শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ

যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়ে তাদের কাছে ধর্ষণ শব্দটা বেশি পরিচিত। বর্তমানে পত্রিকা হাতে নিলে দেখা যায় এমন কোন দিন বাদ নেই যে, ধর্ষণের খবর আসে না। পত্রিকার খবর ছাড়াও দেশের আনাচে কানাচে কত নারী যে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। আগে ধর্ষণ হতো গোপনে আর এখন ধর্ষণ হয় প্রকাশ্যে খোলা মাঠে, চলন্ত বাসের মধ্যে। যেখানে একজন নারীকে হাত পা বেঁধে
দল বেধে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হচ্ছে। যাকে গণধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ কারীরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত  হয়নি, ধর্ষণের পর খুন করা হয় ধর্ষিতাকে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব করেও ধর্ষকরা শান্তি পাচ্ছে না। তারা এখন ধর্ষণের দৃশ্যকে ভিডিও করে ব্লু-ফিল্ম বানিয়ে ব্যবসা করছে। ইন্টানেটে ও ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। যা জাহেলিয়াতের যুগকে হার মানাচ্ছে।
বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের ৯০% মানুষ মুসলমান। অথচ এ দেশেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের সেঞ্চুরী হয়। তারপরও ধর্ষক বুক ফুলিয়ে রাস্তা ঘাটে হাঁটে। অথচ এ দেশের সরকার পারেনি তার বিচার করতে। এ যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে কিভাবে আমাদের মা বোনরা রাস্তা ঘাঠে চলাফেরা করবে? এ দেশের একজন নাগরিক হয়ে লজ্জায় রাস্তায় বের হতে ইচ্ছে করে না। যে দেশের সরকার ও প্রধান বিরোধী দলসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের অবস্থান সে দেশের নারী সরকার পারেনি ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে। তাহলে কিভাবে এ দেশের অসহায় নারীরা ধর্ষণের হাত থেকে রেহায় পাবে।
আজ তিন বছরের শিশু কন্যা হতে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অথচ কেন হচ্ছে অহরহ ধর্ষণ? তার মূল কারণ কি তা আমরা খুজে দেখছি? ধর্ষণের নেশায় কিছু মানুষরুপী নরপশুরা এসব নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর। মানুষ এক সময় পুলিশকে সম্মান করতো কিন্তু এখন আর তাদেরকে সম্মান করে না। কারণ তারাও ধর্ষণ নামক অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু এ ধর্ষণ তো আর সব পুলিশরা করেনি। গুটি কয়েক দুষ্ট পুলিশের কারণে আজ সমস্ত পুলিশ প্রশাসন অপরাধী। যতই দিন যাচ্ছে ততই ধর্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগ্নতা, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, ব্লু-ফিল্ম, অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ পত্র পত্রিকা, চলচ্চিত্রে ধর্ষণের দৃশ্য উপস্থাপন, ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আজ যুব সমাজের মধ্যে দিন দিন ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও অভিভাবকরা ছেলেদের বিয়ের ব্যবস্থা না করা। যে পুরুষের সেক্স বেশী তারা লজ্জায় পিতা-মাতার কাছে বলতে পারে না তাদের বিয়ের কথা। তখন তারা যৌবনকে দমিয়ে রাখতে না পেরে যৌন উম্মাদনায় জ্ঞানশুন্য হয়ে ঘুরতে থাকে নারীর আশায়। আর তখন বৈধ পথে কোন নারীকে না পেলে অবৈধ্য পথে পা বাড়ায় এসব পুরুষরা। আর অভিভাবকরা যথাসময়ে ছেলেদের বিয়ে না করানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে বেকার সমস্যা। আর এ বেকার সমস্যা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধর্ষণ। উপরোক্ত কারণগুলো সনাক্ত করে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে আশা করি ধর্ষণ প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।

রচনাকালঃ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রি:

কোন মন্তব্য নেই: