১৯৯৩ সালের ১০ মে
আমার বাবা বিদেশ যায়। সেই সময় বাংলাদেশে কোন মোবাইল ছিলনা যে ইচ্ছে করলেই বাবার
সাথে যখন তখন কথা বলতে পারবো। তখন যোগাযোগের
একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। বাবার বিদেশ যাওয়ার আঠার দিন পর আমাদের কাছে একটি চিঠি আসে। বাবা ঠিক মত গিয়েছে কিনা সেই খবরটি
জানার জন্য একটি চিঠির অপেক্ষায় আমরা পুরো পরিবার আঠার দিন অপেক্ষায় ছিলাম। বিদেশ
যাওয়ার ১ সাপ্তাহ পর থেকেই প্রতিদিন আমি পোস্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতাম আমাদের কোন
চিঠি আসছে কিনা। পোস্ট অফিসে প্রতিদিন দুপুর ১২:০০ টায়
আমাদের আশ পাশের যত এলাকা আছে সব এলাকার মানুষ ভিড় করত। কারণ তখন প্রতিদিন এই সময়ে পিয়ন সকল চিঠির প্রাপকের নাম ধরে ডাকত। প্রাপক সেখানে উপস্থিত থাকলে চিঠি দিয়ে দিত। উপস্থিত না থাকলে পরদিন আবার নতুন চিঠির সাথে পুরানো প্রাপকের নাম ধরে ডাকত। এভাবে পর পর তিনদিন ডাকার পরও প্রাপককে না পেলে পিয়ন ঠিকানামত বাড়িতে আসত। আর বাড়িতে আসলে পিয়নকে বকশিস দিতে হতো। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে প্রাবাসী আছে তাদের বাড়ীতে পিয়ন আসলে আশে পাশের বাড়ির সব লোক এসে ভিড় করত। ১৮তম দিনে আমি পোস্ট অফিসে গিয়ে বাবার সেই চিঠিটি হাতে নিলাম। একটি চিঠি একটি খবর। সেই খবরটি জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেলাম। দ্রুত বাড়িতে আসলাম। চিঠি খুলে দেখি দুটো চিঠি লেখা। একটি মায়ের কাছে ও একটি আমার কাছে। মায়ের চিঠিটি মাকে পড়ে শুনালাম। বাবা ঠিকমত পৌঁছেছে এ খবর জানতে পেরে মা নামায পড়ে শুকরিয়া আদায় করলেন। বাবা আমার কাছে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিল সেটি ছিল-
আমাদের আশ পাশের যত এলাকা আছে সব এলাকার মানুষ ভিড় করত। কারণ তখন প্রতিদিন এই সময়ে পিয়ন সকল চিঠির প্রাপকের নাম ধরে ডাকত। প্রাপক সেখানে উপস্থিত থাকলে চিঠি দিয়ে দিত। উপস্থিত না থাকলে পরদিন আবার নতুন চিঠির সাথে পুরানো প্রাপকের নাম ধরে ডাকত। এভাবে পর পর তিনদিন ডাকার পরও প্রাপককে না পেলে পিয়ন ঠিকানামত বাড়িতে আসত। আর বাড়িতে আসলে পিয়নকে বকশিস দিতে হতো। বিশেষ করে যাদের বাড়িতে প্রাবাসী আছে তাদের বাড়ীতে পিয়ন আসলে আশে পাশের বাড়ির সব লোক এসে ভিড় করত। ১৮তম দিনে আমি পোস্ট অফিসে গিয়ে বাবার সেই চিঠিটি হাতে নিলাম। একটি চিঠি একটি খবর। সেই খবরটি জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেলাম। দ্রুত বাড়িতে আসলাম। চিঠি খুলে দেখি দুটো চিঠি লেখা। একটি মায়ের কাছে ও একটি আমার কাছে। মায়ের চিঠিটি মাকে পড়ে শুনালাম। বাবা ঠিকমত পৌঁছেছে এ খবর জানতে পেরে মা নামায পড়ে শুকরিয়া আদায় করলেন। বাবা আমার কাছে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিল সেটি ছিল-
স্নেহের আমির হোসেন
সর্ব প্রথমে আমার হাজার
হাজার সালাম ও দোয়া নিও। আশা করি আল্লাহর রহমতে তোমার শরীর ভাল। আমি তোমাদের দোয়ার
বরকতে এক প্রকার ভাল আছি।
পরসংবাদ এই যে, বাবা আমির হোসেন আমি ১০ মে বিকাল ৫টায় ঠিকমত ওমান এসে পৌঁছেছি।
চাকরী এখনও পাইনি। দোয়া করিও
যাতে সুস্থ্য শরীর নিয়ে কাজ করতে পারি। সেদিন অনেক কষ্ট হয়েছে তোমাদেরকে ছেড়ে
আসতে। কিন্তু কি করব বাবা অভাবের তাড়নায় তোমাদের সুখের জন্য হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে
তোমাদের চোখের আড়ালে চলে আসলাম। আমার জন্য কোন চিন্তা করিও না। আব্বার জন্য নামায পড়ে দোয়া করিও। আমাদের
আর অভাব থাকবে না। ঠিকমত লেখাপড়া করিও। জীবনে বড় হতে হলে লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই।
ছোট ভাইবোনদেরকে আদর করিও। মায়ের কথামত চলিও। তোমার মাকে আমার সালাম দিও। দাদা-দাদীকে
আমার সালাম দিও। তোমার ভাইবোনদেরকে আমার স্নেহ দিও। আমার চিঠির উত্তর দিও। এই বলে এখানেই শেষ করলাম। খোদা হাফেজ।
ইতি তোমার বাবা
ওমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন