বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪

বাংলাদেশে বিয়ের কনে দেখার হাল

বাংলাদেশে বিয়ের পূর্বে মেয়ে দেখার যে রীতি প্রচলিত আছে, তা আমার পছন্দনীয় নয়। জানিনা এটাকে কে কোন দৃষ্টিতে দেখবেন। এ দেশের নিয়মানুসারে ছেলে পক্ষ বিয়ের প্রস্তাাব নিয়ে মেয়ে পক্ষের বাড়িতে আসে। মেয়ে পক্ষ ঐ দিন তাদের সাধ্য অনুসারে ছেলে পক্ষের লোকজনকে আপ্যায়ন করেন। পরে তারা তাদের আদরের মেয়েটিকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে ছেলে পক্ষের মুরুব্বীদের সামনে নিয়ে আসেন। তখন মেয়ের সাথে একজন সহকারী মহিলা থাকেন যিনি ধীরে ধীরে মেয়েটিকে ধরে ছেলে
পক্ষের মুরুব্বীদের সামনে নিয়ে হাজির করান। কারণ মেয়েটি এতগুলো মুরুব্বীর সামনে কথা বলতে লজ্জাবোধ করবে বিধায় একজন সহকারী মহিলার প্রয়োজন পড়ে। প্রথমে মেয়ে পক্ষের মহিলাটি মেয়েটির ঘোমটা খুলে দেখান। মেয়েটি বার বার লজ্জায় ঘোমটা দেয়। ছেলে পক্ষের মুরুব্বীরা সর্বপ্রথম আয়েশ করে মেয়েটির চেহারা দেখেন। তারপর মেয়েটির কথাবার্তা শুনার জন্য তারা তাকে কিছু প্রশ্ন করেন। যেমন-
১.    তোমার নাম কি?
২.    কোন ক্লাসে পড়?
৩.    তোমার আব্বার নাম কি?
৪.    তোমরা কয় ভাইবোন?
৫.    কোরআন পড়তে জান?
৬.    একটা সুরা বল? ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে তার চুল কতটুকু লম্বা তা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সে লেংরা কিনা তা দেখার জন্য তাকে হাঁটানো হয়। তার দাঁতগুলো মুক্তার মতো ঝক ঝক করে কিনা নাকি আকাঁবাকা তেড়া তা দেখার জন্য মেয়েটিকে হা করতে বলা হয়। পায়ের কাপড় সড়িয়ে পা দেখা হয়। হাতের কবজি পর্যন্ত দেখানো হয়। এমন আরো কত অশুভ আচরণ করা হয়। পরিশেষে তার হাতের লেখা দেখার জন্য তার ঠিকানা লিখতে বলা হয়। কিন্তু ছেলে দেখার ক্ষেত্রে এরূপ করা হয় না।
মেয়ে দেখার জন্য উপরোক্ত নিয়মগুলো সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বেশী দেখা যায়। শহরেও এর প্রভাব কিছুটা আছে। তবে শহরে কনে দেখার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
এই যে কনে দেখার নিয়ম আমাদের সমাজে চালু আছে এভাবে দেখেই কি মেয়েটির পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়? হ্যাঁ যদি মেয়েটিকে ছেলে পক্ষের পছন্দ হয় তাহলে এখানেই পরীক্ষা শেষ। কিন্তু যদি মেয়েটিকে ছেলে পক্ষের পছন্দ না হয় তাহলে আবারও তাকে অন্যান্য ছেলে পক্ষের কাছে এভাবে সেজেগুজে যেতে হবে, যতদিন না তার চূড়ান্ত বিয়ে ঠিক হবে।
এভাবে কনে দেখা বাজারের পণ্য কেনার মতই মনে হয় আমার কাছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। কারণ এভাবে একতরফভাবে শুধু ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে আর মেয়ে পক্ষ বার বার কনে দেখানো নামক পরীক্ষাগারে উপস্থিত হবে তা ঠিক নয়। আমার দৃষ্টিতে মেয়ে পক্ষও ছেলের বাড়িতে গিয়ে ছেলে সর্ম্পকে সবকিছু ভাল করে জানবে। আর বর্তমানে আমরা যেভাবে কন্যা দেখছি এভাবে কিন্তু কন্যার বাহ্যিক রূপটা দেখা যায়, ভেতরের রূপটা দেখা যায় না। এজন্য সংসার জীবন প্রকৃত সুখের হয় না। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে অপরের স্বভাব চরিত্র খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই প্রকৃত পক্ষে সংসার জীবনে সুখ আনতে হলে আমার দৃষ্টিতে বিয়ের আগে মুরুব্বীদের পাশাপাশি পাত্র-পাত্রীকে এবং পাত্রী-পাত্রকে ভাল করে দেখে নিবে। তারা অন্ত:পক্ষে একমাস একে অপরকে জানবে। পরে তারা সিদ্ধান্ত নিবে সংসার করতে পারবে কিনা। যদি পাত্র-পাত্রী সংসার করার সম্মতি দেয় তাহলে মুরুব্বীরা বিয়ের ব্যবস্থা করবে। তাহলে সংসারে প্রকৃত সুখ আসবে।

প্রকাশকাল: বুধবার, ২৩ মার্চ ২০০৫ইং

কোন মন্তব্য নেই: