রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩

তামাশা ও কলঙ্কের নির্বাচন


এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে দেশে একটা তামাশা হচ্ছে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনাএমন আজগুবি নির্বাচন এর আগে আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। এর মধ্যে ১২৭ আসনে আ.লীগ, ২১ আসনে জাপা, ৩ আসনে জাসদ, ২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি ও ১ আসনে জেপির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। বাংলাদেশের
ইতিহাসে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কলঙ্কের নতুন ইতিহাস গড়ছে এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ৪৯ জন প্রার্থী, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ ১৮ জন পার্থী, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১ জন পার্থী ও ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থীসমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এটা একটা হাস্যকর নির্বাচনে পরিণত হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদরা এটা কি করছেন তা আমার বুঝে আসেনা। এদেশে ভোটার বিহীন নির্বাচন আমরা প্রত্যক্ষ করছি কিন্তু প্রার্থী বিহীন নির্বাচন প্রত্যক্ষ করিনি। এটা রাজনীতিবিদদের জন্য মোটেও সম্মানজনক নয়। জাতির ইতিহাসে এ নির্বাচন একটি তামাশা ও কলঙ্কের নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই নির্বাচন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এটা সাধারণ জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এই নির্বাচনের ফলে দেশে দাঙ্গা, হাঙ্গামা আরো বাড়বে। ক্ষমতাসীনা একনায়কতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে। যা বাংলার মানুষ কখনো মেনে নিবে না। অতীতেও তা মেনে নেয়নি এদেশের মানুষ। ক্ষমতাসীনরা যদি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি খর্ব করে তাহলে দেশের জন্য তা শুভ হবে না।
একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তামাশার নির্বাচনের কলঙ্ক তিলকপরতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগও। যা ১৯৯৬ সালে বিএনপি করেছিল। এর আগে এরশাদ ১৯৮৮ সালে এমন নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। এসব অর্থহীন নির্বাচন আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য শুভ হয় না। সবচেয়ে দু:খ লাগে যে রাজনীতিবিদরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমার খুব হাসি পাইছে। তিনি বলছেন সকল দলের সাথে সমঝোতার ফলে তারা প্রার্খীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছে। বিএনপি আসলেও তাদের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা হতো। শিয়ালের রুটি ভাগাভাগির মতো হলো আর কি। সমঝোতা করে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে অন্যদলকে জিতিয়ে দেয়ার নাম কি নির্বাচন? যারা জামানত হারাবে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার নাম কি নির্বাচন? তাহলে নির্বাচনের দরকার কি? এরশাদ নির্বাচনে যাবে না তাকে জোর করে নির্বাচনে রাখার জন্য সরকার তাকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। এর নাম কি গণতন্ত্র? এ গণতন্ত্রতো আমরা চাইনা। সরকার যা বলবে তাই হবে। অন্যদের মতামতের কোন মূল্য থাকবে না। বিরোধীদল মাঠে নেমে তাদের কর্মসূচী পালন করতে পারবে না। আমরা এমন গণতন্ত্র চাই যে গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। বিরোধীদলের যৌক্তিক দাবী সরকার মেনে নেবে। একতরফা নয় সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশে হবে। যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে শান্তির বাতাস বইবে।  
লেখক- উপন্যাসিক, কলামিষ্ট  




কোন মন্তব্য নেই: