বর্তমান বিশ্বে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ইন্টারনেট ব্যবহার করেন
অথচ ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট নেই, এমন মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। ফেসবুক মানুষের
দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। বলা যায় বর্তমান সময়ে
আমাদের জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে ফেসবুকের প্রভাব। এমন অনেকেই রয়েছেন শুধু
বন্ধুর ফেসবুক আছে বলে তিনি নিজেও ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সারাদিন ফেসবুকে
অ্যাক্টিভ থাকছেন এমন ব্যবহারকারী সংখ্যাও কমতি নেই। অনেকের জীবনের একটা অংশ হয়ে
গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকের মাধ্যমে এখন সবার সাথে যোগাযোগ বা
আলাপ-আলোচনা কিংবা নিজের কাজ-চিন্তা সবকিছুই শেয়ার করে চাঙ্গা থাকছেন সবাই। বেশির
ভাগ লোকই মনে করেন তারা যা শেয়ার করছেন সেগুলো নিজের বন্ধুদের জন্য কিন্তু কেউ
অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অন্য কেউ এটি পড়ছে কি না তা জানা যায় না। এই কারণেই কিছু তথ্য
এমন রয়েছে যা কখনই ফেসবুকের স্টেটাসে শেয়ার করা উচিত নয়।
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের সব
মুহূর্তই শেয়ার করা হচ্ছে ফেসবুকে। হাসি-কান্না, সুখের স্মৃতি অনেক কিছুই ফেসবুক
কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। মন খারাপ হলে কিংবা হাসিতে লুটোপুটি খেলে অথবা অন্যের সঙ্গে
কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তা নিয়েও ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করার হিরিক পড়ে যায়। এমনকি
মৃত ব্যক্তিকে সামনে নিয়েও ফেসবুকে চলে সেলফি স্ট্যাটাস! তবে এমন অনেক কিছু আছে,যা ফেসবুকে
শেয়ার না করাটাই মঙ্গলজনক। ফেসবুক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও মাঝে মাঝে
এখানে অসমাজিক কার্যকলাপও হয়। ফেসবুককে যারা জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন; একটি পর্যায়ে গিয়ে এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইটটি আপনার কষ্টের কারণ হতে পারে।
ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে আপনি
নিশ্চয়ই এমন কিছু মানুষের দেখা পেয়েছেন যারা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না কী ধরণের তথ্য
সবার সামনে উপস্থাপনা করা উচিত, আর কি উচিত নয়? এমনকি
আপনার নিজেরও অনেক সময় এমনটা হতে পারে। ফেসবুকে একটি পোস্ট দেবার পর নিজের
নির্বুদ্ধিতায় অবাক হয়ে যেতে পারেন নিজেই! ভাবছেন, ফেসবুক তো ফেসবুকই! এটা একটা
বিনোদনের মাধ্যম। এই ভাবনাটা একদম ঠিক না। এখানেও বুঝে শুনে ছবি, ভিডিও স্ট্যাটাস দিতে হবে। সত্যটা হচ্ছে, এখানেই
সবচাইতে বেশি বুঝে কথা বলতে হবে। কারণ এটা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যা সবার জন্য
উন্মুক্ত। এখানে একটা কথা বলে আপনি হতে পারেন সবার হাসির পাত্র, নিজেকে ফেলে দিতে পারেন একটা বিপদে, এমনকি থানা-পুলিশের
ঝামেলাতেও জড়িয়ে যেতে পারেন নিজের অজান্তেই!
সাইবার ক্রাইমের ফাঁদ পাতা
ফেসবুকে। ঘন ঘন স্ট্যাটাস আপডেট আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আপনি অনায়াসে গ্রহণ করছেন।
আর গ্রহণ করার সময় আপনি নিজের অজান্তেই ফেক অ্যাকাউন্ট, হ্যাকিংয়ের
ফাঁদে পড়তে পারেন। তাই বলে ফেসবুক ব্যবহার করা বাদ দিবেন এমন কথা আপনাকে বলতে পারি
না। কারণ ফেসবুক জনপ্রিয় একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে
ফেসবুকে আপনাকে থাকতেই হবে। তবে এখানে আপনাকে সাবধানে পা ফেলতে হবে। নিজেকে
সুরক্ষিত রাখতে কিছু কাজ আপনি ভুলেও কখনও ফেসবুকে শেয়ার করবেন না। এতে করে আপনার
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন সুরক্ষিত হবে,তেমনি দুর্বৃত্তদের
কুনজর থেকেও নিরাপদ থাকবেন। আসুন জেনে নেই ফেসবুকে যা শেয়ার করা উচিত নয়।
অশ্লীল ছবি বা ভিডিও শেয়ার: ফেসবুকে কাউকে হেয়
করে অশ্লীল ছবি, ভিডিও বা মন্তব্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের বা অন্যের কোন
অশ্লীল ছবি বা ভিডিও সেখানে দেবেন না। এ ছাড়া শেয়ার করার সময় কোনো অশ্লীল ছবি বা
ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখুন। কারণ, আপনার ফেসবুকে শেয়ার করা অশ্লীল ছবি বা ভিডিওগুলো আপনার গুরুত্বপূর্ণ
কন্টাক্ট, এই ছবিগুলো আপনার সকল বন্ধুদের নজরে আসবে। এমনকি
সহকর্মী ও চাকরিদাতার নজরেও আসতে পারে। তাই অযথা অশ্লীল ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে
ঝামেলায় জড়াবেন না।
মনোমালিন্য: স্বামী-স্ত্রী বা
বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তুচ্ছ ব্যাপারগুলো নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করার কোনো মানে
হয় না। সর্ম্পকের মধ্যে মন কষাকষি, ঝগড়া বিবাদ হবেই। আবার মিটেও যাবে।
অযথা বাইরের মানুষজনকে কেন জানাবেন যে আপনাদের সম্পর্কে ঝড় বয়ে চলেছে। যে ঝড়
কিছুদিনের মধ্যেই থেমে যাবে। সম্পর্ক ঠিক করতে নিজেরাই বসুন মুখোমুখি।
সম্পর্কে ভাঙ্গন: সম্পর্কে ভাঙা-গড়া
থাকবেই। তাই বলে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙন ফেসবুকে আপডেট করতে হবে! নিজে তো
ছোট হলেনই,প্রিয় মানুষটির কাছে আরও ছোট হয়ে যাবেন।
একান্ত ব্যক্তিগত ছবি: ব্যক্তিগত
সম্পর্কের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে কখনোই পোস্ট করবেন না। দিনকাল যা, তাতে
ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। যতটা সম্ভব এইসব থেকে দূরে
থাকার চেষ্টা করবেন।
জন্ম তারিখ: অনেকেই নিজের জন্ম
তারিখ ফেসবুকে উন্মুক্ত করে রাখেন। কিন্তু আপনি জানেন কি নিজের জন্ম তারিখ ফেসবুকে
শেয়ার করা মানে নিজের বিপদ নিজে ঢেকে আনা। আপনার একটি ব্যক্তিগত তথ্য সাইবার
চোরদের জানিয়ে দেয়া। এটি আপনার জন্য অনিরাপদ। কারণ তথ্য প্রযুক্তির যুগে জন্ম
তারিখ থেকেই অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন হ্যাকাররা। অথবা যেকোনো শত্রু এই বিশেষ দিনে
টার্গেট করে আপনার ওপর হামলা চালাতে পারে। তাই ফেসবুকে জন্মতারিখ উন্মুক্ত রাখার
বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যদি ফেসবুকে নিজের জন্ম তারিখ উন্মুক্ত রাখতেই হয় তবে
জন্ম সাল একেবারেই উন্মুক্ত রাখবেন না। সাইবার দুর্বৃত্তদের কুনজর থেকে বাঁচতে
একটু সতর্কতা আপনাকে একধাপ এগিয়ে রাখবে।
বর্তমান
অবস্থান:
আপনি কি একা? অনেকেই এটা খোঁজ করে আপনার ওপর নজরদারি করতে পারে। কোথায় যাচ্ছেন,কী করছেন এসব তথ্য এবং আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানা থাকলে
দুর্বৃত্তদের পক্ষে আপনার ওপর নজরদারি করা সহজ হতে পারে। যেখানে সেখানে সেলফি তুলে
লোকেশন ট্যাগ করে দেওয়াটা অনিরাপদ। এর মাধ্যমে যে কেউ আপনার সর্বশেষ অবস্থান জানতে
পারে। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে। আবার দেখা যায়, আমরা কখন, কোথায় যাচ্ছি কিংবা ভ্রমণে বের হচ্ছি সে বিষয়টি ফেসবুকে জানিয়ে দিই। যা
মোটেও নিরাপদ নয়। এই বিষয়গুলো জেনে আপনার প্রতিপক্ষ ক্ষতি করতে পারে। হয়তো
শত্রুপক্ষ আপনার এমন তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। সেটি জেনে আপনার ওপর হামলা করতে
পারে। ফেসবুকে এসব বিষয়ের জানান দেওয়া নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
মোবাইল নাম্বর: ব্যক্তিগত
যোগাযোগের নিত্য সঙ্গী হচ্ছে মোবাইল ফোন। অনেকেই মোবাইল নাম্বার ফেসবুকে উন্মুক্ত
করে রাখেন। যা সম্পূর্ণভাবে অনিরাপদ। দেখা গেলো, শত্রুপক্ষ আপনার মোবাইল
নাম্বার সংগ্রহ করে এবং সুযোগ বুঝে কাজ করে। পাশাপাশি যে কেউ আপনার মোবাইল নাম্বার
সংগ্রহ করে, সময়ে অসময়ে কল দিয়ে বিরক্ত করার সুযোগ পায়।
মোবাইল নাম্বর ব্যক্তিগত গোপনীয় জিনিস। পরিচিত ব্যক্তি বা আত্মীয়স্বজন ছাড়া কাউকে
মোবাইল নাম্বর দেওয়া নিরাপদ নয়।
বাড়ির ঠিকানা: ফেসবুকে বাড়ির
ঠিকানা দিয়ে বিপদ ডেকে আনার কোনো মানে হয়? ফেসবুক বন্ধু তালিকায় সবাই যে
প্রকৃত বন্ধু, তা কিন্তু নয়। অনেক অপরিচিত ও আগন্তুকের
কাছে বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেকে এতটা
উজাড় করে দেওয়াটা ঠিক নয়। কেউ কেউ খুব আগ্রহের সাথে মনের আনন্দে নিজের ঠিকানা
ফেসবুকে দিয়ে দেন। এটা কখনো ঠিক নয়। ভুলেও ফেসবুকে কখনও বাড়ির ঠিকানা দেবেন না।
কারণ এতে বিপদ হতে পারে, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে। পুরো
ঠিকানা না দিয়ে কোন জেলায় আপনার জন্ম সেটা উল্লেখ করতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক
একাউন্টের তথ্য: ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক একাউন্ট হচ্ছে গোপন ও স্পর্শকাতর বিষয়।
ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক একাউন্টের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া কোনোভাবেই
নিরাপদ নয়। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কিংবা ওয়েবসাইট বুঝেই দিতে হবে। যাতে আপনার দেওয়া তথ্য
তাদের কাছে সুরক্ষিত থাকে।
নির্দিষ্ট স্থান ট্যাগ করা: অনেকেই অনেক সময়
ফেসবুকে নিজের অবস্থানের নির্দিষ্ট স্থান ট্যাগ করে দেন। ওই সময় আপনার প্রোফাইল যে
ভিজিট করবে, সে জানতে পারবে এখন আপনি কোথায় আছেন। সেটি বাসায় কিংবা অফিসে হোক। দেখা
গেল,এভাবে কেউ আপনার বাসা ও অফিসের ঠিকানা সংগ্রহ করে
রাখলো। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে কোপ মারবে আপনাকে। আর এ জন্য ফেসবুকে লোকেশন ট্যাগ
করা মোটেও নিরাপদ নয়।
পাসওয়ার্ড: অবিশ্বাস্য মনে
হলেও অনেকে ফেসবুকে পাসওয়ার্ড বিনিময় করেন। হয়তো কাছের বন্ধু বা ব্যক্তিগত বার্তা
আদান-প্রদান করার সময় পাসওয়ার্ড লিখে বিনিময় করেন। কিন্তু এভাবে পাসওয়ার্ড বিনিময়
করা নিরাপদ নয়। ফেসবুকে নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দেয়া বা বলা আরো বিপজ্জনক। যদি সে
আপনার ঘনিষ্ঠ কোনও বন্ধুও হয়, তবুও তাকে বলবেন না। কারণ সেই বন্ধু আপনার
অজান্তে অন্যকে দিয়ে দিতে পারে। অথবা সেই বন্ধু হঠাৎ কোন কারণে আপনার শত্রু হয়ে
যেতে পারে। তখন হয়তো এটিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। বন্ধু কখন শত্রু হয়, কে জানে! কার মনে কি আছে আমরা কেউ জানি না। আলাপচারিতায় পাসওয়ার্ডসহ
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় করাটা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই পাসওয়ার্ড হচ্ছে একান্ত
ব্যক্তিগ গোপন বিষয় এটা অন্য কাউকে না জানানো নিরাপদ। এমনকি নিজের স্বামী/স্ত্রী
বা প্রেমিক/প্রেমিকার কাছেও নয়। আল্লাহ না করুক বলাতো যায় না কখন সর্ম্পকে ফাঁটল
ধরে। আর তখনই কিন্তু ফান্দে পড়ার ঝুকি থাকে।
অন্য কারো ব্যাপারে তথ্য
প্রকাশ:
আপনার নিজের ব্যক্তিগত তথ্য আপনি পোস্ট করতে পারেন কোনো তোয়াক্কা ছাড়াই,এতে
ক্ষতিগ্রস্ত শুধু আপনিই হবেন। কিন্তু যখন ওই পোস্টে অন্য কারো ব্যক্তিগত তথ্য
থাকবে তখন ভুলেও তার সম্মতি ছাড়া তা প্রকাশ করতে যাবেন না। এতে ওই মানুষটিতো
বিরক্ত হবেনই, উপরন্তু আপনার নির্বুদ্ধিতার কারণে তার বড়
কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বন্ধুদের মাঝে ঝগড়ার ব্যাপারটাও ফেসবুকে নিয়ে না
আসাই ভালো।
ধর্মীয় অনুভূতিতে ও মতাদর্শে
আঘাত:
ফেসবুকে আপনার যেসব বন্ধু আছে,তারাও কিন্তু আপনার সমাজেরই অংশ। এমন কিছু করবেন
না যাতে তাদের মাঝে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। বিশেষ করে তাদের
ধর্মানুভুতি বা মতাদর্শে আঘাত করে এমন কিছু পোস্ট বা মন্তব্য না করাই ভালো।
অপরাধের প্রমাণ: মানুষ হিসেবে আমরা
কেউ অপরাধমুক্ত নয়। সবারই কম বেশি ছোটখাটো অপরাধের ঘটনা থাকতেই পারে। ফেসবুক এখন
সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে চলে গেছে। তাই এই সব ছোটখাটো অপরাধের কথা ফেসবুকে শেয়ার
করে ফেঁসে যেতে পারেন। এসব নিয়ে পোস্ট দিতে গেলেও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
আক্রমণাত্মক মন্তব্য: যে কোনো ব্যাপারে
আপনার নেতিবাচক ধারনা এবং মতামত থাকতেইই পারে। তাই বলে ফেসবুকে তা নিয়ে বাড়াবাড়ি
করাটা মোটেই ভালো নয়। বরং তাতে আপনার অপ্রাপ্তবয়স্ক মানসিকতার প্রকাশ পায়। আর এর
ফলে একে একে আপনার বন্ধুরাও আপনার পোস্টের প্রতি মনোযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিতে
পারেন। তাই বন্ধুদের পোস্ট পড়ে বুঝে শুনে সুন্দর ও সাবলিল ভাষায় মন্তব্য করুক। এতে
একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা বাড়বে নতুবা হিতে বিপরীত হবে।
চাকরি যাওয়ার ভয়: এমন তথ্য শেয়ার
করবেন না যা আপনার চাকরি চলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। আপনার অফিসের অনেকেই ফেসবুকে
থাকতে পারেন। আর তাই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের স্পর্শকাতর ব্যাপারগুলো ফেসবুকে পোস্ট
না করাই ভালো। এমনও হতে পারে যে আপনার কর্মকর্তা আপনার ব্যাপারে খারাপ কিছু দেখে
আপনাকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। এছাড়াও নতুন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও
নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এমন সব পোস্ট। তাই পোস্ট করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
শিশু কোথায় পড়াশুনা করে: গত কয়েক বছরের যৌন
ও শিশু বিষয়ক অপরাধগুলো গবেষণা করে ইংল্যান্ডের শিশু বিষয়ক সংস্থা এনএসপিসিসি
জানান, অধিকাংশ অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অসচেতন ছিলেন। এজন্য
অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে। অথচ অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে অবেগাপ্লুত হয়ে অনেক
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। সেই সঙ্গে স্ট্যাটাসে
জানিয়ে দেন, তার শিশু কোন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে। এটি
শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। এতে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। তাই এসব শেয়ার
করার সময় সর্তকতা অলম্বন করবেন।
ফেক আইডি: ফেসবুকে অনেকেই
আছে নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন করে ছদ্মনামে বা ছবি ছাড়া আইডি খুলেন। আবার অনেকেই
উঠতি বয়সের সুন্দরী মেয়েদের ছবিও নাম দিয়ে আইডি খুলেন। সেসব আইডি থেকে ফ্রেন্ড
রিকুয়েস্ট আসলে যাচাই ছাড়া একসেপ্ট করবেন না। বলাতো যায় না সেই আইডিটি হতে পারে
কোন হ্যাকার বা আপনার কোন শুত্রুর।
সার্টিফিকেট ও গুরুত্বপূর্ণ
কাগজপত্র: সার্টিফিকেট
আপনার শিক্ষা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটা কখনো ফেসবুকে শেয়ার করবেন না।
এছাড়াও জমির দলিল, কাবিননামা, ব্যাংকের চেকসহ ব্যক্তিগত
গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ফেসবুকে শেয়ার করবে না। বলাতো যায় না কখন কোন বিপদে জড়িয়ে
পড়েন।
দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা: দেশের প্রতিটি
নাগরিকেরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাই দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে
রাষ্ট্র বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, সরকারবিরোধী, সংবিধানপরিপন্থি,আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী,
সমাজবিরোধী এমন কোন বক্তব্য, ভিডিও, লেখা শেয়ার করবেন না যাতে আপনি যেকোন সময় আইনের মারপেচে পড়ে যেতে
পারেন। কোন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, কোন জাতি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করে, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি উস্কানিমূলক বা আক্রমণাত্মক বা হিংসাত্মক, কোন সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন কোন বক্তব্য, ভিডিও, লেখা শেয়ার করবেন না। এতে করে বিপদের
সম্ভবনা থাকে।
মৃত ব্যক্তির সাথে সেলফি: সেলফি জ্বরে
আক্রান্ত তরুণ প্রজন্ম। অনেকে মায়ের জন্য খোড়া কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে।
বাবার লাশ কাঁধে নেয়ার সময় সেলফি তুলছে। দাদার লাশের সাথে সেলফি তুলছে। বোনের
কবরের পাশে সেলফি তুলছে। নামাজ পড়া ও কবর জিয়ারত অবস্থায় সেলফি তুলছে। হজ করতে গিয়ে কাবা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে নানা
অঙ্গভঙ্গিতে সেলফি তুলে তারা এখন জনপ্রিয় শীর্ষে আছে। বর্তমানে তাদের বিবেক বুদ্ধি
এতই লোপ পেয়েছে যে তারা মৃত ব্যক্তির সামনে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে হাসি মুখে ছবি
তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না। মানুষ যখন মরে যায় তখন তার পরিবার, নিটক আত্মীয়,বন্ধু-বান্ধব
সবাই শোকাহত থাকে। শোকাহত অবস্থায় হাসিমুখে কিভাবে মৃত ব্যক্তির সামনে সেলফি তুলে
আমার বুঝে আসে না। তাই আমি বলব এভাবে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে তামাশা করার কোন মানে হয়?
মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে ছবি আপলোড দিলে সামাজিক ভাবে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ
না হলেও দৃষ্টিকটু মনে হয়। অতএব এ ধরনের সেলফি থেকে বিরত থাকুন।
মনে রাখবেন ফেসবুকের সকল বন্ধু
আপনার বন্ধু নয়। সবাই আপনার মতাদর্শী নয়। অতএব সবাইকে বন্ধু মনে করে সবার সাথে সব
কিছু শেয়ার করবেন না। ফেসবুকে কোন কিছু শেয়ার করা মানে তাৎক্ষনিকভাবে সারা বিশ্বে
ছড়িয়ে পড়া। আপনি যদি কিছুক্ষণ পর ডিলেটও করে দেন কেউ না কেউ তাৎক্ষনিকভাবে আপনার
পোস্টের স্ক্রীনশর্ট রেখে দিতে পারে অথবা ডাউনলোড, কপিপেস্ট করে রাখতে পারে। এতে
করে আপনার জীবনে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ কথাটির সাথে আমরা অনেকেই
পরিচিত। অথবা ‘সুখে
থাকলে ভূতে কিলায়’ এটাও নিশ্চয় অপরিচিত নয়। কথাটি অনেকের বেলায় সত্য হয়ে যায়। তবে একটা কথা বিশ্বাস
করেন,আর নাই করেন ফেসবুকের বিষয় বিশ্বাস করতেই হবে। আর বিশ্বাস না করলে যদি
ফস্কে যান তাহলে ফান্দে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে বৈকি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন