
কতটুকু হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটলে, কি পরিমাণ আঘাত পেলে একজন মানুষের মুখ দিয়ে লাশ অথবা হাড্ডি চাওয়ার আকুতি জানাতে পারে। জানি না তাদের এই প্রতীক্ষার প্রহর আর কতদিন গুনতে হবে? অদৌ কি পাবে তারা তাদের প্রিয়জনের লাশ বা কঙ্কাল? অনেকের ধারণা এখনও হাজার খানেক লোক নিখোঁজ। যে সব স্বজনরা এখনও তাদের প্রিয়জনদের জীবিত বা লাশ পায়নি তাদের দাবি যারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে তারাতো কোথাও যায়নি। এই রানা প্লাজার নিচেই চাপা পড়ে আছে। কতদিন লাগবে এই ধ্বংসস্তূপ সরাতে? এখন তারা জীবিত উদ্ধার হওয়ার আশা করে না। যতই দিন যাচ্ছে ততই লাশ পঁচে গলে যাচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সাভারে আকাশে বাতাসে। সেই পঁচে গলে যাওয়া লাশ বা লাশের কঙ্কালটুকু নিয়েও যেন তারা বাড়ি ফিরতে পারে এই আকুতি করছে তারা সরকারের কাছে।
দীর্ঘ দশদিন যাবত নিখোঁজদের হাজার হাজার স্বজনরা ধ্বংসস্তূপের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে ছুটছেন হাসপাতাল থেকে মর্গে, মর্গ থেকে হাসপাতালে। অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে ধ্বংসস্তূপের পাশে। অনেকেই রাত কাটাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের আশপাশে। প্রিয় স্বজনের খোঁজে নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউকেউ ঢুকে পড়ছেন নিরাপত্তার চৌহদ্দির ভেতরে। নিখোঁজদের না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছেন। এতদিনে অনেকের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। নাওয়া খাওয়া নিঘুর্ম রাত কাটিয়ে অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। নিখোঁজদের সন্ধানে পোস্টারে ভরে গেছে পুরো সাভার এলাকা। অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, হাসপাতালের ফটক ও ধ্বংসস্তূপের আশপাশে সাঁটানো হয়েছে প্রচুর পোস্টার।
আমরা সরকারে কাছে দাবি করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে হবে। স্বজনের অপেক্ষার প্রহর যেন আর দীর্ঘ না হয়। তাদের আকুতি অনুযায়ী যেন যেভাবে সম্ভব তাদের প্রিয়জনদের লাশগুলো আত্মীয়স্বজনদের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে। কোন লাশ যেন গুম না হয়। প্রকৃত লাশের হিসাব ও নিখোঁজ লাশের হিসাব গণমাধ্যমকে জানাতে হবে। বিরোধীদল ইতোমধ্যে বলছে অনেক লাশ গুম হয়ে যাচ্ছে। এ কথা যেন সত্যি না হয়। আমরা একথাও পত্রিকায় পাচ্ছি টাকার লোভে এক শ্রেণীর দালাল চক্র লাশ দেওয়ার নাম করে অন্যের লাশ নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা খুবই দু:খজনক ও বেদনাদায়ক। এ ঘটনা পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সরকারকে নজর রাখতে হবে। আমরা চাই না এ ঘটনার প্রেক্ষিতে লাশ নিয়ে কোন বাণিজ্য হোক। আমরা চাই না কোন লাশ গুম হয়ে যাক। আমরা চাই প্রতিটি স্বজন তার প্রিয়জনের লাশ ফিরে পাক।
পরিশেষে বলব, এই হৃদয় বিদারক ঘটনা যাতে আর বাংলাদেশে না ঘটে তার জন্য দোষীদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এসব অপরাধীরা যেন বেড়িয়ে আসতে না পারে আমাদের সকলকে নজর রাখতে হবে।
রচনাকালঃ ৩ মে ২০১৩ খ্রি:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন