ছিল আপত্তিকর।
‘আমার বিশ্বাস’ গ্রন্থে তিনি বলেছেন, ‘তরুণ বয়স থেকেই অস্বস্থি বোধকরি আমি নজরুলের লেখা পড়ার সময়, তিনি মাঝারি লেখক বলে নয়, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিভ্রান্ত লেখক বলে। তিনি ভারী বোজার মত চেপে আছেন বাঙালী মুসলমানদের উপর। বাঙালী মুসলমান তাকে নির্মোহভাবে বিচার করতে পারবে না বহুদিন। বাঙালী মুসলমান প্রগতিশীলরাও যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল আর তারা পড়ে না, নজরুলকেও পড়ে না, শুনে শুনে বিশ্বাস করে যে নজরুর বিদ্রোহী। প্রচারে প্রচারে তাকে আমি বিদ্রোহী বলেই মনে করছি যখন বালক ছিলাম। বেশ কিছু পদ্যে গদ্যে দেখেছিও তাঁর বিদ্রোহী রূপ। কিন্তু তিনি বাংলা ভাষার বিভ্রান্ত কুসংস্কার উদ্দীপ্ত লেখকদের মধ্যে প্রধান। বেশি ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না, কয়েকটি মাত্র উদাহরণ দিচ্ছি। গানের পরে গানে তিনি লিখেছেন, নামাজ পড়, রোজা রাখ, কালেমা পড় ভাই’/ তোর আখেরের কাজ করে নে, সময় যে আর নেই, শোন শোন য়্যা এলাহি আমার মুনাজাত/ তোমারি নাম জপে যেন হৃদয় দিবস রাত, মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই,... অবশ্য এগুলোকে অনেকে মনে করতে পারেন খুবই বিদ্রোহী ও প্রগতিশীল কান্ড, কিন্তু এখানে কোন বিদ্রোহীকে পাচ্ছি না।’
যিনি জাতীয় কবিকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলেছেন। অথচ তার পরিবারের সদস্যরা তাকে নজরুল ইসলামের মাজারের পাশে কবর দিতে চাচ্ছেন। যা তার বিশ্বাসের সাথে পরিস্কার বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। তিনি একই গ্রন্থে ধর্ম সর্ম্পকে বলেছেন, ‘আমি জানি আমি কোন মহাপরিকল্পনা নই, কোন মহাপরিকল্পনার অংশ নই। আমাকে কেউ তার পরিকল্পনা অনুসারে সৃষ্টি করেনি। একরাশ প্রাকৃতিক ক্রিয়ার ফলে আমি জন্মেছি; অন্য একরাশ প্রাকৃতিক ক্রিয়ার ফলে আমি মরে যাব; থাকব না; যেমন কেউ থাকবে না; কিছুই থাকবে না। এ সর্ম্পকে সন্দেহ পোষণের কোন কারণ আমি দেখি না। ... ধর্ম এবং ধর্মের বইগুলো অলৌকিক নয়, ধর্মের বইগুলো জ্ঞানের বইও নয়; পঞ্চম শ্রেণীর বই পড়লেও যতোটা জ্ঞান হয়, ধর্মের বইগুলো পড়লে ততোটা জ্ঞান হয় না, বরং অনেক অজ্ঞানতা জন্মে। বিশ্বাস ও অজ্ঞানতা পরস্পরের জননী; জ্ঞান জন্মে অবিশ্বাস থেকে। বিশ্বাস মাত্রই অবিশ্বাস; জ্ঞান বিশ্বাসের বিষয় নয়, জানার বিষয়। কোনো ধর্ম পন্ডিত যদি সারাজীবন ধর্মের বই পড়ে, সে থেকে যায় পঞ্চম শ্রেণীর শিশুটির থেকেও মুর্খ। ... রাজনীতিবিদেরা ব্যবহার করে ধর্মকে; তারা দেখতে পায় ক্ষমতায় যাওয়ার সহজ উপায় ধর্মের উদ্দীপনা সৃষ্টি; তাদের কল্যাণ করতে হয়না মানুষের, বিকাশ সহজ হচ্ছে ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকা। কিন্তু এতে সমাজ নষ্ট থেকে নষ্টতর হতে থাকে, যা এখন ঘটছে বাংলাদেশে।’
এই গ্রন্থে তিনি মৃত্যু সর্ম্পকে লিখেছেন, ‘মৃত্যু হচ্ছে জীবন প্রক্রিয়ার উল্টানো অসম্ভব পরিসমাপ্তি; আর ফেরা নেই, আর অগ্রগতি নেই; চিরকালের জন্য থেমে যাওয়া।... আমি জানি ভালো করেই জানি, কিছু অপেক্ষা করে নেই আমার জন্যে; কোন বিস্মৃতির বিষন্ন জলধারা কোনো প্রেতলোক, কোনো পুনরুত্থান, কোন বিচারক, কোন স্বর্গ, কোন নরক, আমি আছি আমি একদিন থাকবো না, মিশে যাবো, অপরিচিত হয়ে যাবো, জানবো না আমি ছিলাম। নিরর্থক সব পুন্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন সমস্ত প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; জঙ্গলে জলাভূমিতে, পথের পাশে, পাহাড়ের চূড়ায়, নদীতে, মরুভূমিতে, তুষারস্তুপে, কিছুই অপবিত্র নয়, যেমন কিছুই পবিত্র নয়; কিন্তু সবকিছুই সুন্দর, সবচেয়ে সুন্দর এই তাৎপর্যহীন জীবন।’’
স্বঘোষিত নাস্তিক ড. হুমায়ুন আজাদের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রী মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের সাথে কবর দেয়ার দাবী প্রত্যাখ্যান করেন দেশের সর্বস্তরের মুসলমান। এ দাবি প্রত্যাখ্যান করার জন্য প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সারাদেশের মানুষ তার লাশ দাফন করাকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন। ফলে জাতীয় কবির মাজারের পাশে হুমায়ুন আজাদকে সমাহিত করা হয়নি।
যারা হুমায়ুন আজাদকে ইস্যু করে চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। আশা পূরণ হয়নি আঃ গাফ্ফার চৌধুরী গংদের। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু জার্মানীতে হওয়ায় তারা একটু অখুশী হয়েছেন। জার্মানীতে মৃত্যু না হয়ে যদি বাংলাদেশে হতো তাহলে হয়তো তারা আরেকটি ইস্যু পেয়ে যেতেন। তবে চার দলীয় জোট সরকারের ভাগ্য ভাল যে তার মৃত্যুটি বাংলাদেশে হয়নি। তা না হলে এই সুবিধাবাদী লোকেরা চারদলীয় জোটকে বেকায়দায় ফেলে দিত।
অবশেষে সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৭ আগস্ট শুক্রবার কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ জেলার রাঢ়িখাল গ্রামে দু’দফা জানাযা শেষে দাফন করা হয়। জানা যায়, এই জানাযা পড়ানো নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে যখন তার লাশ আনা হয় তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ তিনি আগেই ছুটিতে ছিলেন। লাশ সামনে নিয়ে যখন কোন ইমাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি উক্ত মসজিদের মোয়াজ্জিনকে বাধ্য করেন তার জানাযা পড়ানোর জন্য। গ্রামের বাড়িতে জানাযা পড়ানো নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়। পরে তাদের এক আত্মীয় মৌলভী জানাযা পড়ান। তবে তাকে গোসল দেয়া হয়নি। দু’দফা জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে তার জীবনের ইতি ঘটে।
বস্তুত যিনি একজন স্বঘোষিত নাস্তিক। তার জানাযা হল কেন? এটা সকল মুসলমানের প্রশ্ন। যিনি তার লাশকে মেডিকেলে দান করার ইচ্ছা পোষন করেছেন কেন তা না করে তার বিশ্বাসের উপর আঘাত করা হল? উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর একটাই খুঁজে পাওয়া যায় তাহলো ইসলামদ্রোহী ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরা ইসলাম যা বলবে তার উল্টোটা করবে। তাই তারা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, ‘তোরা বলছিস জানাযা পড়া যাবেনা, দাফন করা যাবে না। দ্যাখ আমরা দুটোই করে দেখিয়ে দিলাম। তোদের কথা আমরা মানি না। তোরা যা বলবি ঠিক তার উল্টোটা আমরা করব। আর একদম তাই করে ছাড়লেন তারা। মৌলবাদীদের উপর জেদ উঠাতে গিয়ে তারা হুমায়ুন আজাদের ইচ্ছা মোতাবেক তার লাশ জাতীয় মেডিকেলে দান করার ব্যাপারকেও ছুঁড়ে ফেলে দিতে কোন দ্বিধাবোধ করেনি।
ড. হুমায়ুন আজাদ যে স্বঘোষিত একজন নাস্তিক ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর নাস্তিকের যে জানাযা ও দাফন-কাফন করা যাবে না তা আল্লাহ তায়ালা কুরআনপাকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আর তাদের মধ্য হতে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনোও তার জানাযা পড়বেন না এবং তার কবরের পাশেও যাবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অস্বিকৃতি জ্ঞাপন করেছিল এবং তারাতো নাফরমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।’ (সূরা তওবা, আয়াত-৮৪)
ইসলামের প্রতি কি পরিমাণ ঘৃণা ও ক্ষোভ থাকলে ‘পাক সাব জামিন সাদবাদ’Ñএর মতো একটা উপন্যাস লেখা সম্ভব, সেটা একমাত্র যারা বইটি পড়েছেন তারাই অবগত আছেন। যারা এই বইটি পড়েনটি বা তার সর্ম্পকে জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে বইটির কিছু অংশ তুলে দেয়া হল।
১। ওর ঠোঁট আর বুক দু’টি আমার ভালোভাবেই চেনা। ওগুলো আমি খেয়েছি, সেদ্ধ ডিমের ভর্তা বানিয়েছি; ভর্তা আমি ভালোই বানাতে পারি। দাঁত দিয়ে কেটেছি, আমার দাঁতগুলো স্নায়ুহীন নয়, ওগুলোরও বোধ আছে। স্তনে দাঁতের লাল দাগ আমার চুনির থেকে সুন্দর লাগে। (পৃষ্ঠা-৫১)
২। ... একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি। ঠোঁট দেখি, মোটা ঠোঁট আমার পছন্দ। জিভ দেখি, মোটা ধারালো চ্যাপ্টা খসখসে জিভ আমার পছন্দ। স্তন দেখি, মাঝারি স্তন আমার পছন্দ। ব্লাডারের মতো পানি ভরা স্তন আমি সহ্য করতে পারি না। উরু দেখি মাংসল উরু আমার পছন্দ। (পৃষ্ঠা-২৬)
৩। এই দুনিয়ার মালাউন উর্বশী মাইয়া গুলান যখন কাপড় তুলে চনচন করে প্রস্রাব করে শব্দটা আমার খুব ভাল লাগে। (পৃষ্ঠা-৪৫)
৪। ... ওরা বলে, মাগো দুই রানের মাঝখানে ওটা আমাগো লিঙ্গ।... আমি বলি না, ওটা লিঙ্গ না। পিস্তল, এম-১৬, ওইটা খোদার দেয়া পিস্তল, এম-১৬। ওইটা চালাতে হবে। মালাউন মেয়ে গুলোর পেটে মোমিন মুছলমান ঢুকিয়ে দিতে হবে। (পৃষ্ঠা-২৬)
৫। ... এক রাত থাকলে তোমার মাইয়া নষ্ট অইবো না। ফুল আমি নষ্ট করি না। ফুলের গন্ধ নিয়ে ছেড়ে দেই। (পৃষ্ঠা-৩৬)
৬। ... ওর দু’টি স্তন পাকা গন্ধমের মত পেয়ারা গাছের ডালে ঝুলতে দেখি। তার শরীরটিকে আমার একটি সোনালী মাংশের মত মনে হয়। (পৃষ্ঠা-৮৫)
৭। ... আমি আর কনক লতা নগ্ন হয়ে শুয়ে একটু একটু পান করতে থাকি। কনক লতার দেহটি পান করবো না, সিভাস রিগ্যাল পান করবো বুঝতে পারি না। (পৃষ্ঠা-৬০)
৮। ... কনক লতার দেহ কনক লতার মতোই। একবার ছেঁড়া ফাঁড়া ভাঙ্গাচোড়ার পরই গুমিয়ে পড়ে। মেয়েটি মনে হয় একবারই প্রথম আমার হুজুরকে (লিঙ্গ) প্রবেশ করাতে বেশ পেরেশান হতে হয়। তবে ঐ পেরেশানিটাই হল বেহেস্তের সুস্বাদু। মেয়েটা কনক লতার মতই নরম, কেবল গলতে থাকে...। বকুলমালা হেসে বলে একবারেই কাহিল হুজুর!! আমার যে আরও দশবার লাগব। ওকে ফলের মতই পিষে ফেলা যায়। (পৃষ্ঠা-৫৩)
যারা সচেতন পাঠক/পাঠিকা তারা উপরোক্ত কয়েকটি লাইন থেকেই বইটির বিষয়বস্তু সর্ম্পকে জেনে যাবেন। এই বইটির মত ‘নারী’ নামে আরেকটি বই প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। ১৯৯৫ সালে তৎকালিন বিএনপি সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চ আদালতের রায়ে ‘নারী’ নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল ঘোষণা করে। আর তখন থেকেই হুমায়ুন আজাদ দুঃসাহসী হয়ে উঠেন। যার ফসল হিসেবে ‘পাক সাব জামিন সাদবাদ’ প্রকাশিত হয়। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা উপরোক্ত আলোচনা থেকে কি বুঝলেন? ওনি কি একজন লেখক! তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আচ্ছা আপনারাই বলুন তার এ লেখা থেকে পাঠক সমাজ কি শিখবে?
পরিবেশে আমি বলব, দুর্জন বিদ্ব্যান হলেও পরিত্যাজ্য। একজন খুনী কাউকে গলা কেটে খুন করে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়; আর একজন বিকৃত রুচির লেখক তার কলমের খোঁচায় মানুষকে পরিচালিত করে, মানুষের পবিত্র বিশ্বাস যন্ত্রণা নিয়েই তাকে বেঁচে থাকতে হয়। অসহিষ্ণু কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়।
প্রকাশকাল: বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪ইং
1 টি মন্তব্য:
আপনি খুব সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন
অপরাধী তো সেই?
যে অবিশ্বাসের দর্শন প্রতিষ্ঠা করে...ছি ছি
বিশ্বাস ছাড়া তো মানুষই বাচেনা?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন