সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর ও পানাম নগর

গরুর গাড়ির মূর্তির সামনে লেখক ও তাঁর মেয়ে আফরিন সুলতানা আনিকা
সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘরে আগে তিনবার গিয়েছি কিন্তু মাত্র ০.৫ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত পানাম নগরে একবারও যাওয়া হয়নি। আমি সর্বপ্রথম সোনারগাঁ গিয়েছিলাম ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে। তখন আমার সফর সঙ্গী ছিলো সহপাঠি আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা। দ্বিতীয়বার গিয়েছিলাম ২০ আগস্ট ২০০৪ সালে। তখন আমার সফর সঙ্গী ছিলো তরুণ কবি রাকিব হাসান রুবেল, সাইফুল ইসলাম (মামুন) ও মহিদুল ইসলাম শাহ আলম। তখন ঐহিত্যবাহী পানাম নগর সর্ম্পকে আমার কিছুই জানা ছিলো না। তাই পানাম নগর যাওয়ার কথা চিন্তায় আসেনি। তৃতীয়বার গিয়েছিলাম ২০ নভেম্বর ২০১৫ সালে। তখন আমার সফর সঙ্গী ছিলো তরুণ কবি আমির আসহাব ও তার তিনজন বন্ধু। তখন পানাম নগর সর্ম্পকে যথেষ্ট ধারনা থাকা সত্ত্বেও সময়ের অভাবে যেতে পারিনি। ঐদিন এক সাথে দুই জায়গায় ভ্রমণ সূচি ছিলো। প্রথমে বাংলার তাজমহল ও পরে সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘরে যাওয়ায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই ঐদিন আর পানাম নগর যাওয়া হয়নি। আক্ষেপ নিয়েই বাড়ি ফিরে আসলাম। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিলাম পরে যখন যাব অবশ্যই পানাম নগর ঘুরে আসব।
পরিবারকে নিয়ে ভ্রমণে যাওয়া হয়নি অনেকদিন যাবত। তাই হঠাৎ করে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ খ্রি: রোজ শুক্রবার সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর ও পানাম নগর ভ্রমণে যাব। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে প্রস্তাব দিতেই রাজি হয়ে গেল। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই সবাই কাপড়-ছোপড় পড়ে প্রস্তুত হয়ে নিলাম। দুপুরের খাবার ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সঙ্গে নিলাম। সকাল ৯:০০ টায় বাসা থেকে বের হলাম। নরসিংদীর ভেলানগর বাসস্ট্যান্ড হতে কাঁচপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ভুলতা (গাউছিয়া) এসে বিশাল জ্যামে আটকা পড়লাম। প্রায় দুই ঘন্টা জ্যামে আটকা পড়ে অবশেষে ১২:০০ টায় কাঁচপুর পৌঁছলাম। কাঁচপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে বাসে করে সোনারগাঁ মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড আসলাম। সেখান থেকে রিক্সা করে প্রথমে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘরে আসলাম।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো বেশি। তাছাড়া শীত শেষে বসন্ত কাল হওয়ায় স্কুল কলেজের বনভোজন পার্টি ছিলো অনেক। প্রচ- ভিড় ঠেলে ১:০০ টার সময় ৪০ টাকা দিয়ে দুটো টিকেট কাটলাম। তারপর আমরা লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এলাকায় প্রবেশ করলাম। প্রধান ফটক পার হয়ে প্রবেশের পথেই দেখতে পেলাম হাতের বামপাশে এক সান বাধাঁনো পুকুর। এর ডান পাশে সানবাঁধানো ঘাটলার দুপাশে আছে ঘোড়ায় সওয়াররত মানুষের দুটি মূর্তি। তাই এখানে আমরা একে একে ছবি তুললাম।
সান বাঁধানো পুকুর পাড়ে লেখকের মেয়ে আফরিন সুলতানা আনিকা
আবহমান গ্রাম বাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। পরে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকান্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন এই জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুরাতন সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। যা ঈসা খাঁর জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। পুকুরের সামনেই সেই বাড়িটি দেখতে পেলাম। এই বাড়িটির নির্মাণ শৈলী অত্যন্ত চমৎকার কারুকার্যে গড়া। সম্প্রতি এই জাদুঘরটি সংস্কার করা হচ্ছে কিন্তু এখনও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়নি।
ঈসা খাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে সোজা সামনে অবস্থিত হস্তশিল্প জাদুঘর। রাস্তার চারপাশে ফুলগাছসহ বিভিন্ন গাছের দৃশ্য প্রবেশের মূহুর্তে মনকে আনন্দিত করে তুললো। ক্ষণিকের আনন্দে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে আমরা হারিয়ে গেলাম কিছুক্ষণের জন্য। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের সামনে আছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ির মূর্তি। সোনারগাঁ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ মূলত এই গরুর গাড়ির মূর্তি। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে না এমন পর্যটক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এখানে ছবি তুললাম।
ফাউন্ডেশন এলাকার বিশাল এরিয়া। পায়ে হেঁটে ঘুরা বিরক্তকর হলেও আনন্দের মনে হলো। এতক্ষণে আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম হস্তশিল্প জাদুঘরে। জাদুঘরের ভেতর ঢুকতেই নজরকারা হস্তের কারুকাজ গুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রাচীন কালের মানুষ এত সৌখিন ছিল তা ভাবতেই অবাক লাগে। এটি ১৯৯৬ সালে স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি গ্যালারী আছে। এর নিচ তলায় রয়েছে কাঠ খোঁদাই করা বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহ্যের আকর্ষণীয় দ্রব্যাদী। যা দেখে আমাদের মন জুড়ে যায়। নিচ তলা দেখার পর দ্বিতীয় তলায় গেলাম। সেখানেও সুন্দর সুন্দর জিনিস পত্র দেখে মন ভরে গেল। এখানে রয়েছে জামদানী ও নকশী কাথার গ্যালারী। তারপর তিন তলায় গেলাম। এখানে প্রবেশ পথে লেখা আছে ছবি তোলা নিষেধ। কিন্তু এ নিষেধ কেউ মানছে না। সবাই যার যার মতো করে ছবি তুলছে আর কর্তৃপক্ষও কোন বাঁধা দিচ্ছে না।
লেকের পাড়ে পুলের কাছে লেখকের মেয়ে আফরিন সুলতানা আনিকা
পুরো পার্কের বৃত্তের মধ্যে একটি লেক অবস্থিত। লেকের পূর্ব পার্শ্বে সারি সারি গাছে বেষ্টিত এক মনোরম দৃশ্য দেখতেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে পারবে যে কেউ ছোট ছোট নৌকা যোগে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো নৌকা। ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়। আরো রয়েছে মেলা প্রদর্শনী, নাগরদোলায় চড়া, শিশুদের ঘোড়ায় চড়া। লেকের এ পাশ থেকে ঐ পাশে যাওয়ার জন্য আছে বাঁশের সাকু। আমরা সাকুতে ছবি তুললাম। লেকের পাশে একটি গাছের নিচে বসে আমরা দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। বাঁশের সাকু পার হয়ে লেকের অপর প্রান্তে চলে আসলাম। সারি সারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে যখন হাঁটছিলাম তখন মনে হয়েছে এ যেন এক স্বপ্নীল জগতে চলে এলাম। একে একে আমরা এখানের সবকিছুই দেখতে লাগলাম। এখানে আছে প্রাচীন আমলের গোলপাতার ঘর। আছে বেতের তৈরি ও বাঁশের তৈরির বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র। আমি এখান থেকে আনিকার জন্য একটা ক্যাপ ক্রয় করি। স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার জন্য অনেক ভ্রমণকারীকে দেখলাম হস্তশিল্পের পণ্যগুলো কিনতে। আমাদের সাথে আরো শত শত নারী-পুরুষ, শিশু দল বেঁধে হাঁটছে। এসব দৃশ্য দেখতে খুব চমৎকার লাগছে।
এখানে রয়েছে অসংখ্য পিকনিক স্পট। ফাউন্ডেশনের প্রবেশ পথের সামনেই আগত পর্যটকদের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াসে আম, লিচু, পাম, নারিকেল, মেহগনি ও গুবাকতরুর সারির শ্যামল, স্নিগ্ধ হৃদয় জুড়ানো নিরিবিলি পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে ঐতিহ্য নামের বিনোদন স্পট। এ স্পট স্বস্তিকর ও আনন্দদায়ক বিনোদনে দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করবে। স্পট ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে। এছাড়া আশে পাশে আরো অসংখ্য পিকনিক স্পট রয়েছে।
পানাম নগরের প্রবেশ পথে এই নগরের ইতিহাস লেখা ভাস্কর্য
বিকাল ৩:০০ টার সময় লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এলাকা ত্যাগ করে আমরা রিক্সা যোগে চলে এলাম পানাম নগর। এখানে ৩০ টাকা দিয়ে দুটো টিকেট কিনে প্রবেশ করলাম। প্রবেশ পথেই দেখতে পেলাম প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁর একাংশ পানাম নগর। এখানেই ছিল মসলিনের মূল বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানে রয়েছে অপূর্ব ও নিপুণ কারুকাজখচিত প্রাচীন সব ইমারত। সরু রাস্তার দুই পাশে অট্টালিকা, সরাইখানা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুর ঘর, গোসলখানা, কূপ, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাঁকশাল, দরবার কক্ষ, গুপ্তপথ, প্রশস্ত দেয়াল, প্রমোদালয় জানান দেয় এ নগরের প্রাচীন সমৃদ্ধির কথা।
প্রবেশ পথে হাতের ডান পাশে প্রথম বিল্ডিংটির দুতলায় উঠেই ভয়ে কাপতে লাগলাম। না জানি রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটে কিনা। জীবনের ঝুকি নিয়ে এখানে এসে দর্শনার্থীরা দুতলায় উঠছে, নামছে ও ছবি তুলছে। আমরাও এখানে বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম। হাঁটতে হাঁটতে পানাম নগরের সবগুলো ইমারতই ঘুরে দেখলাম। দুঃখের বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটিতে নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটকরা জীবন ও সম্পদের ঝুকি নিয়ে ঘুরতে আসে এই ঐতিহাসিক স্থানটিতে। পানাম নগর শত শত বছরের পুরনো যেন এক নির্বাসিত শহর। যে শহরে নেই কোলাহল, নেই কোন হট্টগোল। সন্ধ্যার পর পানাম নগরকে একটি ভূতুড়ে জায়গা বলেই মনে হবে। বেশিরভাগ স্থাপনাগুলো এখন শুধু ধ্বংসের পথে। নগরের পুরনো ভবনগুলোর ইট, সুরকি ধসে পড়ছে। ভবনের দখল নিয়েছে শেওলা ও আগাছা।
পরিত্যাক্ত ভবন যাতে দখল নিয়েছে শেওলা ও আগাছা
পানাম নগর বাংলার বার ভূইঁয়াদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত একটি স্থান। এটি পৃথিবীর ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক শহরের মধ্যে একটি। ডড়ৎষফ গড়হঁসবহঃ ঋঁহফ ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংস প্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। হাজার বছরের প্রাচীন নগর সুবর্ণ গ্রাম ছিল পূর্ব বাংলার অন্যতম রাজধানী ও নদী বন্দর। এই সূবর্ণ গ্রামেই তের শতকের স্থানীয় হিন্দু রাজা দনুজমাধব দশরথদেব তাঁর শাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গ অঞ্চল মুসলিম শাসনে আসার পর থেকে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁ ছিল স্বাধীন সুলতানী বাংলার অন্যতম রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র।
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার, সোনারগাঁতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই প্রাচীন শহর। ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে ধনাঢ্য হিন্দু বণিকদের দ্বারা পানাম নগরের গোড়া পত্তন ঘটে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিকভাবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম নগর ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে। জানা যায় ১৪০০ শতাব্দীতে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে পৃথিবীর নামি-দামি শিক্ষকরা পড়াতে আসতেন। এখানে একটি ভৃত্য বাজার ছিল বলে জানা যায়। এখনো ওখানে দেখা মিলবে ১৫০০-১৪০০ শতাব্দীর নিপূণ কারুকার্য। মোটা মোটা দেওয়ালে তৈরি দালান। যার অধিকাংশই প্রায় ভঙ্গুর। এখনো মুঘল সম্রাজ্যের কিছু বাড়ি, উপাসনালয়, সেতু ইত্যাদি অবশিষ্ট আছে। ঔপনিবেশিক সময়কালে ও এই এলাকার বাণিজ্যিক, আবাসিক, ধর্মীয় কেন্দ্রিক স্থাপত্য কর্ম নির্মিত হয়েছে। 
ভাঙ্গা ভবনের ভেতরে লেখকের মেয়ে আফরিন সুলতানা আনিকা
পূর্ব দক্ষিণে বিস্তৃত প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রশস্ত একটি সড়কের দুই পাশে সুরম্য মোট ৫২টি ভবন নিয়ে পানাম নগর গড়ে উঠেছে। ভবনগুলি অধিকাংশ আয়তকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত। ভবনগুলোর উচ্চতা একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত। স্থাপ্যশৈলীতে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সাথে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া নির্মাণ শৈলীতে স্থানীয় কারিগরদের শিল্প কুশলতার প্রয়োগও ঘটেছে। বিভিন্ন পরিমাপের ইটের সঙ্গে চুন সুরকীর আস্তর দিয়ে নির্মিত ভবনসমূহে ব্যবহার হয়েছে মোজাইক, রঙিন কাঁচ, চিনিটিকরী, ছাদে কাটের বীমবর্গা। চমৎকার স্টাকো অলঙ্করণে সমৃদ্ধ ভবনসমূহের দুই পাশে পরিবেষ্টিত পরিখা, ঘাটসহ পুকুর ও অনেকগুলো কূপ রয়েছে। ভবনসমূহের মধ্যে প্রাপ্ত লিপি অনুযায়ী কাশীনাথ ভবন ১৩০৫ বঙ্গাব্দে নির্মিত যা নীহারিকা ভবন এর নামকরণ পাওয়া যায়। পানাম নগরীর পাশ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে বড় সর্দার বাড়ি, ছোট সর্দার বাড়ি, পানাম সেতু, গোয়ালদী মসজিদ, মঠ, পোদ্দার বাড়ি টাকশাল, গিয়াস উদ্দিন আজম সাহের সমাধী উল্লেখযোগ্য।
পানাম নগর ভ্রমণ করে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। এদিকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকাল ৫:০০ টা বেজে গেছে। তাই আর দেরি না করে সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ান হলাম। সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে বাসায় এসে পৌঁলাম।
পরিত্যাক্ত পুকুর
সোনারগাঁ যাদুঘর ও পানাম নগর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে বুধ ও বৃহস্পতিবার। শুক্র থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।
যেভাবে যাবেন:
প্রাইভেটকার, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল করে সরাসরি লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে যেতে পারবেন। আর যদি বাসে যেতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। যারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাবেন তারা কাঁচপুর নেমে পুনরায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এসে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা/অটোরিক্সাযোগে সোনারগাঁ জাদুঘরে যেতে হবে। এখান থেকে রিক্সা অথবা পায়ে হেটে যেতে পারেন পানাম নগর।

(তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট I সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তথ্য সংগ্রহ)

1 টি মন্তব্য:

আরিফ হোসেন বলেছেন...

ভ্রমণ নিয়ে লেখা পড়ে ভালো লাগল। ভাই, আমিও গিয়েছিলাম সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর