ব্যক্তি এমরানুর রেজাকে আমি চিনি অনেকদিন যাবত কিন্তু লেখক এমরানুর রেজাকে চিনি কিছুদিন যাবত। তাঁর বেশ কয়েকটি লেখা আমি পড়েছি। সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ তাঁর। তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষ একটা দিক আছে। তাকে বিশ্লেষণ করার মত যোগ্যতা আমার হয়নি। তারপরও যতটুকু তাঁর লেখা পড়েছি তার মধ্য থেকেই তাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।
তরুণ লেখক এমরানুর রেজা বাংলা ও ইংরেজি দুটো সাহিত্যেই সমানভাবে সফলতার সহিত বিচরণ করছেন। তাঁর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আমি বিশ্লেষণ করব না। কারণ আমি ইংরেজির কোন পণ্ডিত নই। তবে তাকে আমি অনুরোধ করব একজন বাঙালি হিসেবে ইংরেজির পরিবর্তে যেন বাংলা সাহিত্যের প্রতি জোর দিতে। অতিমাত্রায় ইংরেজি চর্চা করতে গিয়ে যেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো আপেক্ষ করতে না হয়।
তাঁর লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি কোন লেখায় শিরোনাম দেন না। তাঁর যেকটি লেখা আমি পড়েছি কোথায়ও শিরোনাম খুঁজে পাইনি। তাঁর যুক্তি হলো শিরোনাম লেখক নয় পাঠক দিবে। আমি তার এই যুক্তির সাথে একমত পোষণ করতে পারছি না। কারণ প্রতিটা লেখারই একটা শিরোনাম থাকবে আর সেটা লেখক, যিনি উক্ত লেখার স্রষ্টা তিনিই দিবেন। পাঠক কেন লেখার শিরোনাম দিবে? পাঠক লেখকের লেখা পড়ে মূল্যায়ন করবেন। গঠনমূলক সমালোচনা করবেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আছে। যেমন- গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ইত্যাদি। কিন্তু ওনার লেখা পড়ে আমি বুঝতে পারছি না ওনি সাহিত্যের কোন কোন শাখায় লিখছেন। ওনার যুক্তি হলো ওনি একজন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চান। কোনো শাখায় তিনি চড়তে চাননা। ওনার ভাবনায় যা আসে তাই লিখেন এবং লিখবেন। আমি মনে করি একজন লেখক ইচ্ছে করলে সাহিত্যের সকল শাখায় লিখতে পারেন আবার বিশেষ বিশেষ কিছু শাখায়ও লিখতে পারেন। এখানে লেখকের স্বাধীনতা আছে। প্রতিটা লেখক সাহিত্য রচনার শিরোনাম ও সাহিত্যের শাখার নিয়মগুলো ফলো করে লিখলে পাঠক সহজে লেখককে চিনতে পারেন। এতে করে পাঠক ঐ লেখকের লেখা পড়ে আনন্দ পায়, পুলকিত হয়।
তরুণ লেখক এমরানুর রেজার লেখায় ফুটে উঠেছে সমাজের কৃষক শ্রেণীর কথা, বাংলা নববর্ষের নামে সাধরণ কৃষক, মজুর, শ্রমিক শ্রেণীর সাথে কি নির্মম পরিহাস করা হয় সে কথা। কোন এক লেখায় তিনি বলেছেন-
“কৃষক শ্রেণী সত্যিকারের মানুষ, সব সাধকের বড় সাধক। সেই সাধকদের সঠিক মূল্যায়ন না করে, অবমূল্যায়নের সিনেমা তৈরি করে নাগরিক জীবন। সেই সিনেমার নাম ‘পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ’। সিনেমা হলটির নাম ‘পহেলা বৈশাখ’। একটি ইলিশ এক বছরে হয়তো কোনো কৃষকের ঘরে খাবার হিসাবে রান্না করা হয় না। হয়তো নয়, সত্য, বেদনাদায়ক সত্য। বেদনাদায়ক সত্যটি কী নির্মমভাবে নাগরিক জীবনে বাস্তবিক বিলাসিতা।”
মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে গড়ে তোলেন- তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারীনি। তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। সেই মাকে নিয়ে তরুণ লেখক এমরানুর রেজা লিখেছেন-
“একমাত্র “মা” যিনি আমাদের মূল, প্রিয়কথা নয়, কাজের প্রমাণিত জায়গা। কখনো মনে হয় না “মা” আমাদের ছেড়ে চলে যাবে সুখের কোনো গুপ্ত সন্ধানে। মায়ের প্রকাশ্য কিংবা গোপন সুখসাগর কেবল আমরা। “মা” শব্দটি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল শব্দ। সন্তানের উপর মায়ের সৌহার্দ, প্রীতি, ভালোবাসা শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না। অথচ অন্যতম প্রাণ দেয়া-নেয়ার মূল্যদণ্ড- যোগ্যতা। প্রিয় কিংবা প্রিয়া দুজনই যোগ্যতার কাণ্ডারী। যোগ্যতাকে সামনে রেখে চলতে থাকে নিদারুন দারুণ পাউয়ার প্রেকটিস। পাউয়ার প্রেকটিস থেকে জন্ম নেয় বিধ্বস্তকারী মারীচ, ডমিনেট প্রক্রিয়া। মা সন্তানের জন্য প্রীতিবোধ লালন করেন, চর্চা করেন না। ফলে মায়ের কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।”
এমরানুর রেজার বেশ কয়েকটি লেখার বিশেষ কিছু লাইন আমার মনের মনিকোঠায় স্থান পেয়েছে। তা উল্লেখ না করলে আমার লেখা অপূর্ণতা থেকে যাবে। যেমন-
“প্রভু, আমি তো তোমার সন্তান, ইচ্ছার সন্তান। পৃথিবীতে যাকে মা বলে জানি তাঁর চোখে ভালো বা খারাপ সন্তান ভালোবাসায় সমান সমান, তবে কেন প্রভু আমার জন্য জান্নাত- জাহান্নাম!”
“বাড়ি বলতে আমরা যা বুঝি মূলত তা বাড়ি নয়। এটি একটি বসবাসের জায়গা যেখানে কেউ বসবাস করত এবং কেউ বসবাস করবে। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব বাড়ি তার শরীর। এই বাড়ির একমাত্র বাসিন্দা ব্যক্তি নিজেই। বাড়িটির পাহারাদারের নাম মন।”
“মন যতদিন তার দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করে ততদিন বাড়িটি নিজ মহিমায় অবস্থান করে। বাড়িওয়ালা আর পাহারাদারের মধ্যে একটি অভেদ্য সম্পর্ক আছে। এই অভেদ্য সর্ম্পকের নাম প্রেম।”
“কাগজ দেখে শিক্ষক বক্তৃতা দেন। কাগজে ছাত্র বক্তৃতা লিখে। আজকাল জ্ঞানচর্চা কাগজে কাগজে। কাগজে-মগজে কিংবা মগজে-মগজে যে জ্ঞানচর্চার ইতিহাস এখন কেবলই তা গল্প করার টপিক।”
এমরানুর রেজা তরুণ লেখকদের মধ্যে অন্যতম একজন লেখক। তাঁর লেখা ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে। তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
1 টি মন্তব্য:
এই লোকটা একটা আপাদমস্তক ভন্ড, নোংরা মানসিকতার। মলেস্টার, পোটেনশিয়াল রেপিস্ট। এই লোকটার মুখোসের আড়ালে অত্যন্ত নোংরা বিকৃত একটা মুখ রয়েছে। ভারতে নোংরামো করেছিল তাই দূর দূর করে তাড়ানো হয়েছে। তারপরও লজ্জা নেই। ভেবেছে ভারতের গল্প বাংলাদেশে কেউ জানতে পারবে না সেখানে হিরো সাজা সহজ হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন