ইংরেজি নববর্ষ যতটা জাঁকজমক ভাবে আমরা পালন করি কিন্তু বাংলা নববর্ষ ততটা জাকজমক ভাবে পালন করি না। তবে আমাদের দেশে বর্তমানে বাংলা নববর্ষের জাঁকজমকতা কিছুটা বেড়ে চলছে। দেখতে দেখতে ১৪১০ সালটি অনেক হাসি কান্নার মধ্যে দিয়ে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল। আর শুভ আগমন ঘটলো ১৪১১ সালের। আমাদের দেশে নতুন বছরের শুরুতে বিভিন্ন জায়গায় বসে বৈশাখী মেলা। রমনার বটমূলে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বাংলা একাডেমী, শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থানে মেলা বসে। ব্যবসায়ীরা খুলে শুভ হালখাতা। বাড়িতে বাড়িতে চলে বিশেষ খাবারের আয়োজন। প্রচলিত আছে এ দিন ভাল খাবার খেলে সারা বছর ভাল খাওয়া যায়। যা একটি কু-সংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। অনেকে আবার বৈশাখের সকালে পান্তা ভাত খায়। চৈত্রের ৩০ তারিখ রাতে রেধে বৈশাখের প্রথম দিন সকালে খাওয়াটা বাঙালীর ঐতিহ্য বলে দাবি করে। এক বছরের ভাত অন্য বছরে খেয়ে তারা তৃপ্তি পায়। আরো অনেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা এ ঐতিহ্যবাহী দিনটি অতিবাহিত করি। এ যেন ঈদের আনন্দের চেয়েও কম নয়। এখানে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশ গ্রহণ করে। বর্তমানে বাংলা সন আমাদের জাতীয় জীবনে যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমরা যে এত আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদ্যাপন করি, কিন্তু এ দিনটি বা বাংলা সন আমাদের মাঝে কিভাবে এলো তা কি আমরা জানি? অনেকে হয়তো জানেন আবার অনেকে জানেন না। যারা জানেন না তাদের উদেশ্যে আমার এ লেখা।
১৫৫৬ সালের বাদশা আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী হিজরী সনকে সৌর সনে পরিবর্তন করে বাংলা সনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সেই থেকে বাংলা সনের সূচনা। ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের শাসনামলে ভারত বর্ষে ভারত সন, লক্ষণ সন, শকাব্দ সন, বিক্রম সন, জালালী সন, সেকান্দর সন, গুপ্তাব্দ সন প্রচলিত ছিল। তখন এগুলো চন্দ্র রীতিতে গণনা করা হতো। যার ফলে সৌর বছরের সাথে এসব সালের গোলমাল হয়ে যেত প্রতি বছর। চন্দ্র উদয়ের সাথে হিসেব করে চন্দ্র সনের মাস গণনা করা হয়ে থাকে। প্রতি চন্দ্র মাসের ২৯/৩০ দিনে চাঁদ উদয় হলে নতুন মাস শুরু হত। এভাবে প্রতি বছর অন্তর অন্তর চন্দ্রবর্ষে একমাস অতিরিক্ত যোগ করে সৌর বর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া হতো। আর এই অতিরিক্ত মাসটিকে জ্যোতিষিরা বলতো ‘মিল মাস’। এই অদ্ভুত হিসেবের ফলে প্রজা সাধারণ অসুবিধায় পড়তো। তখন এ অসুবিধা দূর করার জন্যই আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে বাংলা বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র মাস সৌর মাসে রূপান্তরিত করেন। আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী কর্তৃক বাংলা সন প্রবর্তনের ফলে বাংলা সনের তারিখ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ আরো অনেক মনীষী, পন্ডিতের প্রচেষ্টায় এ ফল হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৮ সালে তা সরকারিভাবে কার্যকর করে। আর বর্তমানে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদির তারিখ নির্ধারণে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা সন ও তারিখ ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রকাশকাল: বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০০৪ইং
১৫৫৬ সালের বাদশা আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী হিজরী সনকে সৌর সনে পরিবর্তন করে বাংলা সনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সেই থেকে বাংলা সনের সূচনা। ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের শাসনামলে ভারত বর্ষে ভারত সন, লক্ষণ সন, শকাব্দ সন, বিক্রম সন, জালালী সন, সেকান্দর সন, গুপ্তাব্দ সন প্রচলিত ছিল। তখন এগুলো চন্দ্র রীতিতে গণনা করা হতো। যার ফলে সৌর বছরের সাথে এসব সালের গোলমাল হয়ে যেত প্রতি বছর। চন্দ্র উদয়ের সাথে হিসেব করে চন্দ্র সনের মাস গণনা করা হয়ে থাকে। প্রতি চন্দ্র মাসের ২৯/৩০ দিনে চাঁদ উদয় হলে নতুন মাস শুরু হত। এভাবে প্রতি বছর অন্তর অন্তর চন্দ্রবর্ষে একমাস অতিরিক্ত যোগ করে সৌর বর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া হতো। আর এই অতিরিক্ত মাসটিকে জ্যোতিষিরা বলতো ‘মিল মাস’। এই অদ্ভুত হিসেবের ফলে প্রজা সাধারণ অসুবিধায় পড়তো। তখন এ অসুবিধা দূর করার জন্যই আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে বাংলা বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র মাস সৌর মাসে রূপান্তরিত করেন। আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী কর্তৃক বাংলা সন প্রবর্তনের ফলে বাংলা সনের তারিখ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তখন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ আরো অনেক মনীষী, পন্ডিতের প্রচেষ্টায় এ ফল হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৮ সালে তা সরকারিভাবে কার্যকর করে। আর বর্তমানে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদির তারিখ নির্ধারণে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা সন ও তারিখ ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রকাশকাল: বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০০৪ইং
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন