রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

পরীক্ষায় দুর্নীতি ও আমাদের করণীয়


“Honesty is the best policy” এই নীতি বাক্যটি বর্তমানে কাগজে কলমেই শোভা পাচ্ছে। বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই। কেননা বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে বসবাস করে সৎ থাকা যায় না। কারণ আমাদের এই দেশে সচিবালয় থেকে শুরু করে রান্না ঘর পর্যন্ত কোন না কোনভাবে দুর্নীতির ভেড়াজালে আবদ্ধ। যার কারণে বাংলাদেশ চার বার দুনীর্তিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এ থেকেই বুঝা যায় দুর্নীতি বাংলাদেশকে কিভাবে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেন আজ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে? এর প্রধান কারণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি। তার মধ্যে পরীক্ষায় দুর্নীতি একটি অন্যতম মাধ্যম।
মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য। কিন্তু সেই শিক্ষায় যদি দুর্নীতি প্রবেশ করে তাহলে কিভাবে তারা মানুষ হবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য এখন আর প্রকৃত মানুষ হওয়া নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে চাকুরী পাওয়া। এখন ছাত্ররা আর শিক্ষা চায় না। চায় শুধুমাত্র একটি সার্টিফিকেট। কারণ সার্টিফিকেট ছাড়া যে চাকুরি করা যায় না। যে কোন মূল্যে তাদের সার্টিফিকেট দরকার। এই সার্টিফিকেট অর্জন করার জন্য তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে নকলের জন্য শিক্ষার্থী বহিস্কার, পরিদর্শক বহিস্কার ইত্যাদি খবর। এই দুর্নীতির জন্য শুধু ছাত্র-ছাত্রীই দায়ী নয়, দায়ী অভিভাবক, ছাত্র, শিক্ষক সকলেই। তাদের উদ্দেশ্য থাকে যে কোন মূল্যে তাদের সন্তানদেরকে একটি ডিগ্রী অর্জন করানো। কেননা এই ডিগ্রী যে, রাজদরবার থেকে শুরু করে বিয়ের আসর পর্যন্ত দরকার পড়ে। আর কোন রকম একটা সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারলে যত খারাপ ছাত্রই হোক না কেন মামা, খালুর বদৌলতে অথবা ঘুষ নামক দুর্নীতির মাধ্যমে চাকুরি পেয়ে যায়। এই জন্য শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট অর্জন করার জন্য যেকোন পথ অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করে না। যেমনিভাবে দ্বিধাবোধ করে না তাদের অভিভাবকরাও। যে অভিভাবক পরীক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চ কণ্ঠে কথা বলে, তারাই তাদের সন্তান যখন দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তখন চুপ থাকে। আবার তারাই রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নকল সরবরাহ করে থাকে। এ দৃশ্য প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ে।
এই দুর্নীতিকে চিরতরে আমাদের সমাজ থেকে উৎখাত করতে হবে। তা না হলে জাতি পঙ্গু হয়ে যাবে। একটি জাতির মেরুদণ্ড হচ্ছে শিক্ষা। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। তাই আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সেই শিক্ষায় যদি দুর্নীতি থাকে তাহলে সে জাতি উঁচু হয়ে দাঁড়াবে কিভাবে?
তাই নকলকে একেবারে বন্ধ করার জন্য সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাত্রদেরকে সারা বছর পড়াশুনায় ব্যস্ত রেখে অসুভ ছাত্র রাজনীতি ও সন্ত্রাসের কালো হাত থেকে মুক্ত করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার প্রতি যাতে সকল ছাত্র-ছাত্রী মনোযোগী হয় সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সিলেবাস শেষ করতে হবে। আর শুধু সরকার একা এ ভয়াবহ দুর্নীতি সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারবে না। এ দুর্নীতি বন্ধের জন্য সরকারের পাশাপাশি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সকলেই সচেতন হতে হবে।
পরিশেষে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলব, পরীক্ষায় নকল করে পাশ করা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা যে পাশ করে সেতো নিজের ক্ষতি করেই, আবার যারা পড়াশুনা করে তাদের মনোবলও নষ্ট করে। এ অবস্থা থেকে যদি তোমরা ফিরে না আস তাহলে এ জাতি অচিরেই মেধাশুন্য হয়ে পড়বে। তখন দেশের ধ্বংস অনিবার্য। একজন ছাত্র হিসেবে তোমাদের উচিত হবে সততাকে মূলধন করেই এগিয়ে যাওয়া। তোমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পরীক্ষায় পাশ করা শুধু ডিগ্রী অর্জনের জন্য নয়, মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য এবং দেশের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য। তোমরা যদি সচেতন হও তাহলেই দুর্নীতি নামক ক্যান্সার থেকে এ জাতি রেহাই পাবে। অন্যথায় এ জাতি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে।


প্রকাশকাল: ২১ আগস্ট ২০১৬ইং

কোন মন্তব্য নেই: