আজ
আর্ন্তজাতিক মে দিবস বা শ্রমিক দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বের
সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন সভা সেমিনা, র্যালির আয়োজন করেছে। কিন্তু এ দিবসকে
সামনে রেখে আমরা কি পেলাম। আমাদের দেশের শ্রমিকরা আজও কি তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে
পেয়েছে। যে অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৩৬ সালে সর্বপ্রথম শ্রমিক আন্দোলন আর্ন্তজাতিকতা লাভ
করে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস এ একজন শ্রমিককে তার সহকর্মী শ্র্রমিকদের সমস্যা
আলোচনার জন্যে সভা করার অপরাধে গ্রেফতার করে শাস্তি
দেয়া হয়। ১৮৩৬ সালে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন লন্ডনের ওয়াকিব মেনস এসোসিয়েশনের নেতা উইলিয়াম লোভেট। ১৯৪৭ সালের কাল মার্কস, এঙ্গেল প্রমুখ মনীষীরা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেন। যার বাক্য ছিল ‘দুনিয়ার মজলুম এক হও।’ ১৮৬০ সালে ইতালী, জার্মানী ও রাশিয়াতে কিছু কিছু রাজনৈতিক সংস্কারমূলক কর্মকান্ড শুরু হয়। তখন ইউরোপ ও আমেরিকার শ্রমিকরাও সমাজের মধ্যে এর প্রতিফলন ঘটান। ১৯৬৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রধান দেশসমূহের শ্রমিক নেতারা লন্ডনের সেন্টমার্টিন হলে মিলিত হন। এটি তখন ফ্রান্স, জার্মানী, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালী, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও আমেরিকা প্রভৃতি দেশে এ সংঘের বিস্তৃতি ঘটে। ১৮৭০ সালে প্যারিসে শ্রমিক শ্রেণীর বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। হাজার হাজার শ্রমিকের আত্মহুতির মধ্য দিয়ে মাত্র ৭২ দিনের ক্ষমতার মেয়াদ পরিসমাপ্তি ঘটে। অতপর ১৯৭৬ সালে প্রথম আর্ন্তজাতিক কংগ্রেস (TUC) ও ১৮৮০ সালে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার (AFL) এর শ্রমিক সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। এত কিছুর পরও শ্রমিকরা ধনতান্ত্রিক পুঁজিপতির হাত থেকে রেহায় পায়নি। পুঁজিপতিরা শ্রমিকদেরকে শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। আর এদিকে শ্রমিকরা হতে থাকে নি:স্ব। তাই সুযোগ বঞ্চিত শোষিত শ্রমিকরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে দাবি আদায়ের জন্যে মিছিল ধর্মঘটে শামিল হতে বাধ্য হন। এই ধনতান্ত্রিক পুঁজিপতিরা শ্রমিকদেরকে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮/২০ ঘন্টা কাজ করিয়ে নিত। বিনিময়ে দিতনা কিছুই। পুঁজিপতিদের এই অমানুষিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে শ্রমিক শ্রেণী ঐক্যবদ্ধ হয়।
দেয়া হয়। ১৮৩৬ সালে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন লন্ডনের ওয়াকিব মেনস এসোসিয়েশনের নেতা উইলিয়াম লোভেট। ১৯৪৭ সালের কাল মার্কস, এঙ্গেল প্রমুখ মনীষীরা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেন। যার বাক্য ছিল ‘দুনিয়ার মজলুম এক হও।’ ১৮৬০ সালে ইতালী, জার্মানী ও রাশিয়াতে কিছু কিছু রাজনৈতিক সংস্কারমূলক কর্মকান্ড শুরু হয়। তখন ইউরোপ ও আমেরিকার শ্রমিকরাও সমাজের মধ্যে এর প্রতিফলন ঘটান। ১৯৬৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রধান দেশসমূহের শ্রমিক নেতারা লন্ডনের সেন্টমার্টিন হলে মিলিত হন। এটি তখন ফ্রান্স, জার্মানী, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালী, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও আমেরিকা প্রভৃতি দেশে এ সংঘের বিস্তৃতি ঘটে। ১৮৭০ সালে প্যারিসে শ্রমিক শ্রেণীর বুর্জোয়া শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। হাজার হাজার শ্রমিকের আত্মহুতির মধ্য দিয়ে মাত্র ৭২ দিনের ক্ষমতার মেয়াদ পরিসমাপ্তি ঘটে। অতপর ১৯৭৬ সালে প্রথম আর্ন্তজাতিক কংগ্রেস (TUC) ও ১৮৮০ সালে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার (AFL) এর শ্রমিক সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। এত কিছুর পরও শ্রমিকরা ধনতান্ত্রিক পুঁজিপতির হাত থেকে রেহায় পায়নি। পুঁজিপতিরা শ্রমিকদেরকে শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। আর এদিকে শ্রমিকরা হতে থাকে নি:স্ব। তাই সুযোগ বঞ্চিত শোষিত শ্রমিকরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে দাবি আদায়ের জন্যে মিছিল ধর্মঘটে শামিল হতে বাধ্য হন। এই ধনতান্ত্রিক পুঁজিপতিরা শ্রমিকদেরকে দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮/২০ ঘন্টা কাজ করিয়ে নিত। বিনিময়ে দিতনা কিছুই। পুঁজিপতিদের এই অমানুষিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে শ্রমিক শ্রেণী ঐক্যবদ্ধ হয়।
১৮৮৬
সালের ১ মে দিনটি ছিল শনিবার। আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে
লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। ২ মে রবিবার সরকারি ছুটির
দিন শ্রমিক নেতা এলাবার্ট আর পার্মনম সিন্নামিন্নাটি গিয়ে বক্তৃতা করে। শ্রমিকদের এই
ঐক্যবদ্ধতাকে শোষক শ্রেণী সুনজরে দেখতে পারেনি। তাই তারা ৩ মে ম্যককীমক রিপার কারখানার
ধর্মঘটরত শ্রমিকদের সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। উক্ত গুলিবর্ষণের ফলে নিহত হন আমেরিকার
শিকাগো শহরের অগাস্ট, স্পাইম, পারসন্স, এন্সেল ও ফিশারন। আহত হন অনেক শ্রমিক। ৮ মে
এ গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে শিকাগোর ‘হে মার্কেট স্কোয়ারে’ লাখো মানুষের এক বিরাট সমাবেশ
হয়। এই সমাবেশেও বিস্ফোরিত হয় এক বোমা। নিহত হয় জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের উপর
আক্রমণের অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের উপর শুরু করল বেপরোয়া গুলিবর্ষণ। কিন্তু
নির্যাতিত শ্রমিকরা পড়ে পড়ে মার খেয়ে এখন ভয়াল মূর্তি ধারণ করে। এ সংঘর্ষে ৪ জন শ্রমিক
ও ৭ জন পুলিশ নিহত হয়। সারা হে মার্কেট রক্তে লাল হয়ে গেল। সেই রক্তাক্ত ঘটনার পর থেকে
শোষক শ্রেণীরা শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। কারাগারে প্রেরণ করল অনেক
শ্রমিক। চললো বিচারের নামে প্রহসন। ১৮৮৬ সালে ২১ জুন শিকাগোতে বিচার কার্য শুরু হয়।
আসামীরা হল আগস্ট, স্পাইজ, জর্জ এঞ্জেল, এডলফ ফিশার, মাইকেল স্কোয়ার, সাম দিল ডেন,
লুই লিফগ ও অস্কার নীবে প্রমুখ। ১৮৮৬ সালে ৯ অক্টোবর বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়। জনমতকে
উপেক্ষা করে ৪ জন শ্রমিক নেতাকে ঐ রায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। আর ৩ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন
কারাদ-। এই বিচারকে অমান্য করে শ্রমিকরা আবার আন্দোলনে ফেঁটে পড়ে। সারাদেশে প্রতিবাদের
ঝড় উঠে। কিন্তু শোষকরা কিছুতেই তাদের প্রতিবাদে কান দেয়নি। অবশেষে তারা বিশ্ব জনমতকে
উপেক্ষা করে ১৮৮৭ সালের ১২ নভেম্বর শ্রমিক নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে। কিন্তু
এত কিছু করার পরও শোষকরা শ্রমিক আন্দোলনের গতিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে
বিভিন্ন দেশের শ্রমিক নেতারা মিলিত হন। তারপর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে
আর্ন্তজাতিক শ্রমসংস্থা (ILO) গঠিত হয়। ১৮৮৯ সালে গৃহিত হয় হে মার্কেটের নিহত শ্রমিকদের
স্মরণে ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হবে। পরে ১৮৯০ সালে
আমেরিকা ইউরোপের শ্রমিকরা গ্রেট বিটেনের হাইডপার্কে সমবেত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের সভায়
প্রথম বারের মত মে দিবস পালন করে। পরবর্তীতে এশিয়া, আফ্রিকা, চীন, জার্মানী ও আমেরিকার
বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে মে দিবসের সূচনা হয় ১৯২৩ সালে মাদ্রাজে।
বর্তমানে
বাংলাদেশেও মে দিবস পালন করা হয়। এভাবে সারা বিশ্বের মেহনতী শ্রমিক শ্রেণীর সৌভ্রাতৃত্বের
প্রতীক হিসেবে মে দিবস প্রতি বছর জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের
জন্যে রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি করার পর আজও এই নিরহ শ্রমিকরা শোষকদের হাত থেকে রেহায়
পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শ্রমিকরাও। ১২৮ বছর
যাবত এসব নিরীহ শ্রমিকরা স্বপ্ন দেখে আসছে। আজও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। আজ বাংলাদেশর
শ্রমিকদের দিকে তাকালে দেখতে পাই মালিক শ্রেণী কিভাবে তাদেরকে শোষণ করছে। মালিক শ্রেণীর
শোষনের ফলে অসহায়ের মতো শ্রমিকদেরকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এইতো মাত্র এক বছর পূর্বে ২০১৩
সনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সাভারে রানা প্লাজায় শ্রমিকদের উপর স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসে
প্রায় বার শতাধিক নিরহ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু জাতিকে শোকাহত করে। এ ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র
মালিক শ্রেণীর গাফলতির কারণে। এর পূর্বে ২৪ নভেম্বর ২০১২-তে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস
লিমিটেডের গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লেগে ১১১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যায়। এর আগে ২০১০
সালে হামিম গামেন্টসসহ তিনটি গামেন্টেস এ অনেক শ্রমিকের প্রাণ চলে যায়। এভাবে দিনের
পর দিন শুধু মাত্র শ্রমিকরা এসব বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আর মালিক শ্রেণীরা
এ থেকে রেহায় পেয়ে যাচ্ছে। যদি সরকারীভাবে প্রতিটি দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে সঠিক তদন্ত
করে সুষ্ঠু বিচার করা হতো তাহলে এতো দুর্ঘটনা ঘটতো না।
আজকের
এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন পাচ্ছে না। যেখানে শ্রমিক আন্দোলন
হয়েছিল ৮ ঘন্টা কর্ম দিবসের জন্য। যেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টগুলোতে এখনও ৮ ঘন্টার
পরিবর্তে ১২ ঘন্টা কাজ করানো হচ্ছে। বিনিময়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র। যা দিয়ে একজন
মানুষ চলাফেরা করা কষ্টকর। আজকে শ্রমিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। মৃত্যুর ঝুকি মাথায় নিয়ে
তারা পেটের দায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
পরিশেষে
বলবো, আজ থেকে ১২৮ বছর পূর্বের অর্থাৎ ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটে যে রক্তের
ফোয়ারার মাধ্যমে শ্রমিক দিবসের সূচনা হয়েছিল, সেই মহা শ্রমিক দিবসের শিক্ষা নিয়ে আমরা
যদি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে থাকি তাহলে কেউ আর আমাদেরকে শোষণ করতে পারবে না। আর
এখনই উপযুক্ত সময় মালিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া। যাতে মালিকরা আর শ্রমিকদেরকে
ব্যবহার করে কোন অঘটন ঘটাতে না পারে।
রচনাকালঃ ৩০ এপ্রিল ২০১৪ খ্রি:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন