মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ধান্দাবাজ

সকাল ছয়টা বাজে। আলাল সাহেব সবেমাত্র ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় আসলেন। সোফায় বসে চা খাচ্ছেন এমন সময় ওনার মোবাইলে রিং বেজে উঠলো। ফোনটি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন, আমি গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার থেকে মুরাদ হাসান বলছি।
এত সকাল বেলা আলাল সাহেবের মোবাইলে কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করায় তিনি বিস্মিত হলেন। তা কি মনে করে এত সকাল বেলায় ফোন করছেন?
- স্যার আপনি এই সিমটি দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করছেন তাই না?
- হ্যাঁ।
- আপনার জন্য একটি সুখবর আছে।
- সুখবর! কি সুখবর?
- যারা দীর্ঘদিন যাবত গ্রামীণ কোম্পানির মোবাইল সিম ব্যবহার করছে তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কোম্পানি বিশজনকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করছেন। আপনি সেই সুভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যিনি পাঁচ লক্ষ টাকা লটারিতে জিতেছেন। অভিনন্দন আপনাকে!
আলাল সাহেব একজন বিচক্ষণ ও শিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি আগে থেকেই জানেন দেশে এখন ডিজিটাল ধান্দাবাজ বের হয়েছে। তারা মোবাইলে ফোন করে কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুরস্কারের প্রলোভন দেখায়। কথার মারপ্যাঁচে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিকাশের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তাই তিনি ধান্দাবাজ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশলগুলো জানার জন্য কথিত কর্মকর্তা মুরাদ হাসানের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনছেন।
- তাই নাকি!
- হ্যাঁ স্যার।
- তা কবে, কখন, কিভাবে এই টাকা পাব?
- এই টাকা পেতে হলে আপনাকে আমাদের কোম্পানির কিছু নিয়ম মানতে হবে।
- বলুন কি নিয়ম। যা বলবেন তাই শুনব। টাকার বড়ই অভাবে আছি। টাকার জন্য মেয়েটার বিয়ে দিতে পারছি না। আল্লাহ মনে হয় এতোদিনে আমার দিকে মুখ তুলে তাকাইছেন। সকাল বেলা সুসংবাদটা দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আলাল সাহেবের মুখে কথিত কর্মকর্তা মুরাদ হাসান এমন কথা শুনে মনে মনে বললেন, যাক এবার একজন মক্কেল পেয়েছি মনে হয় তার কাছ থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়া যাবে। তারপর তিনি কোম্পানির নিয়মগুলো বলতে লাগলেন।
- এই কথা এই মুহূর্তে কাউকে বলবেন না। এমনকি আপনার স্ত্রীর কাছেও না।
- ঠিক আছে বলব না।
- এই টাকা আপনাকে অনলাইমের মাধ্যমে ব্যাংকে দেয়া হবে। এই জন্য কোম্পানির কিছু খরচ হবে। আমি আপনাকে একটি বিকাশ নাম্বার দিব। সেই খরচের টাকাটা আপনি এক ঘন্টার মধ্যে পাঠাতে হবে। টাকা পাঠিয়েই আমাকে এই নাম্বারে কল করে নিশ্চিত করবেন এবং আপনার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দিবেন। কিছুক্ষণ পর আপনার ব্যালেন্স চেক করলেই দেখতে পারবেন আপনার একাউন্টে টাকা জমা হয়ে গেছে। বুঝতে পারছেন স্যার?
- হ্যাঁ বুঝতে পারছি। কিন্তু কত টাকা দিতে হবে?
- মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
- আমার যে একটা সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা?
- ঐ যে বললেন, পাঁচ হাজার টাকা আপনার নাম্বারে বিকাশ করতে হবে সেটাতো দিতে পারব না।
- কেন পারবেন না। পাঁচ লক্ষ টাকার জন্য পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে পারবেন না? দেখুন আপনি পুরস্কার না নিলে অন্যজনকে দিয়ে দেওয়া হবে। আপনি পুরস্কার নিবেন কিনা সেটা বলুন। পুরস্কার না নিলে আপনার সাথে আর কোন কথা বলব না। সুযোগ বার বার আসে না। এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না স্যার।
- আমিতো পুরস্কার নেয়ার জন্য রাজি আছি।
- তাহলে আপনাকে এই টাকাটা খরচ করতেই হবে।
- পাঁচ লক্ষ টাকার জন্য পাঁচ হাজার টাকা খরচ করাটা কোন ব্যাপার না কিন্তু এ মুহূর্তে আমার কাছে এত টাকা নেই। আপনিতো আমার সর্ম্পকে জানেন না। আমি একজন সাধারণ কেরানী। অল্প বেতনে চাকরি করে কোন রকমে সংসার চালায়।
- আপনার সর্ম্পকে জানার আমার কোন প্রয়োজন নেই। কোম্পানি আপনাকে ফোন দিতে বলছে আমি ফোন দিয়েছি। আপনি টাকা না নিলে আমি লাইন কেটে দিব।
- না ভাই লাইন কাটবেন না। আমার একটা পরামর্শ শুনুন।
- জি বলুন।
- আমি এ মুহূর্তে বিকাশে আপনাকে টাকা দিতে পারছি না। আবার পুরস্কারের লোভও সামলাতে পারছি না। আমার টাকাটার বিশেষ প্রয়োজন। টাকাটা পেলে আমার বড়ই উপকার হবে।
- কিন্তু খরচ না দিলেতো কোম্পানি আপনাকে টাকা দিবে না।
- আপনি এক কাজ করুন।
- কি কাজ?
- আপনার পকেট থেকে কোম্পানিকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আপনি তুলে নেন। তারপর সেই টাকাটা আপনি আমার বাসায় এসে দিয়ে যান। আমি আপনাকে আমার বাসার ঠিকানা দিচ্ছি। এই জন্য আপনাকে আমি পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বকশিশ দিব। তাছাড়া বাসায় আসলে আপনি আমার বউয়ের হাতের রান্না করা খাবারও খেয়ে যেতে পারবেন।
আলাল সাহেবের এমন প্রস্তাবে কথিত কর্মকর্তা মুরাদ হাসান বিস্মিত হয়ে বললেন, আপনিতো আমার চেয়েও বড় ধান্দাবাজ! এতক্ষণ যা কথা বললাম তাই লস। বলেই ফোন লাইনটি কেটে দিলেন।


তারিখ: ০৭/০২/২০১৭ইং

কোন মন্তব্য নেই: