রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩

রাজনৈতিক খেলা আর কত দিন চলবে


স্বাধীনতার আজ ৪২ বছর পার করছি। এই ৪২ বছরে আমরা কি পেয়েছি। রাজনীতিবিদরা আমাদেরকে কি উপহার দিতে পেরেছে। এই ৪২ বছরে আমরা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে যা পেলাম তা হলো শুধু প্রতিহিংসার রাজনীতি। কিভাবে এক দল অন্য দলকে ঘায়েল করে ক্ষমতায় ঠিকে থাকা যায় সে রাজনীতি। এই প্রতিহিসংসার রাজনীতির কারণে আজ দেশ হুমকির মুখে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল দুর্নীতি ও সুষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা কি পেয়েছি। এক কথায় বলতে গেলে কিছুই পায়নি।
কারণ স্বাধীনতার পর যে দলই ক্ষমতায় থেকেছে তারাই দুর্নীতির করেছে। দুর্নীতিতে আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হয়েছে। যা জাতির জন্য এক লজ্জানক অবস্থা। স্বাধীনতা পর ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য এক দল অন্য দলকে প্রতিহিংসামূলকভাবে ধবংস করতে চেয়েছে। পুলিশ বাহিনী দিয়ে পিঠিয়ে, বিভিন্ন মামলা দিয়ে, গুম, হত্যা করে চেষ্টা করেছে বিরোধীদলকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে। আবার বিরোধীদল কোন ইস্যু না থাকলেও হরতাল, অবরোধ দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি মারামারি, দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সন্ত্রাসের রাজত্য কায়েম হতে।
স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে স্বপরিবারে জীবন দিতে হয়। তার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে। তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার পর জেনারেল হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ স্বৈরাচারী কায়দায় দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তাকে ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য সকল দল ঐক্যবদ্ধভাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করে। এর ফলে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। তার পর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আসে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিও ক্ষমতাকে আকঁড়ে ধরার জন্য ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছে। অপরদিকে বিরোধীদল ও বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার তত্ত্ববধায় সরকারের দাবীতে হরতালের পর হরতাল দিয়ে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছে। অবশেষে তত্ত্ববধায় সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে আবার বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেখলাম বিরোধীদলের বড় বড় নেতাকে রাজনৈতিক হত্যার শিকার হতে। দেখেছি বিরোধীদলের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হতে। আবার ২০০৬ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান কে হবে তা নিয়ে বাধে দুই দলের মধ্যে বিরোধ। এই বিরোধের জের ধরে চলে হরতালের পর হরতাল। পরে আওয়ামীলীগ নির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে দেশে জরুরী অবস্থা চালু হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১/১১ সৃষ্টি হয়। তত্ত্ববধায়ক সরকারের নামে সেনা সমর্থিত সরকার দীর্ঘ দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী ক্ষমতায় আসে। এখন তারা একই কায়দায় বিরোধীদলকে নিচিহ্ন করার জন্য বিভিন্ন কলা কৌশল করছে। আর বিরোধীদল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিভিন্ন কলা কৌশল করছে। যারা একসময় তত্ত্ববধায়কের দাবীতে হরতাল অবরোধ করেছে তারাই আজ আবার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তত্ত্ববধায় সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এর ফলশ্রুতিতে বিরোধীদল আবার হরতাল অবরোধ করছে। মানুষ মরছে। সরকার ৪২ বছর পূর্বের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করছে। এতে জাতি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিচারকে কেন্দ্র করে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। একদিকে শাহবাগে তরুণ প্রজন্ম মানবতা বিরোধীদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির তাদের মুক্তির দাবীতে আন্দোলন করছে। আর প্রধান বিরোধীদল তত্ত্ববধায় ইস্যুতে আন্দোলন করছে। ইসলামী দলগুলো নাস্তিক মুরতারদদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করছে। চতুর্মুখী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছে দেশ। যার ফলশ্রুতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে উক্ত দলগুলো। কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলছে না। এই যে রাজনৈতিক হানাহানি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। এর দায় দায়িত্ব কে নিবে? সামনে কি হয় জানি না। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আমরা দর্শক হয়ে রাজনৈতিক খেলা দেখছি। এক দল জয়ী হচ্ছে আর একদল হারছে। আর কত দিন এভাবে খেলা দেখতে হবে। এর উত্তর আমার জানা নেই।
একদল বলছে আমরা স্বাধীনতার পক্ষে, অন্যদেরকে স্বাধীনতার বিপক্ষদল ও রাজাকার বলে গালী দিচ্ছে। একদল বলছে আমরা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী, অন্যরা ধর্মনিরপেক্ষবাদে বিশ্বাসী, তারা ইসলাম বিরোধী। এক দল বলছে আমরা স্বাধীনতার ঘোষক। অন্য দল বলছে না তারা নয় আমরা স্বাধীনতার ঘোষক। এই দ্বন্ধ আজ দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চলে আসছে। এ দ্বন্ধ চলছে, চলতে থাকবে। এর সমাধান অদৌ হবে কিনা জানি না। এর থেকে উত্তরণের কোন উপায় আমাদের জানা নেই।
সম্প্রতি দুই জোটের কাদাছুড়াছুড়িতে আমরা যারা রাজনীতি বুঝি না বা সাধারণ মানুষ তারা আজ অতিষ্ঠ। তাদের খেলা দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা তাদের খেলার বলি হয়ে প্রাণ দিচ্ছি। তাই আমি সকল দলের প্রতি বলছি আপনারা একটু সহনশীল হোন। আমাদেরকে মুক্তি দিন। দেশ আপনার আমার সকলের। আমরা সকলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই। আমরা মারামারি, দাঙ্গা, হাঙ্গামা দেখতে চাই না।

রচনাকালঃ ১০ মার্চ ২০১৩ খ্রি:
                                                  

কোন মন্তব্য নেই: