ভিক্ষাবৃত্তি আমাদের সমাজের একটি অন্যতম সমস্যা। সমস্যাটির ব্যাপকতা ও গভীরতা বুঝতে আমাদের বেগ পেতে হয় না। কেননা আমরা যেদিকে তাকাই সেদিকেই এর চিত্র দেখতে পাই। যেমন- রেলস্টেশন, ট্রেনের ভিতর, বাসস্টেশন, বাসের ভিতর, লঞ্চঘাট, লঞ্চের ভিতর, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, ওভারব্রিজ, ফুটপাত, মসজিদ-মাদ্রাসা, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মাজার, ওরশ, ঈদগাহ ও ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলসহ যেকোন সাধারণ জনসমাবেশে ভিক্ষুকদেরকে দেখা যায়। আবার অনেক ভিক্ষুক আছে তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তাদের উপস্থিতির কথা জানান দেয়। তারা কেবল তাদের উপস্থিতির খবর জানিয়েই
ক্ষান্ত হয় না তারা তাদের শারীরিক অক্ষমতার পরিচয় দিয়ে জনগণনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। বিভিন্ন সুরে তারা কাকুতি মিনতি করে তাদের অসহায়ত্বের পরিচয় তুলে ধরে। বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা করুণ সুরে বর্ণনা করে। পাশাপাশি অর্থ পাওয়ার জন্য হাত পাততে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। তাদের এহেন কার্যকলাপে অনেকে হয়তো বিরক্তভাব প্রকাশ করে। আবার অনেকে ভিক্ষুকের কাছে ক্ষমা চায়। পারলে কেউ সাহায্য করে। না পারলে তাড়িয়ে দেয়। অনেকে আবার ভিক্ষুকদের সাথে যা তা ব্যবহার করে। এভাবে ভিক্ষুকরা অন্যের করুণার উপর বেঁচে থাকে।
পৃথিবীতে যত প্রকার পেশা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পেশা হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। তারপরও আমাদের দেশে হাজার লোক এ পেশায় নিয়োজিত। এখন আমাদের তলিয়ে দেখা দরকার কেন এমন একটি নিকৃষ্ট পেশা বেচে নেয় মানুষ? আমাদের জানা দরকার আমাদের দেশে প্রকৃত ভিক্ষুক কয় জন? ভিক্ষুকদেরকে কারা ব্যবহার করে? ভিক্ষাবৃত্তির প্রকৃত কারণ কি? এর সমাধান কিভাবে করা যায়? ইত্যাদি।
ভিক্ষাবৃত্তি শুধু মাত্র একটি সামাজিক কারণই নয়। এটি অন্যান্য সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভিক্ষুকরা নির্ভরশীল জনসংখ্যারই একটি অংশ। কেননা এরা কোন উৎপাদন করে না। এরা শুধু ভোগ করে আর আয় করে। এরা রাস্তা ঘাটে যাত্রীদেরকে বিরক্ত করে। এতে অনেক যাত্রী এদের প্রতি নাখোশ। ভিক্ষুকরা সাধারণত নানা ধরনের রোগ ব্যধিতে ভুগে এবং প্রকৃত চিকিৎসা করাতে তারা ব্যর্থ হয়। যার ফলে একজনের রোগ অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অপরাধী ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি শিশু অপরাধের অন্যতম কারণ। কেননা অনেক লোক আছে তারা শিশুদেরকে অপহরণ করে নিয়ে তাদেরকে পঙ্গু করে ভিক্ষার কাজে লাগিয়ে দেয়। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু তাদেরকে দেয়া হয় আর বাকীটুকু ঐসব লোক গ্রহণ করে।
চরম আর্থিক সংকট ও দারিদ্র হলো ভিক্ষাবৃত্তির প্রধান কারণ। শারীরিক অক্ষমতাও ভিক্ষবৃত্তির আরেকটি অন্যতম কারণ। যেমন- অন্ধ, খোড়া, বোবা ব্যক্তি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ খুঁজে পায় না। আমাদের সমাজে যেসব ভিক্ষুক দেখা যায় তারমধ্যে এ ধরনের ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। অনেকে দুরারোগ্য ব্যধির কারণে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে থাকে। তারা দুর্বল, অচল ও অকালে বৃদ্ধ হয়ে পড়ে। পারিবারিক কারণেও অনেকে ভিক্ষা করে। দেখা যাচ্ছে মা-বাবা ভিক্ষা করছে সে সূত্রে তার সন্তানরাও ভিক্ষা করছে। অনেক মহিলা আছে যারা বিধবা, বিবাহ বিচ্ছেদ ও এতিম হওয়ার কারণে ভিক্ষা করে। অনেকে ধর্মীয় লেবাস পড়ে ভিক্ষা করে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে দেখছি অনেকে পাঞ্জাবি টুপি মাথায় দিয়ে দাড়ি রেখে ভিক্ষা করতে। উঠানের কোণে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গজল ও ওয়াজ করতে থাকে। ভিক্ষা পেলে হাত তুলে সু-দোয়া করতে থাকে। আর ভিক্ষা না পেলে বদ-দোয়া করতে থাকে। অথচ আমাদের ইসলাম ধর্মে ভিক্ষাকে সমর্থন করেনি। বরং নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (স.) এ ব্যাপারে অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। কথিত আছে একদা এক ভিক্ষুক হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট এসে ভিক্ষা চাইলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) তখন তাকে ভিক্ষা না করে কর্ম করে খাওয়ার জন্য উপদেশ দিলেন। ভিক্ষুক ব্যক্তির একমাত্র সম্ভব ছিল একটি কম্বল। আল্লাহর রাসুল (স.) তার সেই কম্বলটি বিক্রি করে অর্ধেক টাকা দিয়ে একটি কুঠার কিনে দিলেন আর বাকী অর্ধেক টাকা দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করলেন। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পরামর্শ অনুযায়ী সেই ব্যক্তি কুঠার দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে এক সময় স্বাবলম্বী হয়। একদিন তার অভাব মুছে গেল। ভিক্ষার আরেকটি কারণ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে ভিক্ষা একটি সহজ ও লাভজনক ব্যবসা। বিনাশ্রমে, বিনা পুঁজিতে এরচেয়ে সহজ ব্যবসা আর কি হতে পারে। তাছাড়া অলসতা আরেকটি কারণ। অনেকে অলসতার কারণে কোন কাজ করতে চায় না। তারা তখন সহজ ব্যবসা হিসেবে এ ভিক্ষা পেশাকে বেচে নেয়।
এতক্ষণ ভিক্ষাবৃত্তির কারণে অন্যান্য সমস্যা ও ভিক্ষাবৃত্তির কারণগুলো আলোচনা করা হলো। এখন কিভাবে এ পেশা ভিক্ষাবৃত্তিকে আমাদের সমাজ থেকে রোধ করা যায় তা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। আমি মনে করি অন্ধ, পঙ্গু ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দরিদ্র ব্যক্তি ছাড়া আর সবাই কাজ করতে সক্ষম। এ তিন প্রকার লোকই ভিক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত। তবে তাদেরকে ভিক্ষা হিসেবে না দিয়ে দান করা উচিত। তারা চাওয়ার আগেই আমরা যারা সমর্থবান আছি তারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। আর যারা বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষা করে তারা যার যার সামর্থ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যে যে কাজ পারে সে সে কাজ করে জীবিকা অর্জন করবে। পাশাপাশি সরকারিভাবে এসব দরিদ্র লোকদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা বেকার বসে না থাকে। যারা কাজ করতে পারে না তাদেরকে সরকারিভাবে ভাতা দিতে হবে। আর যারা প্রকৃতপক্ষে অলসতার কারণে কাজ করার সমর্থন ও সুযোগ থাকার পরও ভিক্ষা করে তাদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি রোধ করা যাবে। আর সরকারকে এর জন্য জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে বিশেষ করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। কেননা ভিক্ষাবৃত্তি কোন একটি দেশের বা সমাজের এক বিশেষ দরিদ্র ও হতাশার চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরে।
এতক্ষণ ভিক্ষাবৃত্তির কারণে অন্যান্য সমস্যা ও ভিক্ষাবৃত্তির কারণগুলো আলোচনা করা হলো। এখন কিভাবে এ পেশা ভিক্ষাবৃত্তিকে আমাদের সমাজ থেকে রোধ করা যায় তা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। আমি মনে করি অন্ধ, পঙ্গু ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দরিদ্র ব্যক্তি ছাড়া আর সবাই কাজ করতে সক্ষম। এ তিন প্রকার লোকই ভিক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত। তবে তাদেরকে ভিক্ষা হিসেবে না দিয়ে দান করা উচিত। তারা চাওয়ার আগেই আমরা যারা সমর্থবান আছি তারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। আর যারা বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষা করে তারা যার যার সামর্থ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যে যে কাজ পারে সে সে কাজ করে জীবিকা অর্জন করবে। পাশাপাশি সরকারিভাবে এসব দরিদ্র লোকদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা বেকার বসে না থাকে। যারা কাজ করতে পারে না তাদেরকে সরকারিভাবে ভাতা দিতে হবে। আর যারা প্রকৃতপক্ষে অলসতার কারণে কাজ করার সমর্থন ও সুযোগ থাকার পরও ভিক্ষা করে তাদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি রোধ করা যাবে। আর সরকারকে এর জন্য জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে বিশেষ করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। কেননা ভিক্ষাবৃত্তি কোন একটি দেশের বা সমাজের এক বিশেষ দরিদ্র ও হতাশার চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরে।
প্রকাশকাল: বুধবার, ২৬ অক্টোবর ২০০৫ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন