এক
মা, মা তুমি কোথায়? ভাত দাওতো। এই কথা বলতে বলতে আদর খাবার রুমে ঢুকল।
আদরের মা চড়া গলায় বলল, কি হয়েছে? এত চিল্লাছিস কেন? নবাবজাদা সারাদিনতো টইটই করে ঘুরে বেড়াস আর ঘুম থেকে উঠস দিনের বারটায়। ঘুম থেকে উঠেই খাবারের জন্য চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিস। বলি ভাত কোথা থেকে আসে? আর কত বেকার থাকবি? একটু কাজ কর্ম করে খাসনা।
মা, প্রতিদিন তোমার একই কথা আর ভাল লাগে না।
ভাল লাগবে কেন? পরের কামাই খাসতো। তাই বুঝবি না। নিজে কামাই করে খেলে বুঝবি।
এখন ভাত দিবে কিনা বল?
না দিব না। রোজ তোর গোলামী আর করতে পারব না।
ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। বলেই খাবার রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় আদরের বাবা রুমে প্রবেশ করল। দুইজনকেই উদ্দেশ্য করে বলল, কি হয়েছে? এত চেঁচামেচি কেন?
স্ত্রী মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, কি আর হবে তোমার গুনধর ছেলের সেবা আমি আর করতে পারবো না।
কেন করতে পারবে না। আমার দুটো নয় তিনটা নয় একটা মাত্র ছেলে।
এক ছেলেইতো তিন ছেলের সাধ মিটিয়ে দিচ্ছে?
যেমন
এভাবে আর কতদিন তোমার ছেলে বেকার ঘুরবে?
যতদিন চাকুরী না হয়।
মাস্টার্স পাস করেছে তিন বছর হয়। এখনও একটি চাকরী যোগাড় করতে পারে না। আর কবে চাকুরী হবে।
হবে এত ধৈর্য হারা হচ্ছ কেন?
তুমিইতো আশকারা দিয়ে ছেলেকে মাথায় তুলেছ? তা না হলে কবেই চাকুরী পেয়ে যেত। আমারতো সন্দেহ হয় সে মাস্টার্স পাস করেছে কিনা। তা না হলে সে চাকুরী পাচ্ছে না কেন?
এ কথা বলাতে আদরের গায়ে লাগল। কি বললে মা, ছিঃ মা তুমি এমন কথা বলতে পারলে? আমাকে তুমি সন্দেহ করো। আরে তুমিতো মেট্টিক ফেল, তাই ছেলেকে নিয়ে এই ধরনের বাজে চিন্তা তোমার মাথায় আসে।
কি বললি, আমি মেট্টিক ফেল!
আদরের বাবা বলল, এই থামবে তোমরা। আদরের গায়ে হাত দিয়ে বলল, খেয়ে এসো। তোর সাথে কথা আছে।
না বাবা আমি খাব না। দু’চোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলে যাব। আর তোমাদের বোঝা হয়ে থাকব না।
কে বলছে তুই আমাদের বোঝা?
তাই নয় কি? প্রতিদিন মা আমাকে যেভাবে অপমান করে। এভাবে অপমান সহ্য করে আর বাড়ীতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই কথা বলেই আদর ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
দুই
আদরের বাবা আব্দুল লতিফ প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত। মা ফরিদা পারভীন একজন পাকা গৃহিনী। আদর তাদের একমাত্র ছেলে। আব্দুল লতিফ আদরকে খুব ভালোবাসেন। তাই তার নাম রাখছেন আদর। আদরের জন্মের পাঁচ বছর পর তার একটা ছোট বোন হয়েছিল। সে শৈশবেই মারা গেছে। পরে আব্দুল লতিফ অনেক অনুরোধ করলেও ফরিদা পারভীন আর কোন সন্তান নিতে রাজি হননি। তাই একমাত্র আদরকে নিয়েই তাদের ছোট সংসার। এতদিন আব্দুল লতিফ সরকারী চাকুরী করে যা বেতন পেয়েছেন তা দিয়ে কোন রকমে দিন যাপন করেছেন এবং ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। এখন পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চলে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল ফরিদা পারভীনের। বর্তমানে আদরের বয়স ২৭ বছর চলে। স্বপ্ন ছিল মার্স্টাস পাস করে চাকুরী করে সংসারের স্বচ্ছলতা আনবে। ভালো পরিবার দেখে তাকে বিয়ে করিয়ে লাল টুকটুকে একটি বউ আনবে কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন মাটি হয়ে যাচ্ছে। এখনও বুড়ো বয়সে ফরিদা পারভীনকে রান্না করে খেতে হয়। তাইতো ছেলেকে আর এখন সহ্য করতে পারছেন না তিনি।
এদিকে বাবা আব্দুল লতিফ নরম মেজাজের মানুষ। ছেলেকে তেমন শাসন করেন না। তাই সে যেভাবে খুশী চলছে। তবে চাকুরীর জন্যে যে চাপ দিচ্ছেন না তাও নয়। মাঝে মাঝে ছেলেকে বলেন, বাবা এভাবে আর কতদিন। একটা কিছু কর।
কিন্তু ছেলের একটাই উত্তর। বাবা চাকুরী পেতে হলে মোটা অংকের ঘুষ লাগবে। পারবে ঘুষ দিতে?
এত টাকা কোথা থেকে দিব বাবা। আমি গরীব স্কুল মাস্টার। তাছাড়া এখন চাকুরীও নেই। পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চলে। আমার পক্ষে কি এত টাকা ঘুষ দেয়া সম্ভব।
তাহলে চাকুরী হবে না। এভাবেই চলতে হবে।
এই নিয়ে আদরের মা ফরিদা পারভীনের সাথে প্রতিদিনই কথা কাটাকাটি হয়। প্রতিদিন মায়ের অপমান সহ্য করতে করতে এ পর্যন্ত আসছে। তাই আজ আর মায়ের কথা সহ্য করতে পারল না। তাইতো অজানা উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
তিন
মায়ের সাথে রাগ করে আদর চলে আসল বন্ধু মনিরের বাসায়। পরদিন মনির তাকে একটি মেস ঠিক করে দিল। আদর মেসে উঠল। কিছুদিন পর একটি টিউশনী ঠিক করল। এইভাবে চলছে তার বেকার জীবন। পাশাপাশি চাকুরীর চেষ্টা করছে।
এদিকে তার প্রেমিকা কবিতাও তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। বেকার বলে তাকে প্রায়ই খোটা দেয়। কবিতার কথায় খুব কষ্ট লাগে আদরের। প্রায়ই তাদের মধ্যে বিয়ে প্রসঙ্গ এলেই কবিতা বলে, বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি? যে নিজেই অন্যের ঘাড়ে চড়ে খায় সে কিনা বিয়ে করবে! আগে চাকুরী নাও, তারপর বিয়ে।
আদর বলে, জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। তাতে মানুষের কোন হাত নেই। আমার ভাগ্য তোমার সাথে থাকলে তোমার সাথেই বিয়ে হবেই। অন্যথায় হবে না।
আদরের কথায় কবিতা রাগ করে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আদর কবিতাকে একটি থাপ্পর মারে। তারপর কবিতা রাগ করে বলল, তোমার মতো বেকারের সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই। যেদিন চাকুরী পাবে সেদিন আমার সাথে আসবে।
ঠিক আছে যাও। যেদিন চাকুরী পাব সেদিন তোমার কাছে আসব।
এদিকে কবিতার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু সেদিকে আদরের খেয়াল নেই। সে এখন চাকুরীর সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে কবিতার কথা মনে হলেই ভাবে কবিতাতো ঠিকই বলে বিয়ে করে কি খাওয়াব বউকে? সেক্সপিয়ার বলেছেন, অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। অভাবের কাছেতো ভালোবাসার কোন মূল্য নেই।
আদর ও কবিতা দু’জন দু’জনকে খুবই ভালোবাসে এতে কারো সন্দেহ নেই কিন্তু বেকারত্ব দু’জনকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কবিতা একটা জিনিস কখনো বুঝতে পারে না, আদর যখন কবিতার সামনে আসে তখন সে মুখের ভাবটা এমন করে আসার চেষ্টা করে যেন তাকে দেখলে মনে হয়, সে প্রচন্ড চিন্তার মধ্যে আছে কিন্তু আসলে তা না। কবিতা তা বুঝে। মাঝে মাঝে কবিতা ভেবে পায় না কি দেখে সে এই আদরের সাথে প্রেম করতে গিয়েছিলো। কবিতার বাবা প্রায়ই বাসায় পাত্র নিয়ে আসছেন যে কোন দিন বিয়ে দিয়ে দিতে পারেন! অথচ আদর এখন পর্যন্ত একটা চাকুরী জোগাড় করতে পারল না।
চার
আদর এখন প্রতিদিন সকাল বেলা পত্রিকা পড়ে। বিশেষ করে চাকুরীর নিয়োগগুলো বেশী পড়ে। আজ সকালে হঠাৎ তার নজরে পড়ল পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছোট ছোট অনেক গুলো বিজ্ঞাপন। এক জায়গায় লেখা পাত্র চাই বিজ্ঞাপনটি তার নজরে আসল।
শিক্ষিত, ভদ্র, পাত্র চাই। ছেলে পছন্দ হলে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। বেকার হলে চলবে। সরাসরি যোগাযোগ পাত্রীর বাবা-০১৭১০ .. .. ..।
আদর এ বিজ্ঞাপন দেখে ভাবছে, এইতো সুযোগ এক ঢিলে দুই পাখি মারার। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। তার মানে চাকুরী দিবে। বড় লোক বাবার মেয়েও বিয়ে দিবে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।
হাতের কাছে থাকা সেলফোনটা নিয়ে বিজ্ঞাপনের নম্বরে ফোন দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু এই মূহুর্তে মোবাইলে পর্যাপ্ত পরিমান ব্যালেন্স না থাকায় কল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাইতো আদরের এখন খুব রাগ হচ্ছে। নিজেই নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। তারপর পাশের দোকান থেকে দশটি টাকা রিচার্জ করে নিল। বেচারা দোকানদার দশ টাকা রিচার্জ করার জন্য আদরের কাছ থেকে বারো টাকা নিল।
বাসায় এসে আবার কল না দিয়ে মিসকল দিল। মিসকলের উত্তরে পাত্রীর বাবা ফোন দিল। আদর রিসিভ করে বলল, হ্যালো...। আসসালামু আলাইকুম।
অপর প্রান্ত থেকে পাত্রীর বাবা বশির আহমেদ বলল, ওয়ালাইকুম আসলাম। আপনি কে?
জি আঙ্কেল আমি আদর।
মিসকল দিচ্ছেন কেন?
না মানে আমি আজ পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দেখে মিসকল দিলাম।
তাতো বুঝলাম কিন্তু মিসকল কেন দিচ্ছেন? কল করতে পারেন না।
জি আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই।
ব্যালেন্স না থাকলে মিসকল আসে কিভাবে?
হ্যাঁ তাইতো। অল্প টাকা আছে।
ঠিক আছে বলেন কি বলবেন।
আপনি পাত্রীর কি হন।
বাবা
ও আচ্ছা।
কেমন আছেন?
জি ভাল। আপনি কেন ফোন করেছেন সেটা বলুন।
আমি পাত্র। আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
ভাল কথা। কিন্তু যার মোবাইলে ফোন দেওয়ার মতো টাকা থাকে না সে কিভাবে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?
জি আঙ্কেল। আপনিতো বিজ্ঞাপনে বেকার ছেলে খুঁজছেন। বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলছেন। আমি সেই বেকার ছেলে যার মোবাইলে কথার বলার মতো পর্যাপ্ত পরিমান টাকা পর্যন্ত থাকে না। আপনি কি এমন ছেলে চান না?
ও আচ্ছা। ঠিক আছে। তুমি বাসায় আস। আমার মেয়েকে দেখ। আমরাও তোমাকে দেখি। পছন্দ হলে অবশ্যই বিয়ে দিব এবং চাকুরীও দিব।
পাঁচ
আদর বেকার হলেও খুব স্মার্ট ছেলে। সব সময় সাজগোজ করে ভালো পোষাক করে থাকতে পছন্দ করে। কথাবার্তায়ও কোন অভদ্রতার চাপ নেই। সদা হাসোজ্জল। আজ পাত্রী দেখার উদ্দেশ্যে পাত্রীর বাড়িতে আসল। বাসায় এসে কলিং বেল টিপ দিতেই বশির আহমেদ দরজা খুললো। আদর ওনাকে দেখেই সালাম দিয়ে বলল, আঙ্কেল এটা কি বশির আহমেদ এর বাড়ী?
জি।
বশির আহমেদ আছেন?
আমিই বশির আহমেদ। আপনি কে?
আমি আদর। গতকাল আপনার সাথে পাত্রী দেখার ব্যাপারে কথা বলছিলাম।
ও আচ্ছা। আস বাবা। ভেতরে আস।
আদর ভেতরে প্রবেশ করল। ডাইনিং রুমে বসল। পাত্রীর মা রুখসানা আহমেদ আসলেন। বশির আহমেদ আদরকে পরিচয় করিয়ে দিল। ও হচ্ছে আদর। আমার মেয়ে তানিয়াকে দেখতে এসেছে।
রুখসানা আহমেদ বললেন, ও আচ্ছা। বস।
দেখ বাবা তোমার কে কে আছে?
আদর বলল, মা ও বাবা।
আর কে আছে?
আর কেউ নেই।
তার মানে তোমার কোন বোন বা ভাই নেই?
না।
তোমার বাবা কি করেন?
বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল মাস্টার।
বশির আহমেদ বললেন, তোমার পড়াশুনা কতটুকু?
জি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছি। চাকুরী খুঁজছি। এখনও চাকুরী পাইনি। ঘুষ ছাড়া চাকুরী নেয়া যাচ্ছে না। তাই চাকুরীও পাচ্ছি না।
রুখসানা আহমেদ বললেন, তোমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আমাদের মেয়ে যদি তোমাকে পছন্দ করে তাহলে তোমাকে চাকুরী নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
বশির অহমেদ বললেন, হ্যাঁ। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার কোন ছেলে নেই। আমার মৃত্যুর পর এই সহায় সম্পতির একমাত্র উত্তরাধিকারি হচ্ছে আমার মেয়ে তানিয়া। তাই মেয়ের জন্য এমন একজন ছেলে খুঁজছি যে নম্র, ভদ্র, বিনীয় ও শিক্ষিত হবে। আমার মনে হয় তুমিই সেই ছেলে। যাকে আমরা এতদিন খুঁজছি। কি বল?
জি অঙ্কেল। আদর মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানাল।
রুখসানা আহমেদ মেয়েকে ডাকলেন, তানিয়া... এই তানিয়া এই দিকে আয়। দেখতো কে আসছে।
তানিয়া পাশের রুম থেকে বলছে, জি মা আসছি।
তানিয়া ডাইনিং রুমে এসেই আদরকে দেখে মাথা নিচু করে ফেললো। মা ও কে?
ঐ যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম তোর জন্য পাত্র চেয়ে। তোকে সে দেখতে আসছে। দেখ ওর সাথে কথা বলে।
ও আচ্ছা বলেই তানিয়া সোফায় বসল। তানিয়াকে দেখে আদর হা করে তাকিয়ে রইল। এত সুন্দর মেয়ে সে আগে কখনও দেখেনি। দেখতে খুব সুন্দর। এই মেয়েকে হাত ছাড়া করা যাবে না।
রুখসানা আহমেদ বশির আহমেদকে বললেন, চল আমরা যাই। আর তানিয়া ও আদরকে বলল, তোমরা কথা বল আমরা আসছি।
বাবা মা চলে যাওয়ার পর তানিয়া আদরকে বললো, কি নাম আপনার?
আদর।
খুব সুন্দর নামতো। কে রাখছে?
বাবা। বাবা আমাকে খুব আদর করে। তাইতো আদর করে আমার নাম রাখছেন আদর।
তাই।
হ্যাঁ।
আমাকে কি পছন্দ হয়েছে?
আপনার মতো মেয়েকে পছন্দ না হয়ে পাড়ে।
আমার মাঝে কি আছে যে, প্রথম দেখায় আমাকে পছন্দ করে ফেললেন।
রূপ, যৌবন, ধনসম্পদ, শিক্ষা দীক্ষা সবই আছে।
আমার কিন্তু আপনাকে পছন্দ হয়নি?
এই কথা বলাতে আদরের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। তার বাবা মা আমাকে পছন্দ করল। অথচ সে পছন্দ না করলে আমার কাছে বিয়ে দিবে না। না তা হতে পারে না।
কি ভাবছেন?
না মানে।
বুঝেছি পছন্দ হয়নি বলে মনে কষ্ট পেয়েছেন। জোক করলাম। আসলে কি আপনাকে আমার অসম্ভব পছন্দ হয়েছে।
এবার আদর খুব খুশী হয়ে বলল, সত্যি বলছেন?
হ্যাঁ সত্যি। তবে আমাকে আপনি নয় তুমি করে বলবেন।
ঠিক আছে। তুমিও আমাকে তুমি করে বলবে।
ঠিক আছে।
তারপর দু’জন আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। পরে তানিয়া তার রুমে ফিরে গেল। এক সময় তানিয়ার মা রুখসানা আহমেদ ডাইনিং রুমে নাস্তা নিয়ে আসলেন। আদর নাস্তা খেল।
রুখসানা আহমেদ তানিয়ার রুমে গিয়ে বললেন, কি ছেলে পছন্দ হয়েছে?
হ্যাঁ মা। তোমরা কথাবার্তা বলতে পার।
ছেলেটা কিন্তু দারুন। গরীব হলেও তোর সাথে মানাবে ভাল।
হ্যাঁ।
বশির আহমেদ আদরকে বলল, তুমি আগামীকাল তোমার মা-বাবাকে নিয়ে আসবে। বিয়ের ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলব।
আদর বলল, আমাকে মাফ করবেন। আমি আমার বাবা মাকে নিয়ে আসতে পারব না। কারণ তারা আসবে না। আমি বাড়ী থেকে রাগ করে আসছি। চাকুরী না নিয়ে আর কোন দিন তাদের বাড়ীতে ফিরব না। আমাকে পছন্দ হলে দিনক্ষণ ঠিক করে বিয়ে দিন। আমি রাজী। তারপর তাদের সাথে দেখা করব।
ও আচ্ছা। ঠিক আছে।
রুখসানা আহমেদ আবার এখানে ফিরে এসে বললেন, ও বাবা একটা কথা বলতে ভুলে গেলাম। আগে বলে নেয়া ভাল। আমাদের যেহেতু ছেলে নেই তাই বিয়ের পর তোমাকে আমাদের এখানে থাকতে হবে। অর্থাৎ ঘরজামাই থাকতে হবে। কি রাজী?
পরে জানাচ্ছি বলে চলে আসল আদর।
ছয়
বাসায় এসে অনেক চিন্তা করল আদর। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সে। বাবা মাকে ছেড়ে ঘরজামাই থাকাটা কি শুভ হবে। কিন্তু এ ছাড়াতো এমন পাত্রী পাওয়ার কোন উপায়ও পাচ্ছে না। আগে বিয়ে করি তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে।
পরদিন আদর ফোন করে তার সম্মতির কথা জানিয়ে দিল বশির আহমেদকে। বশির আহমেদ দিনক্ষণ ঠিক করে তাদের বিয়ে দিয়ে দিল।
বউ নিয়ে আদর বাড়ী ফিরছে। প্রতিমধ্যে দেখা হল তার প্রেমিকা কবিতার সাথে। কবিতা বলল, কি ব্যাপার তোমার সাথে ও কে?
আদর মুচকি হেসে বলল, আমার স্ত্রী।
স্ত্রী!
হ্যাঁ। শুধু স্ত্রী নয়। ও আমার চাকুরী। ও আমার সম্পদ।
এসব কি বলছ তুমি?
তুমিতো বলেছিলে, যেদিন চাকুরী পাব সেদিন তোমার সাথে দেখা করতে।
এখন আমি চাকুরীও পেয়েছি, বউও পেয়েছি। তুমিতো বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে চাওনি। ও কিন্তু বেকার ছেলেকেই বিয়ে করেছে। আর ওর বদলতেই আমি চাকুরীও পেয়েছি। এবার খুশীতো। বলেছিলাম না জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর হাতে। তাতে মানুষের কোন হাত নেই।
এ কথা শুনার পর কবিতা আর ঠিক থাকতে পারল না। একি করলে তুমি আদর! এ কথা বলেই মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
রচনাকাল: ৩ মার্চ ২০১৫খ্রি:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন